অসচ্ছ কুয়াশা আর মধুময় রাত্রির, বিরাহ ভরা সেই সকাল (গল্প)
আমিই ওর আসল স্বামী, আমরা অনন্তকাল মধুচন্দ্রিমায় এখানেই থাকছি। এটা একটা সাংঘাতিক এফেক্ট আমার মনে ফেলছে। মহুয়াকে ভীষণ ভাবে চাওয়া সত্ত্বেও আমি ওর পুরোপুরি সুস্থতার অপেক্ষা করে যাচ্ছি, আর নিজেকে খুব ধীরে ধীরে অবসাদের রাস্তায় ঠেলে দিচ্ছি। বুঝতে পেরেও কিছু করতে পারছি না, ওর অমোঘ আকর্ষণে।
রাতে খাবার পরে ঘরের ফায়ারপ্লেসের পাশে বসে একটা বই পড়তে পড়তে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, মহুয়ার ধাক্কা ঘুম ভাঙ্গালো আমার। উঠে গিয়ে বিছানায় শুতেই পাশে মহুয়াকে অনুভব করলাম আমি, ধরে ধরে শুইয়ে দিচ্ছে পরম মমতায়। আর আমার এতদিনের সমস্ত প্রতিজ্ঞা খড়কুটোর মত উড়ে গিয়ে আমি দখল নিলাম ওর। মহুয়ার কোন অবরোধই সফল হলোনা আর সে রাতে।
সকালে উঠে বিছানায় শুয়ে ছিলাম, হঠাৎ বিদ্যুৎচমকের মত মনে পড়ে গেল আগের রাতের ঘটনা। নিজের ভেতরের অবসাদ, না নেশার ঘোর কি আমাকে এতটা নিচে নামাতে পারলো, সেটা ভেবে আমি মহুয়ার মানসিক অবস্থা নিয়ে চিন্তিত হয়ে উঠলাম আবার। ধড়ফড় করে উঠতে যেতেই চৌকিদারের বউ চা নিয়ে এলো আমার জন্য, বিছানায় চা খাবার অভ্যেস আমার একার জীবনে কোনোদিনই ছিলনা, এখানে এসে ধরিয়েছে মহুয়া।
চা শেষ করতে করতে আমি অবশ্যকর্তব্য ভাবতে লাগলাম। কিভাবে মুখোমুখি হবো মহুয়ার? এখানে সবাই আমাদের স্বামী-স্ত্রী বলেই জানে, সেই জন্য আমাদের আলাদা শয্যা। প্রথম দিকে একটু ঘড়িতে দেখলাম বেশ অনেকটাই বেলা হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। বাথরুমে গিয়ে দেখলাম পরিষ্কার জামাকাপড় গুছিয়ে রাখা অন্যান্য দিনের মতোই। কিছু বুঝতে না পেরে হতবুদ্ধির মত স্নান সেরে বাইরে বেরোলাম। একটু অন্য ঘরগুলোতে উঁকি মেরে মহুয়ার কোন হদিস না পেয়ে গুটি গুটি পায়ে বাইরের লনের চেয়ারে গিয়ে বসলাম। প্রতিদিনের মতোই শিশির মোছা পরিষ্কার হয়ে থাকা চেয়ার আমার অপেক্ষায়। সাথে সেই বইটা, যেটা আগের রাতে পড়ছিলাম। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পেছনে একটা নূপুরের আওয়াজে চমকে তাকিয়ে দেখলাম মহুয়া, হাতে ব্রেকফাস্টের ট্রে। মহুয়ার সহজ ব্যবহার আমাকে একটু অবাক করছিল তখন। হঠাৎ ও বলে উঠলো,
- "আমরা ফিরব কবে?"
- "কোথায়?"
- "কেন কলকাতায়?"
- "তুমি যেদিন বলবে"
- "তাহলে চলো, কালকেই ফিরি। আর ভালো লাগছে না আমার এখানে।"
- "মহুয়া ?"
একটু ভারী স্বরে ডাকলাম আমি।
ও বললো, - "হ্যাঁ বলো, কি বলছো ?"
- "কাল রাতের জন্য সরি। আমি আসলে, কি যে হয়ে গেল।"
- "কিন্তু যা হয়েছে সেটাকে কি তুমি বদলাতে পারবে?"
- "না পারবো না জানি, কিন্তু তুমি, মানে আমি জানি
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন