ইব্রাহীম_আঃ_এর_দোয়া
[সুরা-বাকারা-আয়াত-১২৯, তফসীর]
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
"""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""""
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম,
----------------------------------------
"হে আমাদের প্রতিপালক !
তাদের কাছে তাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ কর,
যে তাদেরকে তোমার আয়াতগুলো পড়ে শুনাবে এবং তাদেরকে,
কিতাব ও হিকমত (জ্ঞান-বিজ্ঞান) শিক্ষা দিবে এবং তাদেরকে পবিত্র করবে।
নিশ্চয় তুমি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।"
________[সুরা-বাকারা, আয়াত-১২৯]______
~~~
আয়াতের তফসীর-
সর্বশেষ নবীর ব্যাপারে ইব্রাহীম (আঃ)-এর প্রার্থনা ‘হারাম’ এলাকাবাসীদের জন্য,
এটা আরো একটি দোয়া, যে তাঁর সন্তানদের মধ্য হতেই যেন একজন নবী তাদের মধ্যে আগমন করেন। এ প্রার্থনাও গৃহীত হয়।
মুসনাদ আহমাদে রয়েছে যে,
নবী করীম (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
"আমি তখন থেকেই শেষ নবী, যখন আদম (আঃ) মাটির আকারে ছিলেন।
আমি তোমাদেরকে আমার প্রাথমিক কথার সংবাদ দিচ্ছি।
আমি আমার পিতা ইব্রাহীম (আঃ)-এর প্রার্থনা, ঈসার (আঃ) সুসংবাদ এবং
আমার মায়ের স্বপ্ন।"
নবীগণের মায়েরা এরকমই স্বপ্ন দেখে থাকেন। (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদে আহমাদ ৪/১২৭, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ৮/২২৩)
আবূ উমামা (রাঃ) একবার,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করেনঃ
‘হে মহান আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ! আপনার নবুওয়াতের সূচনা কিরূপে হয়?’
তিঁনি বললেনঃ
"আমার পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রার্থনা,
আমার সম্বন্ধে ‘ঈসা (আঃ) এর সুসংবাদ দান। তিঁনি আরো বলেছেনঃ
আমার মা স্বপ্নে দেখেন যে,
তার মধ্য হতে যেন একটি আলো বেরিয়ে সিরিয়ার প্রাসাদগুলোকে আলোকিত করে দিলো এবং তা দৃষ্টিগোচর হতে থাকলো।"
(হাদীসটি সহীহ। সিলসিলাতুস সহীহা-১৫৪৫, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৬২, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ৮/২২২)
তাঁর মায়ের স্বপ্নের কথা পূর্ব হতেই ‘আরবে ছড়িয়ে ছিলো।
তারা বলতো যে, আমিনার গর্ভে কোন একজন মহান ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করবেন।
বনী ইসরাঈলের শেষ নবী
‘ঈসা রুহুল্লাহ (আঃ) বনী ইসরাঈলের মধ্যে খুতবা দেয়ার সময় পরিস্কারভাবে তাঁর নামও বলে দিয়েছেন।
তিঁনি বলেছিলেনঃ
"আমি তোমাদের নিকট মহান আল্লাহ্র রাসূল এবং
আমার পূর্ব হতে তোমাদের নিকট যে তাওরাত রয়েছে আমি এর সমর্থক এবং
আমার পর আহমাদ নামে যে রাসূল আসবেন আমি তাঁর সুসংবাদ দাতা।
(৬১ নং সূরা সাফফ, আয়াত নং ৬)
আর এজন্যই মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
"আমার পিতা ইব্রাহীম (আঃ) এর প্রার্থনা,
আমার সম্বন্ধে ‘ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) এর সুসংবাদ দান।"
বলা হয়ে থাকে যে,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গর্ভে থাকাবস্থায় স্বীয় মাতা আমিনা স্বপ্নটি দেখেছিলেন এবং
তাদের মাঝে তা ছড়িয়ে পড়ে ও প্রসিদ্ধতা লাভ করেছিলো।
স্বপ্নের মধ্যে নূর দ্বারা সিরিয়ার প্রাসাদগুলো আলোকোজ্জ্বল হওয়া ঐ কথার দিকে ইঙ্গিত করছে যে,
সেখানে দীন ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে।
বরং বিভিন্ন বর্ণনা দ্বারাও সাব্যস্ত হয়েছে যে, শেষ যামানায় সিরিয়া ইসলাম ও মুসলিমদের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হবে।
সিরিয়ার প্রসিদ্ধ শহর দামেশকেই ‘ঈসা (আঃ) ‘মিনারের’ ওপর অবতীর্ণ হবেন।
সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিম কিতাবদ্বয়ে বর্ণিত হয়েছে যে,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
"আমার উম্মাতের একটি দল সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
তাদের বিরুদ্ধবাদীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।
অবশেষে মহান আল্লাহ্র হুকুম এসে যাবে।" সহীহুল বুখারীতে ‘এটা সিরিয়ায় হবে’ এতোটুকু বেশি আছে।
(হাদীসটি সহীহ। সহীহুল বুখারী ৭৪৬০, ১/৭১, ৬/৩১১৬, ৬/৩৬৪১, ফাতহুল বারী ৬/৭৩১, সহীহ মুসলিম ২/১৫২৪, ৩/১৭৪/১৫২৪, মুসনাদ আহমাদে ৪/১০১, সুনান আবূ দাউদ ৪/৪২৫২, সুনান ইবনে মাজাহ ২/৩৯৫২)
‘কিতাব ওয়াল হিকমাহ’ এর অর্থ আবূ জা‘ফর আর রাযী, তিনি রাবী‘ ইবনে আনাস থেকে, তিনি আবুল ‘আলীয়া (রহঃ) থেকে বর্নিত
"হে আমাদের প্রতিপালক ! তাদের মাঝে একজন রাসূল তাদের মধ্য থেকেই প্রেরণ করুন।" আয়াতাংশের মধ্যেস্থিত ‘তাদের মাঝে’ দ্বারা উম্মাতে মুহাম্মাদী উদ্দেশ্য।
অতঃপর তাকে যেন বলা হলো তোমার দু‘আ কবূল করা হলো এবং তা শেষ যামানায় বাস্তবায়িত হবে।
সুদ্দী (রহঃ) এবং কাতাদাহ (রহঃ) ও এরূপই বলেছেন। অতঃপর মহান আল্লাহ বলেন,
"আর সে তাদেরকে কিতাব শিক্ষা দিবে"
অত্র আয়াতাংশের মধ্যে ‘কিতাব’ এর অর্থ হচ্ছে ‘কুর’আন’ এবং ‘হিকমাত’ এর ভাবার্থ হচ্ছে ‘সুন্নাহ।’
হাসান বাসরী (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ), মুকাতিল ইবনে হিব্বান (রহঃ) এবং আবূ মালিক (রহঃ)প্রমুখও এ কথাই বলেছেন।
(তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/৩৯০)
আবার কেউ কেউ ‘হিকমাত’ দ্বারা দ্বীনের সঠিক বুঝও উদ্দেশ্য নিয়েছেন।
"আর তাদেরকে পবিত্র করবে"
অর্থাৎ আনুগত্য ও আন্তরিকতা শিক্ষা দিবে, ভালো কাজ করবে,
মন্দ কাজ হতে বিরত রাখবে,
মহান আল্লাহ্র আনুগত্য স্বীকার করে তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করবে, অবাধ্যতা হতে বিরত রেখে তাঁর অসন্তুষ্টি হতে বেঁচে থাকা।
মহান আল্লাহ ‘আযীয’ অর্থাৎ যাঁকে কোন জিনিস অসামর্থ্য করতে পারে না, যিঁনি প্রত্যেক জিনিসের ওপর বিজয়ী।
তিঁনি ‘হাকিম’ অর্থাৎ তাঁর কোন কথা ও কাজ বিজ্ঞান এবং নৈপুণ্য হতে শূন্য নয়।
তিঁনি প্রত্যেক জিনিসকেই
তার আপন স্থানে জ্ঞান, ইনসাফ ও ইলমে'র সাথে রেখেছেন।
_________[তফসীর ইবনে কাসির]________
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন