অভিনয়ের প্রেমে। (রোমান্টিক গল্প)
আমাদের দুই বান্ধবীর পছন্দ ছিলো সেইম।কিন্তু জীবন সঙ্গী পছন্দ করার ব্যাপারে যে একজনকেই দুজন পছন্দ করে ফেলবো তা আমরা কোন দিনই কল্পনা করিনি।
যদিও আমাদের দুজনের মা'ই বলতেন,শেষে যেন এক ছেলেকেই দুই বান্ধবীর পছন্দ হয়ে যায় না।
তাদের কথাই একটা সময় সত্যি হয়ে দাঁড়ালো।
আমি আনবার,
ক্লাস সিক্স থেকে আফরা আমার বান্ধবী।দুজন দুজনকে ছাড়া কোন কিছুই বুঝতাম না আমরা।
ক্লাসে আফরা পড়া না শিখে আসলে আমিও পড়া না দিয়েই কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতাম।
আমি স্কুলে না আসলে ও নিজেও আসতোনা স্কুলে।
ক্লাস নাইনে উঠে দুজন মিলে একই বিষয় পছন্দ করি।
সবাই আমাকে বলেছিলো আনবার তুমি কমার্স নিয়ে পড়ো,কিন্তু আমি আর্টস নিয়ে পড়ি।
কারণ একটাই,ওই যে আমার প্রাণ প্রিয় বান্ধবী যে আর্টস নিবে।
দুজন এক সাথে কলেজেও এন্ট্রি নেই আমরা।
খুব ভালো সম্পর্ক চলছিলো আমাদের।
দুজন প্রতিটা অনুষ্ঠানে একই রকম জামা বানাতাম।
ঈদ বলো,কারো বিয়ে বলো,বৈশাখ বলো আর যাই বলো।
এমন কি বাসার ড্রেস বানালেও একই রকম বানাতাম।
আমাদের দুজনের পছন্দই মিলে যেতো।
তাই আর কারো কোন সমস্যা হতোনা।
আমার ছিলো কালো রঙ পছন্দ,ওরও তাই।
আমার প্রিয় ফল ছিলো ওরও প্রিয় ফুল।
দুজনেরি প্রিয় খাবার ছিলো ঝালমুড়ি।
এক সাথে দুজনই ইন্টার শেষ করলাম।
অনার্সে ভর্তি হলাম।
সব বান্ধবীরা আমাদের জিজ্ঞেস করতো কিরে তোদের বফ ও কি একজন নাকি?
আমরা উত্তর দিতাম বফই নেই।
আর প্রেম করলে জমজ ভাইয়ের সাথে করবো।
বিয়েও দুই ভাইকেই করবো।
যাতে এক বাড়ীতেই থাকতে পারি।
সবাই বলতো, যা তোরা যেন এক বাড়ীরই বউ হতে পারিস।দোয়া করে দিলাম।
আমরা যখন অনার্স লাস্ট ইয়ারে,ঠিক তখন একদিন একটা ছোট বাচ্চা ছেলে কোচিং ক্লাসের সামনে এসে আমাকে ডাকে,
আমি বেরুতেই আমার হাতে একটা চিঠি ধরিয়ে দিয়ে বলে,
আপনাকে ওই ভাইয়াটা দিয়েছে।
আমি তাড়াতাড়ি করে চিঠিটা নিয়ে ক্লাসে ঢুকে যাই।
যাতে কেউ না দেখে।
যদিও কয়েকটা স্টুডেন্ট ঠিকই দেখে নিয়েছিলো সেদিন।
আফরা সেদিন কোচিং এ কেন যেন আসেনি।
আমি সেদিন একাই গিয়েছিলাম।
পরে আফরাকে ফোন দিয়ে জানতে পারি,ও আসার পথে ওর মায়ের ফোন আসে বাসায় মেহমান আসবে।তাই আর ও ক্লাসে আসেনি।
যাইহোক,বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে প্রথমেই মনে পড়ে চিঠিটার কথা।
আমি চিঠিটা খুলেই দেখি খুব সুন্দর করে আহিল ওর মনের কথা গুলো প্রকাশ করেছে।
প্রথমেই লিখা,
আমার প্রাণের প্রিয়া!
অথচ আমি তো প্রিয়া নই,আমি আনবার।আনবার ও লিখতে পারেনি।
যাইহোক,
আমি না সুন্দর করে গুছিয়ে কোন কথা লিখতে পারিনা।
তাই সাদামাটা ভাবেই মনের ভাব প্রকাশ করলাম।আমি তোমাকে সেই ছোট্ট বেলা থেকে মনে মনে ভালবেসে এসেছি।
যখন তুমি ইন্টারে পড়ো আর আমি অনার্স প্রথম বর্ষে।
অনার্সের ছেলে আবার ছোট হয়?
যাইহোক,
শোনো,আমি এখন মাস্টার্সে পড়ি।
কিছু দিনের মধ্যেই আমার পড়ালেখা শেষ হয়ে যাবে।
আমার দাদী খুব অসুস্থ তাই তিনি চান মৃত্যুর আগে তিনি তার নাত বউর মুখ দেখবেন।
আর তাই আমি তোমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে চাই।
তুমি কি রাজি আছো?
অবশ্যই আমাকে জানিয়ে দিবে।
আই লাভ ইউ আনবার।
আই লাভ ইউ আমার প্রাণের প্রিয়া।
ইতি
আহিল
ওর চিঠি দেখে হাসবো না কাঁদবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।মানুষ প্রেম পত্র লিখে।আর সে আমাকে একবারে বিয়ের পত্র লিখেছে।যদিও এটাই বেস্ট।
আহিলকে আমারো খুব ভালো লাগে।খুবই স্মার্ট একটা ছেলে।
ওর হাসিটা মারাত্মক রকমের সুন্দর।
ওকে পছন্দ না করার কোন মানেই হয়না।
মনে মনে ভাবতে লাগলাম,
আফরাকে ওর কথাটা আমাকে জানাতে হবে।
এইদিকে হঠাৎ ই সেদিন রাতে আমার খুব জ্বর উঠে যায়।
তাই আর আমি পরের দিন কোচিং বা কলেজে যেতে পারিনা।
আমি যাবোনা বলে আফরাও যেতে চায়না।
কিন্তু আমি আফরাকে বলি,সাজেশন দিবে দুই তিন দিন।
তুই গিয়ে নিয়ে আয় সাজেশন।নইলে যে কেউই সাজেশন পাবোনা।
তারপর আফরা আমার কথায় কলেজে যায়।
আমার এতটাই জ্বর হয় যে আমি টানা ৭ দিনের মত বিছানায় লেগে যাই।
সাত দিন পর কোন রকম সুস্থ হলে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা হই।
কলেজে যেতেই আফরা আমাকে দৌড়ে এসে বলে,
তোকে একটা কথা বলার জন্য আর তর সইছেনা।
_কি কথা রে?
বল বল।
_আনবার আনবার আনবার,
আমি প্রেমে পড়েছি,
_কিহ?কার প্রেমে?কবে কখন কিভাবে?
কে সে?
_এত ব্যস্ত হচ্ছিস কেন?
এইতো সাত দিনের প্রেম আমাদের।
তুই অসুস্থ বলে তোকে আর বলা হয়নি।
তবে ও ও আমাকে খুব ভালবাসে।
আর আমিও ওকে খুব ভালবাসি।
_আরে বাবা নাম তো বলবি তার?কি করে সে তা তো বলবি?
_তোর এক মাত্র জিজুর নাম হচ্ছে,
মিঃ আহিল রেহমান।
মাস্টার্সে পড়ে।
ও যে যার হাসি দেখে একদিন বলেছিলি না,
দেখ দেখ ছেলেদের হাসিও কি মারাত্মক হয়।
ওই সেই মারাত্মক হাসিওয়ালা ছেলেটাই তোর উড বি দুলাভাই।
কথা গুলো শুনে আমার হাত থেকে পানির বোতল টা পড়ে যায়।
আমার মাথা চক্কর দিতে থাকে।
_আরে কি হলো তোর?
আনবার,কি হয়েছে?
_মাথা টা খুব ঘুরছেরে,
আমাকে একটু কমন রুমে নিয়ে চল।
_ওই দাঁড়া এক সেকেন্ড রে আহিল মেসেজ দিয়েছে,এক সেকেন্ড!আমি ওর রিপ্লাইটা দিয়ে নেই।
এদিকে আমার বুকের ভেতর যেন ভূমিকম্প হচ্ছে,যেই ছেলে আমাকে বিয়ের কথা বল্লো সাত দিন আগে,সেই ছেলে কিভাবে আমারই বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে আজ রিলেশনে।
এদিকে আমার বুকের ভেতর যেন ভূমিকম্প হচ্ছে,যেই ছেলে আমাকে বিয়ের কথা বল্লো সাত দিন আগে,সেই ছেলে কিভাবে আমারই বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে আজ রিলেশনে।
তারপর আমি একাই কমন রুমে চলে যাই।
ওইদিকে আফরা আর আহিল মেসেজিং করছে।
সেদিনের মত আমি বাসায় চলে আসি।মন কোন কিছুতেই বসছিলোনা।
আফরা আমাকে পরের দিন ফোন দেয়,
আর বলে
_শোন বিকেলে রেডি থাকিস।
আহিল দেখা করতে চেয়েছে,আজ দেখা করতে যাবোনে।
_তোর প্রেমিক তুই যা দেখা করতে,আমি কেন রেডি থাকবো?
_তুই রেডি থাকবি কারণ তুই আমার বেস্টু।আর আমি তোকে নিয়েই আহিলের সাথে দেখা করতে যাবো।
তুই রেডি থাকবি ব্যাস।
বিকেলে আফরা আমাকে ফোন দেয়,
_কিরে রেডি হয়েছিস?
_না।
_তোকে না বলেছি রেডি হতে?রেডি হোস নি কেন?
এক্ষুণি রেডি হয়ে বের হ।
_আমি না গেলে হয়না?অযথা কাবাব মে হাড্ডি আমি।
_থাপ্পড় খাবি একদম।
যা বলেছি তাই কর।
তারপর আমি রেডি হয়ে বের হই।
গিয়ে দেখি আমি যেই ড্রেস পরেছি আফরাও সেই ড্রেসই পরেছে।
_এসেছিস?
আহিল ও আসছে।মেসেজ দিয়েছিলো।
_ওহ আচ্ছা।
কিছু ক্ষণের মধ্যেই আহিল আসে,
কিন্তু আহিল আমার দিকে কেন তাকিয়ে আসছে?
ওর তো আফরার দিকে তাকানোর কথা।
নাকি আমাকে দেখে শকড ও।
না না,ওর চাহনি দেখেতো তা মনে হচ্ছেনা।
ও তো মুচকি হাসছেও আমাকে দেখে।
আমি এবার আফরার মুখের দিকে তাকালাম।
ও ও হাসছে আহিলকে দেখে।
বার বার লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করছে আবার উঁচু করছে।
আহিল আসতে আসতে আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে।
আমি আর আফরা দুজনই এক সাথে দাঁড়ানো।
যেই না আহিল আমার বরাবর এসে দাঁড়িয়েছে আমি পেছনে ঘুরে গেছি আর আফরা ঠাস করে বলে ফেলেছে,
_আই লাভ ইউ টু।
আমি রাজি।
আমি আসলে এ কয়টা দিন সময় নিয়েছি ভাবার জন্য।
দুজনের পছন্দ অপছন্দ জানার জন্য।
আমার কোন আপত্তি নেই।
আপনি আমার বাসায় প্রস্তাব পাঠাতে পারেন।
আহিল কিছু বলতে যাবে,
আর আমি সামনে ঘুরে আহিলকে বলি,
কংগ্রাচুলেশনস জিজু।
আপনাদের ভালবাসা সফল হোক।
অনেক অনেক দোয়া রইলো।
_কিন্তু আমি..
_কিন্তু কি আবার জিজু?কালই আপনি আপনার পরিবার নিয়ে আমার বেস্টুর বাসায় চলে আসবেন কেমন?
আফরা খুব ভালো মেয়ে।ও আপনাকে খুব ভালো রাখবে।
_আচ্ছা আসি তাহলে?বাসায় গিয়েই আমি মাকে জানিয়ে দিবো।(আফরা)
_সে কি,তোরা কথা বল।
_উঁহু,এখন না।
যা বলার বিয়ের পরই বলবো।চল বাসায় চল।(লজ্জা পেয়ে)
_আসি জিজু।
খুব শীঘ্রই দেখা হবে আমাদের।
আহিল নিজের চুল ধরে নিজেই টানছে।ও যে অস্বস্তি বোধ করছে তা ওকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
রাতে হঠাৎ আমার ফোনে একটা কল আসে আননোন নাম্বার থেকে।
রিসিভ করে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে ভেসে আসে,
_আমি আহিল বলছি।
_ওহ জিজু, কি মনে করে?
হঠাৎ এত রাতে শালিকার কথা মনে পড়লো?
_উফফ আনবার,প্লিজ জিজু জিজু করোনাতো।
আমার মাথা হ্যাং হয়ে আছে।
_কেন জিজু?আপনি যাকে ভালবাসেন,সেও আপনাকে ভালবাসে।আবার তারই সাথে আগামীকাল আপনার বিয়ের কথা হতে যাচ্ছে।
তাহলে মাথা হ্যাং হবার কারণ কি?
_তোমার বান্ধবী আফরা আমার ভালবাসা না।
তুমি আমার ভালবাসা,তুমি আমার প্রাণের প্রিয়া।
_লিসেন মিঃ আহিল রেহমান!আমি আপনার ভালবাসা হলে আপনি আমাকে রেখে আমার বান্ধবীর সাথে চুটিয়ে প্রেম করতেন না।
_দেখো আনবার,
আমি সত্যিই জানিনা কি হচ্ছে এসব।
_কি জানেন না আপনি?এই সাতটা দিন।আপনারা রাত দিন চ্যাট করেন নি?
আপনি বলেন নি ওকে ভালবাসি?
_হ্যাঁ আমি চ্যাট করেছি,
তবে তা তোমাকে মনে করে।
আমি ভুলেও ভাবিনি সেটা যে আফরা।
_বাহ,কি মজার কৌতুক।
_বিশ্বাস করো আনবার আমি সত্যি বলছি।
যেদিন তোমাকে আমি চিঠি দেই তারপরের দিনই ভাবতে থাকি তোমাকে আমার মোবাইল নাম্বার টা দেয়া উচিৎ ছিলো।
কিন্তু পরের দিন তোমাকে আর দেখতে পাইনা।
তাইতো আমি আমার মোবাইল নং টা লিখে তোমার বান্ধবী আফরার কাছে পিচ্চিকে দিয়ে পাঠাই।
আমি ভেবেছি তুমি তোমার বান্ধবীকে আমার কথা বলেছো।
যেহেতু তোমরা এত ক্লোজ।
আর সব সময় দেখি দুজন দুজনের কাছ থেকে আড়াল হওনা।
আমি ভেবেছি আফরা তোমাকে নাম্বার টা দিয়ে দিবে আর তুমি আমাকে ফোন দিবে।
কিন্তু আমার মোবাইলে আসলো একটা মেসেজ,
ওখানে লিখা ছিলো
_কিছু বলবেন?নাম্বার পাঠালেন।
_হুম।
_কি?
_পাঠাবো বিয়ের প্রস্তাব?
_আমাকে ভালো লাগে?
_খুব।
_ভালবাসেন?
_না বাসলে কি আর বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতে চাই?এবার বলো রাজি তুমি?
_সময় লাগবে ভাবার।
_কত দিন?
_১ দিন কিংবা ৭ দিন।
_ফোনে কথা বলি?
_চ্যাটেই বলি।
_আচ্ছা।
সেদিনের পর থেকে আমার চ্যাটিং এর মাধ্যমে কথা হয় সেই নাম্বারে।
আমিতো ভেবেছি তুমি।
যেহেতু প্রথম মেসেজ ছিলো,কিছু বলবেন?
নাম্বার পাঠালেন।
এতে আমি বুঝেই নিয়েছি আফরাকে দিয়ে নাম্বার পাঠালেন বুঝিয়েছো তুমি।
_উফ খোদা!ওটা আমি ছিলাম না।
ওটা ছিলো আফরা!আর আফরা বলেছে আপনাকে,কিছু বলবেন?
আর নাম্বার পাঠালেন বলতে বুঝিয়েছে পিচ্চিকে দিয়ে যে নাম্বার পাঠালেন।
_উফফ কত বড় ভুল হয়ে গেছে।
দুজনই ভুল বুঝে বসে আছি।
আমি তুমি ভেবে ওর সাথে এত দিন চ্যাট করেছি।
আর ও ভেবেছে আমি ওকে ভেবেই চ্যাট করেছি ওকেই নাম্বার দিয়েছি।
_আসলে আমি ওকে আমার সব কথা শেয়ার করলেও অসুস্থতার কারণে আপনার কথা ওকে বলে উঠতে পারিনি।যেদিন আপনি চিঠি দেন আমাকে,সেদিন থেকেই আমার প্রচুর জ্বর।
ওকে আর বলা হয়ে উঠেনি।
তার আগেই ও আমাকে আপনাদের ভালবাসার কথা জানালো।
_এখানে শুধু মাত্র ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে আনবার।
আমি সকালেই সব ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটাবো।
ওকে সব বুঝিয়ে বলে দেবো।
বলে দিবো,আমি তোমাকে না।
আমি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড আনবারকে ভালবাসি।
আর আশা করি ও সব বুঝবে।
_কিন্তু ও যে আপনাকে ভালবেসে ফেলেছে।
_আর তুমি বাসোনি?
_কিন্তু ও যে কষ্ট পাবে।
_আর তোমার আমার মিল না হলে আমরা যে তিন জনই কষ্ট পাবো।
তুমি কি চাও আমরা সারাজীবন তিনটা মানুষই কষ্ট পাই?
_না।
_তাহলে সকালেই আমরা আফরাকে সব বুঝিয়ে বলবো কেমন?
_আচ্ছা।
_এবার একটু হাসো।
_হয়েছে হয়েছে এবার ঘুমান।
_আই লাভ ইউ আমার প্রাণের প্রিয়া।
শুভ রাত্রি।
_শুভ রাত্রি।
পরের দিন সকালে আমি আর আহিল দুজনই ফোনে কথা বলে রেডি হই আফরার সাথে দেখা করার জন্য।
কিন্তু তার কিছু ক্ষণ পরই আমার ফোনে আফরার ফোন আসে।
_হ্যালো আফরা,
_আনবার,
_কাঁদছিস কেন আফরা?কি হয়েছে তোর?
_আনবার রে, মা আর নেই।
_কিহ,কি বলছিস তুই?
_তুই আয়।
_কাঁদিস না তুই আমি আসছি,এখনি আসছি।
আমি ফোন করে আহিলকেও জানালাম।
আফরার বাসায় উপস্থিত হয়ে দেখি আফরার মা আর নেই।
তিনি স্ট্রোক করে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন।
আফরা চিৎকার করে কাঁদছে।
আমাকে দেখে ওর কান্না আরো বেড়ে গেলো।
কিছু ক্ষণ পর আহিল এসেও উপস্থিত হলো সেখানে,
আহিলকে দেখে আফরা এবার হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো।
আর ওকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,
আমার আর তুমি ছাড়া কেউ রইলোনা এই দুনিয়ায়।
কেউ রইলোনা।
তুমি আমাকে কখনো একা করে যেওনা,
একা করে যেওনা কোন দিন তুমি আমায়।
(আফরার বাবা আফরা ছোট থাকতেই মারা গেছেন,আর এখন ওর মা)
আমি আফরার কথা শুনে এক পা দু পা করে ওদের কাছ থেকে পিছিয়ে এলাম।
আর নিজের চোখের জল দু হাতে মুছতে লাগলাম।
আহিল আমার দিকে তাকিয়ে আছে,
আর আফরা আহিলের বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছে,
আহিল আমার দিকে তাকিয়ে আছে,
আর আফরা আহিলের বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে কেঁদে যাচ্ছে।
তারপর আর কি,
দিলাম নিজের ভালবাসা বিসর্জন।
আহিলকেও বোঝালাম,আহিল যেন আফরাকে বিয়ে করে নেয়।
আহিল কিছুতেই রাজি হচ্ছিলোনা।কিন্তু আমার জন্য শেষমেস রাজি হয়।
আফরার মা বাবা কেউ ছিলোনা দুনিয়ায়।
যদি আহিলকেও হারিয়ে ফেলতো তাহলে হয়তো সহ্য করতে পারতোনা।
আমি আহিলের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলাম।
ওই দিকে আফরা আহিলকে ফোন দেয়।কথা বলে।
কিছু দিন পর আহিলকে একদিন ফোন দিয়ে বল্লাম,দেখা করতে পারবেন আমার সাথে?
আহিল আমার দেয়া ঠিকানা মত চলে এলো।
_কেমন আছো?
_হ্যাঁ ভালো।আপনি?
_আছি।
_বলছিলাম যে,এবার আফরাকে বিয়েটা করে ফেলুন।
আফরার কথা বাসায় জানান।
জানেনই তো আফরা এখন অসহায়।
ওর যে একটা পরিবারের খুবই দরকার।
_তুমি কি পারবে আমাকে ভুলতে?
_কিছু কিছু জিনিষ ভোলা যায়না,তবুও ভুলে থাকার অভিনয় করে বাঁচতে হয়।
_আফরাকে সব বুঝিয়ে বললে হতোনা?
_ও খুব কষ্ট পাবে।
নিজেকে নিঃস্ব মনে করবে।নিঃশেষ হয়ে যাবে ভেতর থেকে।
ওর বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে ওকে কি করে এই অবস্থায় ফেলবো বলুন?
আমি যে ওকে খুব ভালবাসি।
_আমাকে বাসোনা?
_কিছু কথা অজানাই থাক।
_প্লিজ আমাকে যদি আপনি ভালবেসে থাকেন,তাহলে যত দ্রুত সম্ভব আফরাকে বিয়ে করে নিন।
ওর একটা ঠিকানা গড়ে দিন।
_বিয়েটা কবে করতে হবে?
_কয়েক দিনের মধ্যে হলেই ভালো হয়।
_আচ্ছা,আমি আজই বাসায় গিয়ে ওর কথা বলবো।
তুমি খুশিতো?
_হ্যাঁ।
_তোমার খুশিতেই আমি খুশি।
তারপর আমি আহিলের ওখান থেকে চলে আসি।
পেছনে ফিরে মুখ বুজে যেই আর্তনাদ করছিলাম তা আহিলের চোখে হয়তো পড়েনি।
তবে আমার বুকের ভেতর টা ভেঙেচুড়ে যাচ্ছিলো।
বাসায় ফিরলাম,
পরের দিনই আহিলের পরিবারের লোকজন আফরাকে দেখতে আসলো আফরার নানা নানু বিয়েতে সম্মতি দিলেন।
তারপরের দিনই ঘরোয়া পরিবেশে আমারই চোখের সামনে আহিল আর আফরার বিয়েটা সম্পন্ন হলো।
নিজের চোখের জল লুকিয়ে বুক ভরে দোয়া করেছিলাম সেদিন,ওরা যেন সুখী হয়।
সেদিনের পর থেকে আমি আর আহিলের সামনাসামনিই পড়িনি।
আমি চেয়েছিলাম আহিল যেন আমাকে ভুলে আফরাকে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করে।
বিয়ের কয়েক মাস পরই আফরার ফোন।আসে একদিন,
_কেমন আছিস রে?
_এইতো ভালো।
কেমন চলছে তোদের দিনকাল?
_খুবই ভালো।
শোন না,তোকে একটা গুড নিউজ দিতে ফোন করেছি।
_কি গুড নিউজ?
_আমি না মা হতে চলেছি।
_কি?সত্যিই?কংগ্রাচুলেশনস!
_হ্যাঁ সত্যি।আর কথাটা তোকেই প্রথম আমি জানালাম।
_আহিলকে জানা বোকা মেয়ে,সে বেশি খুশি হবে।
_লজ্জা লাগছেরে।
_হা হা হা,বলে ফেল লজ্জা ভেঙে।দেখবি খুশি হবে খুব।
কেটে যায় অনেক গুলো মাস।
আজ আফরার ডেলিভারি ডেইট।
আমিও হসপিটালে উপস্থিত।
আহিলের সাথে এত দিন পর আমার সামনাসামনি দেখা।
আমি আহিলকে বার বার এড়িয়ে যাচ্ছি।
কিছু ক্ষণ পর একজন নার্স এসে জানালেন,
আফরার মেয়ে বাবু হয়েছে।
মা এবং বাচ্চা দুজনই সুস্থ আছে।
আহিল আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।
_আজ আফরার জায়গায় তুমিই থাকতে তাইনা?
_আপনার মেয়ে হয়েছে,কংগ্রাচুলেশনস!
_বিয়ে করছো না কেন এখনো?
_কাউকে যে ভালো লাগেনা।
_বিয়ে করে নাও,আর কত দিন একা থাকবে?
_একা কই?আমার পরিবার আছেতো।
_তবুও দিন শেষে নিজের একজন মানুষ যে পাশে থাকা খুব প্রয়োজন।
_ওই যে রাজকন্যা এসে গেছে।
নিন নিন কোলে নিন।
আজ আহিল আর আফরার সংসার পূর্ণ হলো।
আজ থেকে আবার জীবনের নতুন অধ্যায় শুরু।
আবার কেটে গেলো অনেক গুলো দিন,
আগামীকাল আফরা আর আহিলের মেয়ের জন্মদিনের এক বছর পূর্ণ হবে।
তাই ওরা নানান রকম আয়োজন করছে।
খুব বড় করে অনুষ্ঠান টা করবে।
আমিও আজ গিফট কিনে রেখেছি ওদের মেয়ের জন্য।
কিন্তু সন্ধ্যায়ই আমার ফোনে একটা কল আসে,
যেই কলের জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।
ফোনের ও প্রান্ত থেকে আমাকে একজন জানায়,
_কিছু ক্ষণ আগে আফরা স্ট্রোক করে মারা গেছে।
আমি কিছুতেই কথাটা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
দ্রুত আমি আহিলকে ফোন দেই।
কিন্তু আহিল ফোন রিসিভ করছেনা।
আমি তখনই সাথে সাথে আহিলের বাসায় চলে যাই।
গিয়ে দেখি,আফরা আর নেই।
ও সত্যি সত্যি স্ট্রোক করে মারা গেছে।
আহিলের বাসায় কান্নার ঢল।
কাঁদছে আহিল,আর আহিলের ছোট্ট মেয়েটাও।
বাড়ীটা কান্নায় ভারি হয়ে গেছে।
আমার বুক টা ফেটে যাচ্ছিলো।
আমিও চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম।
আমার আম্মুও আমাকে সামলাতে পারছেনা।
আফরার ছোট্ট মেয়েটা কাঁদছে,কেঁদেই যাচ্ছে।
আচ্ছা,ও কি বুঝে গেছে?ওর মা যে ওকে ছেড়ে চিরদিনের মত চলে গেছে।
ওর দাদা দাদী আহিল কেউ ওর কান্না থামাতে পারছেনা।
আমি মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বললাম,কি হয়েছে মা?
এইভাবে কাঁদছে কেন আমার মা টা?
এক মা চলে গেছে,আরেক মা তো আছে।
আমি আছি না?
আমি কোন দিন তোমায় ছেড়ে যাবোনা।
মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে পাগলের মত কাঁদতে লাগলাম আমি।
আফরার দাফন কার্য সমাপ্ত হয়।
রাতে আমি আর আম্মু বাসায় চলে আসি।
পরের দিন আবার আহিলদের বাসায় যাই।
আহিল ওর মেয়েটাকে কোলে নিয়ে বসে আছে।
আমিও ওর কাছে গিয়ে বসলাম।
_ও কিছু খেয়েছে?
_না।
আমি আয়রাকে কোলে করে খাওয়াতে নিয়ে গেলাম।
আহিল আর আফরার মেয়ের নাম আমিই রেখেছিলাম আয়রা।
আমাকে আফরা জিজ্ঞেস করেছিলো কি নাম রাখবে মেয়ের।
আমিই নাম টা বলেছিলাম।
আর সেই নামই আফরা রেখে দেয়।
আয়রাকে খাইয়ে ঘুম পাড়ালাম।
তারপর আহিলের কাছে বসে জিজ্ঞেস করলাম,
_কিভাবে কি হলো?
আহিল এবার দুচোখ ভরা জল নিয়ে বলতে লাগলো,
_খুব এক্সাইটেড ছিলো আফরা আয়রার জন্মদিন নিয়ে।
কত কিছু কেনাকাটা করেছি আমরা।
বিকেলে ও আমাকে বল্লো,
চলো বাসায় যাই,কেমন যেন লাগছে আমার।
এ কথা বলতে বলতেই আমি রিক্সায় উঠলাম ওকে নিয়ে।
হঠাৎ রিক্সায় উঠেই ও আমার কাঁধে মাথা রেখে ও
ঢলে পড়লো।
আমি ওকে ডাকলাম ও কোন সাড়া দিচ্ছেনা।
দ্রুত আমি ওকে হসপিটালে নিয়ে গেলাম।
ডাক্তার ওকে দেখে বললেন,
এই অল্প কিছু ক্ষণের মধ্যেই ও মারা গেছে।
স্ট্রোক করেছে ও।
মুহূর্তেই হাসিখুশি মেয়েটা নিশ্চুপ হয়ে গেলো।
তারপর হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে এলাম।
এইতো।
_আমি নিজেই নিজেকে সামলাতে পারছিনা।
আপনাকে কিভাবে বোঝাবো?
আহিল আমার হাত দুটো ধরে কাঁদতে লাগলো।
সেদিনের মত আবার বাসায় চলে এলাম।
চার দিন পর্যন্ত এভাবে যাওয়া আসা করে আয়রাকে খাইয়ে দিয়ে আসতাম,ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে আসতাম।
এরপর ওর দাদীর কাছে ওকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসি।
কিন্তু আয়রা কিছুতেই ওর দাদীর হাতে খাবার খেতোনা।আর না খেতো আহিলের হাতে।
তাই ওর দাদী আমাকে প্রায়ই ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বলতো,
আমি গিয়ে খাইয়ে চলে আসতাম।
আমি আসার সময় আয়রা খুব কান্না করতো।
এভাবে চলতে লাগলো।
একদিন হঠাৎ দেখি আহিল,আয়রা আর আহিলের বাবা মা আমাদের বাসায় এসে হাজির।
আম্মু আব্বু তাদের সাথে কথা বলছেন।
আহিল আয়রাকে নিয়ে আমার রুমে আসলো আমার সাথে।
আয়রা আমার কোলে এলো।
_আয়রা তোমাকে খুব মিস করে জানো?
_তাই?
_হ্যাঁ,
_আমিও আয়রাকে খুব মিস করি।
_আয়রা তুমি ছাড়া আর কারো হাতেই খেতে চায়না।
_আপনিও পারেন না একটু মেয়েটাকে খাওয়াতে?
_পারলেতো হতোই,তাছাড়া আমার তো অফিসও আছে।
_ওহ তাইতো।
_আনবার,
_জ্বী!
_আয়রার মা হবে?
হবে আমার প্রাণের প্রিয়া?
আমি নিশ্চুপ হয়ে গেলাম।
_বাবা মা তোমার মা বাবার সাথে কথা বলতে এসেছেন।
তোমার যদি কোন আপত্তি না থাকে তাহলে তারা তোমাকে আয়রার মা করে ঘরে তুলতে চান।
বিশ্বাস করো,আমি কিছু বলিনি।
তারাই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
আর আমাকে তারাই বলে নিয়ে এসেছেন।
_ওহ।
_উত্তর দিবেনা?
আমি তখনও চুপ করে আছি।
আমার চুপ থাকা দেখে আহিল বল্লো,
ঠিক আছে আমি বাসায় না করে দিবো।
আসি তাহলে।
চলো মা বাসায় যাই আমরা।
এই বলে আহিল ড্রইং রুমে চলে গেলো।
আমি আড়াল থেকে শুনতে পেলাম,
আমার আম্মু আব্বু সাফ সাফ মানা করে দিচ্ছেন আহিলের বাবা মাকে।
কারণ কোন বাবা মা ই চাইবেনা তাদের অবিবাহিত একটা মেয়েকে কোন বিবাহিত সন্তান সহ পুরুষের কাছে বিয়ে দিতে।
তাই আমার বাবা মাও রাজি হোন না,
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন