Header Ads

Header ADS

রহস্যময় স্বামী নামক এক অজানা চরিত্র! পার্ট ৪


আগের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-কে??
-কেন চিনতে কষ্ট হচ্ছে বুঝি??
-তুমি!!
-অনু I am Sorry।
-(...)
-অনু প্লিজ আমি তোমার সাথে মিট করতে চাই!!অনেক কিছু বলার আছে তোমাকে
-(...)
-অনু শুনছো??
-আবার কি চাই আপনার??
-কেন তোমাকে চাই!!
-রাখছি!!
-অনু অনু তোমাকে অনেক কিছু বলার আছে।অনু নির্ঝর.....

ওয়াশরুমের দরজা খোলার শব্দে অনু চমকে গিয়ে দুম করে ফোনটা কেটে সাইলেন্ট মুড অ্যাকটিভ করে দেয়।

সকাল সকাল নির্ঝরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে অনু ওয়াশরুমে চলে যায়।একটু পর নির্ঝরও ওঠে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়।বেঁচারা অনু তো লজ্জায় নাজে হাল অবস্থা।কোনো রকমে সাওয়ার নিয়ে বাহিরে বের হতেই দেখে নির্ঝরের ফোনটা বাজছে।ফোনটা বেশ কয়েকবার বাজতেই অনু কি মনে করে ফোনটা তুলে হ্যালো বলতেই অপর প্রান্তের লোকটার গলা শুনে থমকে যায় অনু!!

"সায়ন" এ যে সায়নের গলা....

সায়নের সাথে কোনো রকমে কথা শেষ না করতেই নির্ঝর ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে পরে।অনু নির্ঝরকে দেখে ফোনটা বিছানায় ছুড়ে দেয়।তারপর উল্টো দিকে মুখ ফিরে দাড়িয়ে পরে।চোখে যে তার পানি টলমল করছে.....

নির্ঝর ফোন ছুড়ে মারা দেখে অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে।
কি মনে করে নির্ঝর মুচকি হাসি দেয়....
-কি ম্যাডাম আপনিও কি বাঙ্গালী বউদের মতো বরকে সন্দেহ করা শুরু করলেন??
-না মানে
-এই যে বরের ফোন চেক করছেন!!কি ব্যাপার হুম্ম??
(পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।।
-(.....)
-কি হলো??আমার ফোনে কিন্তু গোপন কিচ্ছু নেই!!
-(...)

অনুকে সামনের দিকে ফেরালে নির্ঝর দেখে অনুর চোখ লাল হয়ে আছে...
-অনু তুমি কাঁদছিলে??
-না মানে
-কেনো??

-কি গো তোমরা আজকে দরজা খুলবে না কি সারা দিন ঘরের ভেতর দোড় দিয়ে রোমান্সই করবে??

সিমির ডাকে বেশ থতমত খেয়ে যায় দুজন।
অনু একরকম নির্ঝরের থেকে পালিয়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।
তখনই সিমি আর নীরা হুরমুর করে ঘরে ঢুকে যায়।কিন্তু বেঁচারা নির্ঝর পরে যায় বিপদে।
নির্ঝর ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে প্যান্ট পরলেও শার্টটা পরে নি।অনু সেদিকে হুস না করেই সিমিকে দরজা খুলে দিয়েছে।

সিমির চোখ যায় নির্ঝরের লোমশ বুকের দিকে।এমন একটা বুকই তো সে আশ্রয়ের জন্য চেয়েছিলো।শুধু সে কেন পৃথিবীর প্রত্যেকটা মেয়েই তো এমন একটা বুক চায়, এমন একটা নিরাপদ আশ্রয় চায় অবশ্য সে তো পেয়েও গিয়েছিলো কিন্তু ধরে রাখতে পারে নি!!

সিমি চোখে চোখ পরতেই নির্ঝর লজ্জা পেয়ে যায় দ্রুত টি-শার্টটা হাতে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়।।।

এদিকে নীরা অনুর সাথে বকবক করেই যাচ্ছে কিন্তু সিমির সে দিকে হুস নেই বার বার সিমির চোখ আটকে যাচ্ছে অনুর গলায় আর ঘাড়ে হালকা লাল হয়ে যাওয়া দাগ গুলোর দিকে.....
চোখটা কেমন ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে।

নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে....
-অনু আমারা সবাই সপিং মলে যাচ্ছি তুমি যাবে??
-না আমার ভালো লাগছে না

(বারান্দা থেকে নির্ঝরকে আসতে দেখে)
-সারা দিন কি বরের সাথে রোমান্স করলে চলবে দুদিন পর তোমার ননদীনীর বিয়ে একটু তো তাকেও সময় দাও....

(নির্ঝর একবার সিমির দিকে তাকিয়ে চোখ নামিয়ে নেয়)

অনু মুচকি হেসে....
-বেশ তো চলো।তা রায় বাঘিনী ননদীনী কোথায় যাবে বলো??
-সপিং এ
-ওকে আমরা বরণ গিতাঞ্জলী সপিং কমপ্লেক্সে যাই!
-বেশ চলো.....

অনু নীরাকে নিয়ে ছুট লাগায় বাহিরে....
নির্ঝর ল্যাপটপ নিয়ে সোফায় বসে আছে।সিমি গুটিগুটি পায়ে নির্ঝরের কাছে এগিয়ে যায়
-নির বেশ ভালোই তো আছো!!
(নির্ঝর একবার সিমির দিকে তাকিয়ে)
-ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেলে সবাই ভালো থাকে!!!
-কিন্তু আমি...
-নিচে তোর জন্য সবাই অপেক্ষা করছে....

সিমি আর কথা বারায় না
"যে কথা শুনতে চায় না তাকে শুনিয়ে কি লাভ!!
যে দুঃখ বুঝতে চায় না তাকে বুঝিয়ে কি লাভ।
সবই অপাত্রে কন্যা দান"

সপিং মলে বেশ করে ঘুরাঘুরি করছে সিমি,নীরা আর অনু।বেশ সপিংও করে নিয়েছে তারা।অনুও বেশ কেনাকাটা করেছে।

সকালে সায়নের কথা অনুর মাথা থেকে বেরিয়েই গেছিলো।তবে লিফ্টে ওঠার সময় কেন যেন অনুর মনে হচ্ছিলো সায়ন তাকে ডাকছে....

এটা মনের ভুল ভেবে বসে আছে সে।
বেশ ঘুরাঘুরির পর তিনজনই ক্লান্ত এখনো অনেক কেনাকাটা আছে।সিমির নাকি হটাৎ করেউ ওয়াশরুম পেয়েছে তাই সে অনুকে একটা ক্যাফে দেখিয়ে দেয়।আর বলে দেয়
-অনু তুমি ঐ ক্যাফেটাতে গিয়ে বসো আমি আর নীরা একটু ওয়াশরুম থেকে ঘুরে আসছি
-আমি ও যাবো আমি ওখানে একা একা কি করবো
-উহু তুমি ওখানে গিয়েই বসো এতোগুলো ব্যাগ নিয়ে শুধু শুধু দাড়িয়ে থাকবে কেন।যাও তুমি গিয়ে বসো আমরা আসছি।
-কিন্তু....আচ্ছা!!

অনু আপন মনে হেটে হেটে ক্যাফেতে ঢুকছিলো হটাৎ কেউ একজন অনুর হাত ধরে ফেলে...
অনু পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে নির্ঝর অনুর হাত ধরে আছে।
-আপনি☺☺☺☺

অনু ভালো করে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে দেখে সে রক্ত বর্ণ চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে বোধয় সে খুব রেগে আছে।
কিন্তু কেন???

অনু অবাক হয়ে নির্ঝের দিকে তাকিয়ে আছে।হটাৎই নির্ঝর অনুকে হ্যাচকা টান দেয়।অনু হুমড়ি খেয়ে পরে...
তারপর নির্ঝর একপলক অনুকে দেখে নিয়ে টানতে টানতে ক্যাফের দরজা থেকে বেরিয়ে যায়।
নির্ঝর অনুকে একই ভাবে টানতে টানতে গাড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসে।
অনু বার বার নির্ঝরকে জিঙ্গেস করছে কি হয়েছে কিন্তু তার মুখে তো কোনো কথায়ই নেই।কেউ যেন তার মুখটা সুই সুতো দিয়ে সেলাই করে দিয়েছে।

একটু মন দিয়ে পড়ুন--
পরবর্তী অংশ অর্থাৎ সবগুলো পর্ব এই I'd তে দেয়া হবে, পুরো গল্পটি পড়তে রিকুয়েস্ট দিয়ে সাথেই থাকুন। ভালো ভালো গল্প পেতে এই আইডির সাথেই থাকুন!অনেক সময় গ্রুপে গল্প পোস্ট হয় না। তাই গ্রুপে গল্প পেতে সমস্যা হলে ফলো অথবা রিকুয়েস্ট দিয়ে রাখতে পারেন ধন্যবাদ।

মেঝেতে উবু হয়ে পরে আছে অনু।
সারা শরীরে মারের দাগ স্পষ্ট। জায়গায় জায়গায় অনেকটা গভীর ভাবে কালো হয়ে আছে আবার কিছু কিছু জায়গায় রক্ত বেরিয়ে জমে গেছে।।অনুর হালকা গোলাপী সাড়িটাতে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে।।
অনুর গলাটা শুকিয়ে গেছে কিন্তু উঠে দাড়ানোর মতো জোড় নেই....

একটু আগেই যে নির্ঝর তাকে পড়নের বেল্ট দিয়ে ইচ্ছে মতো পিটিয়েছে । তারই চিহ্ন বহন করছে শরীরের এই দাগগুলো....!!!

কিছুক্ষন আগে....

সপিংমল থেকে বেরিয়ে নির্ঝর অনুকে ধাক্কা মেরে গাড়িতে বসিয়ে দেয়।অনু বার বার জিঙ্গেস করছে
-কি হয়েছে এমন করছেন কেন??
-(...)
-কি হলো বলবেন তো???

নির্ঝর শুধু একবার অনুর দিকে চোখ পাকিয়ে ছিলো।নির্ঝরের চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে।
নির্ঝরের এমন রূপ দেখতে মোটেও অভ্যস্থ নয় অনু।কেমন জানি ভয় ভয় লাগছিলো।

সারা রাস্তা আর একটিও কথা বলেনি অনু।নির্ঝরও চুপ

নির্ঝরের গাড়ি সোজা গিয়ে থামে বাড়ির দরজার সামনে....
নির্ঝর গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে অনুর হাত ধরে টানতে টানতে উপরে নিয়ে যায়...
-আহ নির্ঝর লাগছে!! কি হয়েছে বলবেন তো এমন টানাটানি কেন করছেন???

নির্ঝর অনুকে ঘরে এনে সোজা দাড় করিয়ে একটা থাপ্পর মেরে দেয়।অনু ছিটকে গিয়ে মেঝেতে পরে।

-তোর সাহস কি করে হয় আমার ফোন থেকে সায়নকে ফোন করিস
(ফোনটা আছাড় মেরে)

অনু মুর্তির মতো বসে আছে...
-খুব শখ না সায়নের সাথে দেখা কারার?? খুব ইচ্ছে না পুরানো প্রেমিকের সাথে পালিয়ে যাওয়ার??

-কি করেছি আমি??
-ঠকিয়েছিস আমায়.....
বেঈমান কোথাকার এতো ভালোবাসলাম অথচ তোর গায়েয় লাগে না না??

কথা বলতে বলতে নির্ঝর কোমড় থেকে বেল্টটা খুলে অনুকে পেটাতে থাকে।
"অনু না নির্ঝরের কথার কোনো মানে খুজে পাচ্ছে আর না রাগের"

নির্ঝর অনুকে ইচ্ছে মতো আঘাত করছে অনু প্রথমে চিৎকার করলেও পরে জড়সড় হয়ে গেছে।।।

এই নির্ঝরকে তার বিয়ের প্রথম দিনের নির্ঝর বলে মনে হচ্ছে যে
কি তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাকে....

অনুর চোখ দিয়ে পানি পরছে...

"এ কেমন ভালোবাসা??
ভালোবাসা বুঝি এমন হয়??
ভালোবাসা কি এতো হিংস্র হয়??
যখন যা ইচ্ছে করা যায়??
যখন খুশি কাছে ডাকা যায় আবার যখন খুশি দূরে সরিয়ে দেওয়া যায়।যখন খুশি আদর করা যায় যখন খুশি ব্যাথ্যা দেওয়া যায়??এটাই কি ভালোবাসা।এমন ভালোবাসাই কি তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছে নির্ঝর নামের এই লোকটি??

কি জানি....!!অনুর মাথা ঘুরছে একসময় অনু গ্ঞান হারিয়ে পরে যায়।তারপর...

"ভালোবাসার এরকম মানে অনুর জানা ছিলো না তবে নির্ঝর তাকে ভালোবাসার অনেক রকম স্বাদ বুঝিয়ে দিয়েছে...."

নির্ঝরের এমন নির্মম আচরণের কারণ অনুর জানা নেই.....!!

তবে নির্ঝরের করা প্রত্যেকটা আঘাত সে বেশ ভালোভাবেই হজম করেছে....!!!করতে বাধ্য সে এ কদিনে যে মনের বেশ কিছু অংশ সে নির্ঝর নামের এই লোকটাকে দিয়ে দিয়েছে।




বারান্দায় গিটার হাতে দাড়িয়ে আছে সায়ন....
কতো দিন পর দেশে ফিরছে সে।
অনুর জন্য বুকটা বেশ ছটপট করছে।
মেয়েটার মাঝে বড্ড মায়া।এ মায়া কাটানোর সাধ্য তার নেই।
ভুল করেই সে ভুল করে ফেলেছে।

ছলনায় পরে হারিয়ে ফেলেছে সে তার অনুকে।
"কেন সে সেদিন অনুকে প্রত্যাখ্যান করলো কেন সেদিন অনুকে নিয়ে পালিয়ে গেলো না দূরে?কেন সেদিন হুট করেই দেশ ছেড়ে চলে গেল সে??কেন কেন কেন??

কথাগুলো বলতে বলতে সায়ন দেয়ালে কয়েকটা আঘাত...
এখন এসব ভেবে কি লাভ।যা হারানোর সব তো সে হারিয়েই ফেলেছে।
অনু একবার দেখার অধিকারও তার নেই এখন শুধু দেখা কেন অনুকে নাম ধরে ডাকার অধিকারও নেই তার।।

সপিং মলে অনুর সাথে প্রায় দেখা হয়েই যাচ্ছিলো।সায়ন ঐ ক্যাফের দরজার সামনা সামনি বসে ছিলো।অনুও আসছিলো।
কিন্তু সায়ন অনুর নাম ধরে ডাকতে যাবে তার আগেই একটা লোক এসে অনুকে টেনতে টানতে নিয়ে গেল।বোধয় এই লোকটায় অনুর স্বামী........নির্ঝর চৌধুরী।।

হ্যা...!!
সব কিছুর জন্য দায়ী এই নির্ঝর চৌধূরী।

-তোকে কখনো ক্ষমা করবো না আমি নির্ঝর কখনো না

নির্ঝরের ঘরে

অনু দিত্বীয়বার যখন চোখ খোলে তখন সে বিছানায়।আর নির্ঝর ঠিক তার পাশে বসে আছে।অনু একটু নড়তেই বুঝতে পারে নির্ঝর তার হাত শক্ত করে ধরে আছে।।।

অনু অস্পষ্ট স্বরে বলে ওঠে...
-পানি খাবো

নির্ঝর দ্রুত গিয়ে পানি এনে দেয়।অনু একটু পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়ে

অনু একদৃষ্টিতে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে..
নির্ঝর মাথা নিচু করে বসে আছে!!
-মি.চৌধূরী
-হুম্ম
-আমাকে বাবার কাছে রেখে আসুন!!
-অনু
-আপনি খুব বাজে একটা লোক।।।
-অনু আমি তোমায় ভালোবাসি
-কিন্তু আমি বাসি না!!
-হ্যা বাসবেই না তো তুমি তো শুধু ঐ সায়নকেই ভালোবাসবে.....!!!
-(.....)
-তুমি ভালোবাসো বা না বাসো তুমি শুধু আমার!!

অনু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে।
নির্ঝরের গাল বেয়ে দুফোটা পানি অনুর হাতে পরলো....

"ওনি কি কাঁদছেন??কিন্তু কেন??"
"নির্ঝর অনু তোর থেকে মুক্তি চায়।অনুকে ছেড়ে দে ও তোর সাথে থাকতে চায় না।এভাবে ধরে বেঁধে আর যাউ হোক ভালোবাসা হয়না"

নির্ঝর শান্ত চোখে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে...।।

ছাদে দুই পা গুটিয়ে বসে বসে স্মোক করছিলো নির্ঝর।বলতে গেলে নির্ঝর একরকম চেইন স্মোকার।
মোটামুটি একপ্যাকেট সাবার করেছে সারা দিনে।এখন নতুন প্যাকেট নিয়ে বসেছে।।

-এসব বলে লাভ নেই অনুকে আমি ভালোবাসি!!অনু আমার স্ত্রী।মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ওকে আমি ছাড়তে পারবো না।।
-তুই অনুকে ভালোবাসিস কিন্তু সে তো তোকে ভালোবাসে না তাহলে??কেন জোড় করে এভাবে.....
(মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে)
-তাহলে কিছুই না আজ বাসে না কাল ঠিকিই বাসবে।কিন্তু ভালো আমাকে বাসবেই!!

-এভাবে জোড় করে ভালোবাসা হয় না নির।।
-ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা পাওয়া যায় আমি অনুকে ভালোবাসি সো অনু ও একদিন না একদিন ঠিকিই আমাকে ভালোবাসবে....
-যদি ভালোই বাসতো তাহলে বার বার সায়ন সায়ন করতো না।তোর বউ তো ঘুমের ঘোরেও সায়নের নাম জপে! সে তো মনে প্রানে সায়নকে ভালোবাসে!!
-বাসবে অনু আমাকে একদিন ঠিক ভালোবাসবে.....
"আমি থাকি বা না থাকি অনু একদিন ঠিক আমাকে ভালোবাসবে।সায়নের থেকে বেশি ভালোবাসবে আমি জানি।আমি যে ওর স্বামী"

কথাটা বলতে বলতে নির্ঝর উঠে চলে আসে ঘরে অনু একা সুয়ে আছে।ব্যাথ্যায় একটু জ্বর ও এসেছে।অবশ্য নির্ঝর অনুকে ঔষুধও খাইয়ে দিয়েছে....
"বিষয়টা জুতো মেরে গরু দানের মতো লাগছে নির্ঝরের কাছে।নিজেই বউকে মেয়ে আবার বউয়ের সেবা করছে"
"কোই আমি তো মারতে চাই নি তোমাকে কিন্তু তুমিই তো আমাকে বাধ্য করলে।কেন তুমি সায়নের সাথে পালাতে চাইলে??"(মনে মনে)

অনু আয়নার সামনে দাড়িয়ে আছে।বুকের আঁচলটা একটু সরাতেই ঘাড়ে কিছু দাগ চোখে পড়লো।দাগগুলো দেখতেই মুখে ম্লান হাসি ফুটে উঠলো।
এগুলো কাল রাতের দাগ।নির্ঝরের ভালোবাসার চিহ্ন।এবার অনু একটু পেছন ফিরতেই পিঠে, হাতে নীল হয়ে যাওয়া দাগ গুলো দেখতে পেলো।এগুলোও নির্ঝরের ভালোবাসার দাগ।
"একটা মানুষ দুরকম ভাবে ভালোবাসতে পারে।কখনো সোহাগ করে কখনো বা আঘাত করে"
হায়রে ভালোবাসা...

অনুকে আয়নার সামনে দাড়াতে দেখে নির্ঝর এসে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে!

-আহ্ নির্ঝর লাগছে ছাড়ুন আমাকে
-আমি তোমায় খুব ভালোবাসি অনু
-(...)
-কি হলো কথা বলছো না কেন?
-জানেন তো মি.চৌধূরী আপনি আমায় দুই রকম অভিগ্ঞতা উপহার দিয়েছেন!!
-কিসের??
-ভালোবাসার!!
-সরি।আসলে
-এতো আসল নকল বুঝি না যদি বুঝতাম আজ এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকতাম না!!
-(...)
-জানেন তো মি.চৌধূরী আমি একটু একটু করে আপনার সাথে মানিয়ে নিচ্ছিলাম আসলে নেওয়ার চেষ্ট করছিলাম কিন্তু...
-অনু তুমি কি সায়নের কাছে যেতে চাও????

অনু অবাক চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।নির্ঝর চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে।
-যেতে চাইলে কি আপনি আমাকে সায়নের কাছে রেখে আসবেন???

(নির্ঝর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
-আমার উপায় নেই!!
-যা পারবেন না তা বলে লাভ নেই!!
-তারমানে তুমি যেতে চাও
-কি জানি আমি যে কি চাই সে আমি নিজেও জানি না!!

অনু কথাগুলো বলতে বলতে বারান্দায় পা বারায় নির্ঝর অনুর হাত চেপে ধরে।তারপর অনুকে কাছে এনে বুকের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে....

-জানো তো অনু আমি যাকেই ভালোবাসি সেই আমাকে ছেড়ে চলে যায়।আচ্ছা আমি কি এতোই খারাপ যে আমাকে একটু ভালোবাসা যায় না????

অনু কি বলবে বুঝতে পারছে না.....

(অনু নির্ঝরকে নিজের থেকে সরিয়ে দিয়ে)
-নির্ঝর আমি সত্যিই সায়নের সাথে নিজে থেকে যোগাযোগ করি নি!! বিশ্বাস করুন..(নির্ঝরের চোখের দিকে তাকিয়ে)

নির্ঝর মুখ ফিরিয়ে নেয়
-ওও বিশ্বাস করলেন না তো??
-আমি তোমায় ভালোবাসি অনু
-বার বার ভালোবাসি ভালোবাসি বললেই ভালোবাসা হয় না।আচ্ছা যাকে এতো ভালোবাসেন তাকে এতোগুলো আঘাত করতে একটুও কষ্ট হলো না আপনার!!
-তুমি তোমার শরীরের ক্ষত সবাইকে দেখাতে পারবে আমি আমার ক্ষত কাউকে দেখাতে পারবো না!!

অনুর সাথে কথা বলে নির্ঝর বেরিয়ে যায়.....

অনুর নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে।নির্ঝর অনুর কাছে একটা বড় প্রশ্ন চিহ্ন যাকে ঘিরে রহস্যের সীমা নেই।লোকটা কি চায় কেন চায় কিছুই জানা নেই অনুর।হুট হাট করে দূরে সারিয়ে দেয় আবার হুট করেই এতো কাছে টেনে নেয় যে ছাড়াবার উপায় নেই।
তবে লোকটা মাঝে বড্ড মায়া।আসলে বিয়ে সম্পর্কটায় যে বড্ড পবিত্র।যেখানে পবিত্রতা আছে,সেখানে শুদ্ধতা আছে আর যেখানে বিশুদ্ধ ভালোবাসা আছে সেখানে মায়া থাকাটায় স্বাভবিক!!

সায়ন অনেক চিন্তা ভাবনা করে নিয়েছে।এভাবে চলা সম্ভব নয়।অনুর সাথে সরাসরি কথা বলতে হবে।অনুকে নির্ঝরের আসল রূপটা দেখাতে হবে!!

এসব কিছুর জন্য যে একমাত্র দায়ী নির্ঝর তা অনুকে জানাতে হবে।এই একটা লোকের জন্য তো আর আমাদের ভালোবাসা শেষ হয়ে যেতে পারে না!!!

অনেক চিন্তা ভাবনা করে সায়ন সিমিকে ফোন দেয়
দুই বার রিং হতেই সিমি রিসিভ করে...
-হ্যালো
-হ্যা বল
-সিমি কি হয়েছে তুই কাঁদছিলি নাকি?তোর গলা এমন শোনাচ্ছে কেন??
-নাহ্ কিছু হয়নি তো!!
-কি হয়েছে বল
-আসলে অনু
-কি হয়েছে অনুর
-কিছু না
-কি হলো বল??
-আজ সপিং মলে আমি তোর আর অনুর দেখা করাতে চাইছিলাম বলে নির্ঝর আমাকে যা নয় তাই বলেছে আমাদের এতো বছরের বন্ধুত্বার কোনো দামই তো নেই ওর কাছে।আর অনুকে তো....
-অনুকে কি করেছে??
-(..)
-কি হলো বল...
-অনুকে যা পিটিয়েছে মেয়েটা মার খেয়ে অগ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো.....!!
-কিহ্

সায়নের চোখ দুটো দপ করে জ্বালে উঠলো...
-নির্ঝর অনুর গায়ে হাত তুলেছে??
-হুম্ম
-সিমি একটা উপকার করবি দোস্ত প্লিজ
-কি??
-অনু সাথে একাবার আমার দেখা করিয়ে দিবি প্লিজ দোস্ত শুধু একবার।আমি অনুকে নিয়ে দূরে চলে যাবো অনেক দূরে মা বাবা আর নির্ঝরের থেকে দূরে....
-সায়ন আমি চেষ্টা করবো আমি ও তো চাই তুই অনুকে নিয়ে অনেক দূরে চলে যা তোরা সুখে থাক।
-হুম্ম
-আমি মন থেকে চাই অনু নির্ঝরের থেকে দূরে চলে যাক....
-Thnx রে....
-☺☺☺

"শুনোন মি.চৌধূরী আমার না ভীষন তেতুল খেতে ইচ্ছে করছে।
পাঁকা তেতুল আর একটু ঝাল দিয়ে মাখিয়ে এনে দিন না আমি খাবো"

সকাল সকাল অনু গাল ফুলিয়ে বিছানায় বসে আছে....
নির্ঝর অফিস যাবে বলে তৈরী হচ্ছিলো।
অনু বিছানায় বসে বসেই নির্ঝরের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে।অনুকে এভাবে বসে থাকতে দেখে নির্ঝর অনুর কাছে এগিয়ে যায়।
অনুর দুই হাত ধরে দাড় করিয়ে দেয়।
-কি হয়েছে টুনি পাখি এভাবে বসে আছো কেন ঘুম হয় নায় এখনো??

অনু ঠোঁট উল্টিয়ে বাচ্চাদের মতো মুখ বাঁকিয়ে জবাব দেয়
- "শুনোন মি.চৌধূরী আমার না ভীষন তেতুল খেতে ইচ্ছে করছে।
পাঁকা তেতুল আর একটু ঝাল দিয়ে মাখিয়ে এনে দিন না আমি খাবো"

নির্ঝর অনুর এরকম বায়না শুনে কিছুক্ষন অনুর দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরে যায়।
-কি হলো এনে দিন না আমার না খুব টক টক পাচ্ছে....মানে টক খেতে ইচ্ছে করছে

নির্ঝর একটু মুচকি হেসে অনুর কাছে এগিয়ে যায় তারপর অনুর কপাঁলে একটা ছোট্ট চুমু দিয়ে উওর দেয়
-ফ্রেস হয়ে নিচে চলো।।
-আর আমার তেঁতুল
-বাড়িতে আপাতোতো কোনো তেঁতুল নেই।আমি অফিস থেকে আসার সময় নিয়ে আসবো।।
অনু মুচকি হেসে দুম করে নির্ঝরের গালে চুমু দিয়ে দেয়।নির্ঝর ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে দাড়িয়ে আছে।

অনু লজ্জা পেয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে যায আর নির্ঝর মুচকি হেসে নিচে চলে আসে।
নিচে নির্ঝরের মা নির্ঝরকে দেখে এগিয়ে আসে।
-কিছু বলবা আম্মু??
-আব্বু জি আজকে অফিস থেকে একটু তারা তারি চলে এসো!!
-কেন??
-আসলে তোমাকে বলা হয় নি আজকে সন্ধ্যায় তোমার আনিকা আপুর সাদের অনুষ্ঠান আছে।তুমি এলে তোমাকে নিয়ে যাবো!!
-আচ্ছা।
-আর শোনো তুমি তোমার বউ কে বাপের বাড়ি দিয়ে এসো!
-কেন?
-বাড়ি শুদ্ধো সবাই তো যাবো সে একা একা বাড়িতে থাকতে পারবে?আর রাতে ফিরবো কি ফিরবো না।তাই তাকে বরং.....
-এক মিনিট বাড়ির সবাই যাবো অনু যাবে না???
-এইসব বাজা মেয়ে মানুষদের এরকম শুভ কাজে যেতে নেই।।
-আম্মু....
(নির্ঝর কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল অনু আসছে)

অনু অবাক চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।শ্বাশুড়ির বলা সম্পূর্ণ কথা শুনতে না পেলেও বাজা শব্দটা ঠিকই তার কানে এসেছে।

কিন্তু ওনি কাকে বন্ধ্যা বললেন????

সন্ধ্যে বেলা.....

নির্ঝরের জোরাজুরিতে অনুকেও সাথে আনা হয়েছে।নির্ঝরের মা একরকম ছেলের কথা রাখতেই অনুকে আনার পার্মিশনটা দিয়েছেন বউ মা এলে নাকি ছেলে ও আসবে না।
আনিকা আপুর সাদ বলে কথা।আনিকা হলো নির্ঝরের ফুপাতো বোন।বেশ আদরের বললেই চলে।।বাড়ির প্রথম মেয়ে।

বেশ নিয়ম কানুন মেনেই আনিকার সাদ দেওয়া হচ্ছে আর অনু দূর থেকেই এসব দেখছে। কেন জানি তার শ্বাশুড়ি তাকে এসবে ধারের কাছেও ঘেষতে দিচ্ছে না।
নির্ঝরকেও আশেপাশে দেখতে পাচ্ছে না অনু
হটাৎই কেউ একজন পেছন থেকে অনুর মুখ চেপে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে।অনু ছুটার চেষ্ট করছে কিন্তু পারছে।

লোকটা অনুকে গার্ডেনের এক কোণে এনে ছেড় দেয়।
অনু বেশ ভয় পেয়ে গেছে।লম্বা লম্বা দম নিচ্ছে।
-কে....কে আপনি??কি চাই??
-তোমাকে...

লোকটা সামনে আসতেই অনু চমকে যায়।কতোদিন পর এই মুখটা আবার দেখছে সে...
-সায়ন????
-হুম্ম।কেমন আছো অনু??
-ভালো আছি খুব ভালো আছি।(বেশ জোড় দিয়েই কথাটা বললো অনু)
-আমি জানি তুমি ভালো নেই
-আপনাকে কে বলেছে আমি ভালো নেই
-আমি জানি
-ভুল জানেন।সরুন আমাকে যেতে দিন(সায়নকে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলে সায়ন অনুর হাত ধরে টান দেয় অনু টাল সামলাতে না পেরে সায়নের বুকে এসে পড়ে)

অনু সায়নকে ধাক্কা মেরে দূরে সারিয়ে দেয়
-ডোন্ট টাচ মি!!
-অনু চলো এখান থেকে তোমাকে আর নির্ঝরের কাছে যেতে হবে না।তুমি আমার সাথে থাকবা।আমি তোমায় ভালোবাসি।

(সায়ন কথা বলতে বলতে বার বার অনুকে কাছে টানছিলো অনুও রেগে গিয়ে সায়নকে ঠাটিয়ে একটা চড় মারে)
-ভালোবাসা মাই ফুট!!কোই ছিলো আপনার ভালোবাসা মি.সায়ন যখন আমি ঘুমের ঘোরেও আপনাকে খুজেছিলাম??কোই ছিলেন আপনি যখন আমি আপনাকে দেখার জন্য ছটপট করেছিলাম??কোই ছিলো আপনার এই দরদ??রাতের পর রাত আপনাকে ফোন দিয়েছি আপনি ফোন তোলার ও প্রয়োজন বোধ করেন নি।।।এখন এসছেন সোহাগ দেখাতে!!
-অনু আমি!!
-আপনি কি হুম্ম কি??
-অনু আমি তোমায় সব বলছি!!
-এতো তামাশা করার পরও আপনি শান্তি হচ্ছেন না কেন??
-তামাশা?
-হুম্ম তামাশা। সব চেয়ে বড় তামাশা সেদিন হয়েছিলো।জানেন কোন দিন আমার বিয়ের আগের দিন সেদিন সারা রাত আমি বাগানে দাড়িয়ে অপেক্ষা করেছি আপনার জন্য কিন্তু আপনি আসেন নি!!
সে যাই হোক....আমি ভালো আছি খুব ভালো আছি...

(কথাগুলো বলেই অনু চলে যেতে নিলে সায়ন আবার অনুকে টেনে কাছে নিয়ে আসে)
-আমি জানি তুমি ভালো নেই....
-ছাড়ুন
-নির্ঝর খুব খারাপ অনু!!!

অনু সায়নকে ধক্কা মেরে ছুটতে থাকে....
একরকম পালিয়েই আসে সায়নের কাছ থেকে।সায়নকে কেন যেন তার অসহ্য লাগছে।বড্ড অসহ্য লাগছে।

জীবন বড্ড বেশি খেলা করছে অনুর সাথে।এখানে সবাই বড্ড স্বার্থপর যে যার নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্থ।অন্যের কথা ভাবার মতো সময়ই নেই কারো কাছে।সায়নটাও বড্ড বেঈমানী করেছে।অনুর সাথে নয় অনুর ভালোবাসার সাথে।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই এগিয়ে চলে ভীরের দিকে। অনুর চোখে জল কিন্তু মুখে হাসি।
ওখানে সবাই অানিকাকে ঘিরে ধরে কি সব করছে
অনু ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সেখানে।পাশেই নীরা দাড়িয়ে দাড়িয়ে ছবি তুলছে
-কি গো বর সোহাগী ভাবি কোই ছিলা এতোক্ষন? তোমার বর তো তোমাকে দেখতে না পেয়ে খুজে খুজে দেবদাস হয়ে গেলো!!
-কি সব বলছো?
-হুম্ম।সেই কখন থেকে তোমাকে খুজছে সে
-ওও।আছা নীরা ঐটা কি??
-কোনটা?
-ঐ যে কুলোতে ঐগুলো কি...

-ওও এই একটা কুলোতে পান সুপারী কতো রকমের মিষ্টি সাজিয়ে রেখেছে।ঐ কুলোটা আবার চারজন বিবাহিত মেয়েকে ধরে রাখতে হবে এবং বড় রা ঐ কুলো থেকে মিষ্টি নিয়ে আনিকা আপুকে খাওয়াবে ও দোয়াও করবে আর সাথে গিফ্ট দিবে!!
-তাই তুমি কি করে জানলে??
-জানতে হবে না একদিন তো আমাকেও দরতে হবে তোমার কুলো!!
-ধূর।এটা কি নিয়ম??
-হুম্ম এটাই নিয়ম। মেয়ের বিবাহিত ভাবিরা বা বিবাহিত ননদেরা এটা করে।আর জানো তো সবচেয়ে মজার কথা হলো যারা কুলো ধরে তাদেরও না কি খুব তারাতাির বাবু হয়।
-তাই নাকি??
-হুম্ম তোমার ও ডাক পরড়ো বলে।।।

কথা বলতে বলতে নীরা দাঁত বের করে হাসতে থাকে
এমন সময় কেউ একজন অনুকে ডাকদেয়
-ওও নতুন বউ তুমি ও আসো খুব তারাতারি তোমারও কোল জুড়ে আলো আসবে...

অনু প্রথমে ইতস্ত করলেও পরে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায়।অনু কাছে যেতেই অনুর শ্বাশুড়ি অনুকে ধরে নেয়।তারপর টেনে দূরে নিয়ে গিয়ে দাড় করিয়ে দেয়।
"এই মেয়ে জানো না বাজা মেয়ে মানুষদের এসব করতে নেই তাতে অনাগত সন্তনের অমঙ্গল হয়!!চুপটি করে এখানে দাড়িয়ে থাকো ভূল করেও ওখানে যাবে না বলে দিচ্ছি কিন্তু।আমি চাই না তোমার জন্য আমার আনি মার কোনো ক্ষতি হোক"

অনু অবাক চোখে শ্বাশুড়ি মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে।বোধয় বোঝার চেষ্টা করছে ওনি এসব কি বলছেন!!!

মনে মনে বার বার একটা প্রশ্নয় ঘুরছে...
"ওনি আমাকে এসব বললেন কেন।আমার জন্য আপুর ক্ষতিই বা হবে কি করে??"

-জানেন তো বেশি রাগ করলে পেট খারাপ হয়!!
-(...)
-ধূর আপনি না কেমন জানি যখন তখন হাত পা ধরে টানা টানি শুরু করে দেন!!
-(...)
-এই যে মি.গোমরা মুখো নির্ঝর চৌধুরী আমাকে তখন ওভাবে টানতে টানতে বাড়ি নিয়ে এলেন কেন?সবাই তো আজকে আনিকা আপুর বাসায় থাকবে আর আপনি শুধু শুধুই আমাকে ওভাবে ধরে বেঁধে নিয়ে চলে এলেন!!

অনু সোফায় পা গুটিয়ে বসে বসে তেতুল খাচ্ছে আর একাই বক বক করেই যাচ্ছে আর নির্ঝর নাক মুখ লাল করে চুপ চাপ বসে আছে।ভীষন রাগ হচ্ছে।
তখন নির্ঝরের মা কথাগুলো বলার পর পাশ ফিরে তাকাতেই দেখে ছেলে ঠিক ওনার পেছনে চোখ মুখ শক্ত করে দাড়িয়ে আছে।হটাৎ ছেলেকে এভাবে দেখে ওনি চমকে যান
-ইয়ে বাবু আমি ওভাবে বলতে চাি নি
-আসছি

কথাটা বলই নির্ঝর অনুর হাতটা ধরে উল্টো পথে হাটা ধরে।
-কোথায় যাচ্ছো??
-বউটা যেহেতু আমার তার সাথে জরিত সব কিছুই আমার।তার দ্বারা কোনো অমঙ্গল হলে সেটা আমার দ্বারাও হবে কারণ সে তো আমার অর্ধাঙ্গিনী....

মাকে কথাগুলো বলেই অনুর হাত ধরে টানতে টানতে বেরিয়ে আসে নির্ঝর।নির্ঝর মাও আর কিছু বলে নি।কি বলবে সে তো জানেই
" এই মেয়েটা একেবারে প্রথম থেকেই ছেলেটার গোটা মাথা খেয়ে বসে আছে।না হলে কোনো ছেলে জেনে বুঝে এমন বাজা মেয়েকে বিয়ে করে নাকি"

নির্ঝরের মা কিছু না বললেও
অনু বলেছে।সেই থেকে বলেই যাচ্ছে...
-আমরা কোথায় যাচ্ছি?কেন যাচ্ছি?আমি যাবো না
আরো কতো রকমের কথা।
আর বার বার তো নির্ঝরের কাছে শ্বাশুড়ির বলা কথাগুলোর অর্থ জানতে চাচ্ছিলো অনু।তবে প্রত্যেকবারই নির্ঝর অনুকে ধমকিয়ে চুপ করিয়ে দিয়েছে।

নির্ঝরের ধমকানিতে একটু থেমে গেলেও বাড়ি ফিরে আবার শুরু করে।
নির্ঝর অনুর কোনো কথারই উওর দেয় নি।

তবে অনুর মুখ কিন্তু থেমে নেই।বক বক করেই চলেছে।
অনু সোফা থেকে উঠে গিয়ে খাটের কিণারায় নির্ঝরের গা ঘেষে বসে পরে...নির্ঝর খাটে এক পাশে আধসোয়া হয়ে বসে ছিলো।।নির্ঝরের এই পাশে সামন্য জায়গা ছিলো অনুর তাতেই চলবে

-কি করছো কি পরে যাবে তো!!
-আপনি আমায় ধরে বসুন তাহলেই তো পরবো না।

নির্ঝর মুচকি হেসে অনুর কোমড় জড়িয়ে ধরে।
-আচ্ছা আপনি আমায় নিয়ে চলে এলেন কেন?
-বার বার এক কথা বলো না তো।ভালো লাগেছে না
-আমার ও ভালো লাগছে না...আরেকটু দেখতাম সব কিছু।আমার অবশ্য খুব ভালো লাগছিলো অদ্ভুদ কিছু নিয়ম এগুলো!!
-হুম্ম এই নিয়মগুলো দাদী খুব মানতো..আমাদের পরিবারের সবাই মানে
-ইসস্ আরেকটু থাকলেই সবাটা দেখতে পারতাম অবশ্য আমার যখন বেবী হবে তখন তো এমনিতেই দেখতে পারবো!!

কথাটা বলেই অনু জ্বিবে কামড় দেয়।মাথাটা নিচু করে নেয়।মেয়ে বেশ লজ্জা পেয়েছে।

কিন্তু এদিকে অনুর কথা শুনে নির্ঝরের বুকটা ধক করে উঠে...
"প্রত্যেক মেয়ের মধ্যেই তো একেকটা মা লুকিয়ে থাকে।বিয়ের পর সে পরিপূর্ণ মা হতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু অনু তো"

নির্ঝর অনেক বার চেষ্টা করছে অনুকে সত্যিটা বলার কিন্তু পারছে না।কথাটা গলা অবদি এসে আটকে যাচ্ছে।

নির্ঝর অনুর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সিগারেট হাতে বারান্দায় চলে যায়।আপাতোতো মাথা শূন্য হয়ে যাচ্ছে।সেই শূন্যের মধ্যে শুধু একটা চিন্তায় ঘুর পাক খাচ্ছে
"আচ্ছা অনু যখন জানতে পারবে সে কখনো মা হতে পারবে না তখন কেমন রিয়াক্ট করবে??ও কি খুব কষ্ট পাবে??
খুব কি কান্না কাটি করবে?আচ্ছা আমি ওকে সামলাতে পারবো তো??"
যেই অনু জানতে পারবে সে কখনো মাতৃত্বের সাধ পাবে না সেই মূহুর্তটা কেমন হবে এসব ভেবেই
নির্ঝর সিগারেটে কয়েক টান দেয়।

হটাৎই অনু পেছন থেকে এসে নির্ঝরকে পেছন থেকে ঘুরিয়ে ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।হুট
সিগারেটের ধোয়া অনুর গলায় চলে যায়...
-উহু উহু...ইস্স মি.চৌধুরী আপনি এসব ছাই পাশ গিলছিলেন কেন??
-অনুকে ধরে এরকম কেউ করে??
-আপনি উল্টো দিকে ঘুরে এসব খাচ্ছেন সেটা কি আমি জানতাম??
-সরি
-জানেন তো আমার ধৌয়াই খুব এলার্জি!!
-আমি সরি আসলে
-এতো আসল নকল আমি বুঝি না হু...(অনু মুখ বাকি চলে যেতে নিলে নির্ঝর অনুর হাত ধরে টান দেয় তারপর মুখটা অনুর দিকে বাড়িয়ে দেয়)
-দেখুন আমি আপনার ওমন পোড়া ঠোটে চুমু খেতে পারবো না।
আগে জানতাম না তাই এখন যখন জেনে গেছি তখন....
-তখন কি?
-ভুল করেও আর....নয়(ঠোটের দিকে ইশারা করে)

অনু নিজেকে ছাড়িয়ে ঘরে চলে আসে আর নির্ঝর মুচকি হেসে দাড়িয়ে আছে।
ভালোবাসার শুরুটা তো এমনই হয়!!কিছু টক ঝাল আর কিছু মিষ্টি মুহূর্ত!!

আজ সারাদিন আকাশটা মেঘলা ছিলো তবে এখন আকাশে কোনো মেঘ নেই। আজ পূর্ন চন্দ্র।চারদিকে চাঁদের আলো ছড়িয়ে পরেছে।নির্ঝরের হৃদয়ের মতো আকাশের মেঘগুলোও একটু একটু করে সরে যাচ্ছে।

নির্ঝর এক দৃষ্টিতে আকাঁশ পানে তাকিয়ে আছে।মুখে এক তৃপ্তির হাসি।অনু ভালোবাসতে শুরু করেছে নির্ঝরকে।এই দিনগুলোর জন্যয় তো অপেক্ষা করছিলো সে।।

হটাৎই নির্ঝরের ফোন বাজে উঠলো।নির্ঝর ঘরে উকি দিয়ে দেখে অনু নেই ওয়াশ রুমে গিয়েছে।নির্ঝর গিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে সায়নের নাম্বার।হাজার অনিচ্ছা সত্তেও ফোনটা তোলে নির্ঝর।

-হ্যালো!!
-বাহ্ রে নির খুব ভালো খেলা খেললি আমার সাথে!!
-কি বলছিস এসব মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে?
-হ্যা আমার মাথা তো খারাপ হবেই শুধু আমার কেন তোর মতো বেঈমান,স্বার্থপর ভাই না না নোট ওনলি ব্রাদ্যার বাট অলসো বেস্ট ফ্রেন্ড যার থাকবে তার মাথা ত....তো খারাপ হবেই..ই

সায়নের গলার আওয়াজ নির্ঝরের কেমন লাগছে।কথাগুলো জড়িয়ে যাচ্ছে
-তুই কি ড্রাংক??তুই আবার খেয়েছিস??
-এমন ভব করছিস যেন তুই জীবনে খাস নি!!এখন অনুর সামনে ধোয়া তুলসি পাতা সাজছিস।
-সান মুখ সামলে কথা বল...
-মুখ সামলানোর কি দেখছিস হ্যা।বেঈমান কোথাকার অনুর সামনে আমাকে ভিলেন বানিয়ে দিয়ে নিজে হিরো সাজছিস??
-মাথা ঠিক নেই তোর!!
-সব ঠিক আছে....কি খাওয়াছিস তুই আমার গ্রার্লফ্রেন্ডকে যে সবসময় তোর নাম জপতিছে??
-মানে??
-এই বেঈমান তোর কি গার্লফ্রেন্ডের অভাব পরছে যে এতো মেয়ে থাকতে আমারটার দিকেই তোর নজর পড়লো....
-বাড়ি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়....
-নির্ঝর চৌধূরী আমিও দেখবো তুমি কতো দিন আমার জিনিস নিজের কাছে রাখতে পারো!!
-টুট টুট টুট

নির্ঝর ফোনটা কেঁটে দিয়েছে।সায়ন ড্রাংক এখন ওর সাথে কথা বলা আর কলা গাছের সাথে কথা বলা দুটোই সমান!!!

শুধু শুধু ওর সাথে কথা বলে রাগ বাড়ানোর মানেই হয় না।।।
নির্ঝর ফোন কাটলেও সায়ন থেমে নেই বার বার নির্ঝরকে ফোন করেই যাচ্ছে।নির্ঝর ফোনটা ওফ করে দেয়।নির্ঝর বেশ কিছুক্ষন বারান্দায় থেকে ঘরে পা বারাতেই দেখে অনু মাথায় টাওয়াল পেঁচিয়ে আয়নার সামনে বসে আছে।

নির্ঝর অনুর কাছে এগিয়ে যায়।
পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে...
-এই সময় গোছল করলা যে??
-ইচ্ছা করলো তাই
-হটাৎ?
-এমনি!!
-ওওও

নির্ঝর হুট করেই অনুকে কোলে তুলে নেয়।
-বাহ্
-কি??
-আমার কিন্তু আপনার কোলে উঠতে ভালোই লাগে!!
-লাগাটাই স্বাভাবিক!!আমি যে তোমার বর

-হু(মুখ ভেংচি কেটে)
-অনু
-হুম্ম
-চলো না ছাদে যাই।আজ সারা রাত আমরা চাঁদ পোহাবো।
-ওকে ডান।তবে আমায় কোলে করেই নিয়ে চলুন।আমার খুব ইচ্ছে ছিলো সা..

নির্ঝর অনুকে কোলে করেই সিড়ির দিকে হাটা ধর
-অনু তোমায় অনেক কিছু বলার আছে আমার যা তুমি জানো না....
-কি????
-অনেক কিছু..

একটু মন দিয়ে পড়ুন--
পরবর্তী অংশ অর্থাৎ সবগুলো পর্ব এই I'd তে দেয়া হবে, পুরো গল্পটি পড়তে রিকুয়েস্ট দিয়ে সাথেই থাকুন। ভালো ভালো গল্প পেতে এই আইডির সাথেই থাকুন!অনেক সময় গ্রুপে গল্প পোস্ট হয় না। তাই গ্রুপে গল্প পেতে সমস্যা হলে ফলো অথবা রিকুয়েস্ট দিয়ে রাখতে পারেন ধন্যবাদ।

-অনু যদি তোমাকে তোমার স্বামী বা প্রাক্তনের মধ্যে যেকোনো একজনকে বাছতে হয় তুমি কাকে বাছবে??
-মানে?
-হয় সায়ন নয় আমাকে দুজনের মধ্যে যেকোনো একজনকে তোমায় বাছতে হবে অনু আর অপর জনকে সারা জীবনের মতো ভূলে যেতে হবে !!!

মোবাইলের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বললো নির্ঝর।তারপর ফোনটা অনুর দিকে ছুড়ে মেরে উঠে গেল।।।
অনু চোখ বড় বড় করে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।।

নির্ঝরের এমন ব্যবহারের কোনো মানেই খুজে পাচ্ছে না অনু।লোকটা তো একটু আগেই ভালো ছিলো।ঠিক ভাল বলা যায় না বলা যায় বেশ রোমান্টিক মুডে ছিলো।
অনুকে কোলে করে ছাদে নিয়ে এলো।ঠিক তার পর পর ফোনে টুং করে একটা মেসেজ আসলো তারপর হুট করে কি হলো কে জানে....

"আচ্ছা মি.চৌধূরী কি এই কথাগুলো বলবে বলেই আমাকে ছাদে আনলো?
কি জানি বাবা লোকটার মতিগতি বোঝা বড় দায় এই রোদ্দুর তো এই মেঘলা আকাশ।যেমন ওনার মনের আকাশে মেঘ জমতেও সময় লাগে না তেমন মেঘ সরে যেতেও সময় লাগে না"

অনু মনে মনে কথাগুলো বলে একাই হেসে ওঠে।তারপর সিড়ি বেয়ে গুটি গুটি পায়ে নির্ঝরের কাছে যায়।

অনু ঘরে এসে দেখে নির্ঝর দু হাতে মুখ ঢেকে বসে আসে।
অনু ধীর পায়ে নির্ঝরের কাছে এসে নির্ঝরের গা ঘেষে বসে পড়ে
-আপনার কি কিছু হয়েছে মি.চৌধূরী??
-(...)
-কি হলো বলুন না!!
-(....)
-উফ্ফ

নির্ঝর অনুর দিকে না তাকিয়ে প্রশ্ন করে
-আনিকা আপুর বেবি সওয়ারে তো সায়নের আসার কথা ছিলো না তুমিই সায়নকে ওখানে ডেকেছিলে তাই না??

নির্ঝরের এমন প্রশ্নে অনু বোকার মতো তাকিয়ে আছে।নির্ঝর অনুর থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বসে।অনু এক দৃষ্টিতে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটার চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে

নির্ঝর নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে শুরু করে
-কেন ডেকেছিলে সায়নকে??চলে যেতে চেয়েছিলে বুঝি??
-কি??আমি....আমি ডাকি...
-আচ্ছা তুমি সায়নকে এতোটাই ভালোবাসো যে আমার এতো ভালোবাসা তোমার চোখেই পড়ে না??
-আমি সায়নকে ডাকি নি!!
-তাই বুঝি???
-হ্যা আর....
-আর এতো দিনপর এক্স বফকে দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারো নি তাই না!! সোজা গিয়ে তার বুকে ঝাপিয়ে পরলে????
-মানে....

নির্ঝর বসা থেকে উঠে গিয়ে ফোনে মেসেন্জার লগ ইন করে অনুর সামনে ফোনটা ছুড়ে মারে।
-দেখো
অনু ফোনটা হাতে তুলতেই চমকে যায়।
এগুলো তো ছবি সায়ন আর অনুর ছবি।সব কটা ছবিতে সায়ন অনু বেশ কাছাকাছি ছিলো।
একটা ছবিতে অনুকে সায়ন জড়িয়ে ধরে রেখেছে।আরো বেশ কিছু মুহূর্তের ছবি!!

-মি.চৌধূরী এই ছবিগুলো আজকে সন্ধ্যের আমি আপনাকে বলছি সব কিছু...আজকে হটাৎ করেই

অনুকে থামিয়ে দিয়ে..
-থাক আমি তোমার কাছে কোনো ব্যাখ্যা চাইবো না।জানোতো অনু দুইটা জিনিস ব্যাখ্যাহীন হয় এক ভালোবাসা আর এক প্রতারনা।তবে তুমি ভেবো না আমি তোমায় প্রতারক বলছি।তুমি কিছু ভুল করো নি ভুল তো আমি করেছি কি ভূল করেছি জানো??
-(...)
-তোমার জোড় করে বিয়ে করে।তোমায় ভালোবাসার জন্য জোড় করে।আমি জানি তুমি আমাকে বাধ্য হয়েই বিয়ে করেছিলে কিন্তু....আমি অন্ধ ছিলাম তোমায় ভালোবেসে।সব ভুল আমার!!আমি হয়তো তোমায় ভালো রাখতে পারি নি তাই তো তুমি
থাক সেসব কথা তুমি যদি চাও সায়নের কাছে চলে যেতে পারো আমি বাঁধা দেবো না। সত্যি তো জোড় করে ভালোবাসা হয় না!!

কথাগুলো বলেই নির্ঝর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।অনু সেখানেই ঠায় দাড়িয়ে আছে।নির্ঝরের কথাগুলো অনুর বুকে গিয়ে বিঁধছিলো।
ছবিগুলোর যেমন ব্যাখ্যা নির্ঝর সাজিয়েছে তেমন কিছুই তো ঘটেনি।
" তখন সায়নই তো হুট করে কোথা থেকে চলে এলো,সায়নই তো বার বার কাছে আসছিলো।সায়নই তো জোড় করছিলো তার সাথে যাবার জন্য আমি গেছি!! যাই নি তো,যাওয়ার হলে তো কোবেই চলেলে যেতাম আবার কি আপনার বাড়িতে থাকতাম না কি ফিরে আসতাম"

অনু ফোপাতে ফোপাতে তোতা পাখির মতো একা একা বুলি গুলো আওরাচ্ছে তবে সেগুলো শোনার জন্য নির্ঝর নেই।।।
সে তো কখন রাগ করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছে!!

আকাশটাতে একটু একটু করে মেঘ জমতে শুরু করেছে।একটু আগের সেই ঝলমলে চাঁদটা মেঘের আড়ালে ঢাকা পরেছে।একটু পরই বৃষ্টির দু এক ফোটা পড়তে শুরু করে।এদিকে অনুর গাল বেয়েও নোনা জ্বলের বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে।
কিছু সম্পর্ক বড্ড জটিল হয়।সম্পর্কগুলোর মাড় প্যাচ বোঝা কঠিন।সম্পর্কের ভিত্তিগুলোও বড্ড নড়বড়ে।সেখানে পাহাড় সমান ভালোবাসার থাকলেও সেই পাহাড়ের ভিত্তি গড়া নরম কাঁদা মাটি দিয়ে।কখন যে সব ধসে পড়বে কে জানে, য়েমন আমাদের সম্পর্কটা....।।এখানে ভালোবাসা থাকলেও সেই ভালোবাসা ঘিরে কোনো সুখ নেই।।আসলে সম্পর্কের মাঝে জটিলতা রাখতে নেই!!

অনু কথাগুলো ভাবছিলো আর তার দুচোখ বেয়ে পানি পরছে!!

"এক সায়ন যে কি না হুট হাট করেই জীবনের মাঝ রাস্তায় এসে একা দড় করিয়ে চলে গিয়েছিলো।চলে গিয়েছিলো না কি পালিয়ে গিয়েছিলো কে জানে।সেই মাঝ রাস্তায় একা আমি হুট করেই কেউ একজন হাতটা টেনে ধরলো।সেই একজন হলো নির্ঝর।আর এতোদিন পর সায়ন আবার ফিরে এসেছে সব কিছু এলোমেলো করে দিতে!!

কিন্তু ঐ ছবিগুলো কে পাঠালো??
সায়ন??না কি অন্য কেউ??কেন পাঠালো?? কি চায় সে??"

কথাগুলো অনুর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আর ভীষন কান্না পাচ্ছে।বৃষ্টির সাথে প্রতিযোগিতা করে সমান তালে অনুর চোখ বেয়ে নোনা জলের বন্যা বইছে।

"সত্যিই মায়া জিনিসটা কেমন স্বার্থপর।একবার হৃদয়ে গেথে গেলে ঠিক ভুল বন্ধু শত্রু কিছু মানে না শুধু নিজের কথা ভাবে আর রাত দিন তাকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে।সত্যিই মায়া যে বড্ড স্বার্থপর"

অনু ঘরে এসে ফোনটা হাতে তুলে নেই...
নির্ঝরকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয় কিন্তু নির্ঝর ফোন তুলছে না।বার দুয়েক ফোন দিওয়ার পর তৃতীয়বারের বেলায় নির্ঝরের ফোনটা সুইচট ওফ বলে!!

অনু কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পরে।
আজকে নির্ঝরের জন্য বড্ড বেশি কষ্ট হচ্ছে। নির্ঝরের কথাগুলো বিষের মতো শুনাচ্ছিলো।
এটা কি ভালোবাসা নাকি অন্যকিছু!!

বেশ কিছুক্ষন পর বাড়ির কলিং বেলটা বেজে ওঠে অনু ছুট লাগায় দরজা খুলতে...!!
হয়তো নির্ঝর এসেছে....

দরজা খুলতেই অনু অবাক সিমি নির্ঝরকে ধরে রেখেছে আর নির্ঝর কেমন টলমল করছে।দুজনেই ভিজে একাকার।
অনু গিয়ে নির্ঝরকে ধরতে গেলেই সিমি থামিয়ে দেয়
-তোমাকে ধরতে হবে না আমি পারবো তুমি দরজাটা বন্ধ করে দাও!!না আসলে নিরতো ভীজে গেছে ওকে ধরলে তুমিও ভিজে যাবে তাই বললাম আর কি!!
-হুম্ম...(ভ্রু কুচকে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে)
অনু দ্রুত গিয়ে দরজা বন্ধ করে এসে নির্ঝরকে ধরে।

ঘরে নিয়ে গিয়ে নির্ঝরকে বসিয়ে দেয়।নির্ঝরের হাত ঠান্ডা হয়ে গেছে।
-আচ্ছা অনু তোমাদের মধ্যে কি কোনো সমস্যা হয়েছে??
-জ্বি মানে!!
-বুঝতে পেরেছি।জানো তো নিরের ছেলেবেলার স্বভাব যখন ও রেগে যায় তখন কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা রাস্তায় হাটতে থাকে।ঝড়, বৃষ্টি, রোদ, দিন, রাত কিছুই মানে না।আগে তো আমার সাথে ঝগড়া হলেই...দিন কি রাত কি বেরিয়ে যেতো!!

অনু কৌতুহলী দষ্টিতে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে
-অনু তুমি বরং নিরের কাছে বসো আমি চেন্জ করেই আসছি...

অনু নির্ঝরের কাছে গিয়ে নির্ঝরকে ধরতেই
-লাগবে না
-চলুন চেন্জ করে নিবেন

নির্ঝর উঠে দাড়াতেই টলমল করছে...অনু ধরতে গেলেই
-বললাম তো ধরতে হবে না পারবো!!
-এতো ক্ষন জাস্ট ফ্রেন্ড ধরেছিলো তখন তো এতো সমস্যা হয় নি যতো সমস্যা আমি ধরলেই নাকি।।
-😒😒😒

(কথাগুলো বেশ জোড় দিয়ে বললো অনু)
অনু গিয়ে নির্ঝরকে ধরে ওয়াশরুৃমে নিয়ে গিয়ে চেন্জ করিয়ে শুয়ে দিলো।
নির্ঝরের জ্বর আসছে গা কাপিয়ে জ্বর আসছে।
জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে।
একটু একটু জ্বর বেরেই চলেছে
অনু কি করবে বুঝতে পারছে না।উঠে গিয়ে নির্ঝরের মাথায় পানি দিয়ে গা মুছিয়ে দেয়।বার বার মাথায় ভেজা কাপড় দিয়ে মিছিয়ে দিচ্ছে...

-অনু তুমি সায়নের কাছে চলে যাও!!
হটাৎ সিমির কথায় অনু একরকম চমকে যায়।
-জ্বি মানে??
-ভাবছো সায়নের কথা কি করে জানলাম??
-হু
-তুমি আমায় চিন্তে পারো নি আমি সায়নের বন্ধু সৌমিতা।তোমার সাথে তো বার কয়েক ভিডিও কলে কথা হয়েছিলো মনে নেই
-হুম।
-অনু তুমি শুধু শুধু নির্ঝরকে কষ্ট দিচ্ছো।ওকে এভাবে ঠকিয়ো না সায়ন যেমন তোমায় ভালোবাসে নির্ঝরও তোমায় ভালোবাসে।আর তুমি তো সায়নকে ভালোবাসো তাহল শুধু শুধু নির্ঝরের জীবনে থেকে ওকে এভাবে কষ্ট দিচ্ছো কেন??
-আমি সায়নকে ভালো
-ভালোবাসো তাই তো।বেশ তুমি চলে যাও আমি নিরকে বোঝাবো শুধু শুধু এভাবে চারটে জীবন নষ্ট করো না!!
-চারটে
-হুম্ম সায়নের বিয়ের কথা হচ্ছে।কিন্তু বলেছে তোমাকে ছাড়া কাউকে জীবনে জায়গা দিবে না অনু তুমি ভেবে দেখো কি করবে!!আমার মনে হয়!!
ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিও..

সিমি কথাগুলো বলেই চলে যায়....
অনু ধীর পায়ে নির্ঝরের কাছে চলে যায়। জ্বরটা বোধয় বেরেছে।অনু নির্ঝরের কপালে হাত দিতেই নির্ঝর হাতটা সরিয়ে নেয়।
-চলেই যখন যাবে তখন শুধু শুধু মায়া বারাচ্ছো কেন??তোমার মায়া আমায় বড্ড পোড়াবে।যে মায়ার বাধন রাখতে পরবে না সে বাধনে জড়িও না আমায়!!!

সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে "নীল ক্যাফের ভালোবাসা" পেজে পাবেন।

নির্ঝর চোখ বন্ধকরেই কথাগুলো বলে।অনুর হাত এখনো নির্ঝরের হাতের মধ্যে।নির্ঝর নিজের হাতটা আলগা করতেই অনু আরেক হাত দিয়ে নির্ঝরের হাতটা শক্ত করে ধরে।
নির্ঝর কি বুঝলো কে জানে সেও অনুর হাতটা শক্ত করে ধরে নেয়।
তাদের এইটুকু মুহূর্ত জানান দিচ্ছে এই সম্পর্ক বৈধ সম্পর্ক এই বন্ধন বৈধ ভালোবাসার বন্ধন এই সম্পর্ক ভাঙ্গা এতো সহজ নয়।

হটাৎই নির্ঝরের ফোনটা বেজে উঠে
অনু দেখে আননোন নাম্বার।
অনু ফোনটা কানে ধরতেই
অপর পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠে....

-অনু প্লিজ ফিরে এসো!
-সায়ন তুমি বার বার কেন ভুলে যাচ্ছো এখন আমি বিবাহিতা!!

অনু নির্ঝরের পাশে গুটিশুটি হয়ে বসে ছিলো।জ্বরটা সবে একটু কমেছে।নির্ঝরও ঘুমিয়ে আছে হটাৎই নির্ঝরের ফোনটা বেজে উঠে
অনু দেখে আননোন নাম্বার।বেশ কয়েকবার বাজার পর
অনু ফোনটা কানে ধরে সাথে সাথেই
অপর পাশ থেকে কেউ একজন "হ্যালো বলে উঠে"
অনুর বুঝতে বাকি নেই কে ফোন করেছে!!
অনু একবার নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে বারান্দায় চলে যায়।

-অনু..
-(...)
-প্লিজ অনু ফোন রেখো না!!
-সায়ন কি চাই তোমার?কেন বার বার..জ্বালাচ্ছো আমাকে।
-তোমাকে চাই!!অনু প্লিজ ফিরে এসো!!
-সায়ন কখনো শুনেছো সব মানুষের সব চাওয়া পুরোন হয়!!হয় না সায়ন।জীবন সবাইকে সব কিছু দেয় না,সবার জীবনের সব সমীকরণ মিলে না।আমি আমার জীবনের সমীকরনটা মিলাতে চাইছি তবে তোমার সাথে নয় মি. নির্ঝর চৌধূরীর সাথে!!আমি বাঁধা পরে গেছি এক পবিত্র সম্পর্কের মায়াজালে।

-তুমি নির্ঝরের সাথে ভালো থাকবে না। ও একটা ঠকবাজ ও তোমাকে ঠকিয়েছে আমাকে ঠকিয়েছে আর আমাদের
-চুপ..শুনতে চাই না আমি কোনো কথা তার সম্পর্কে কারণ সে আমার #স্বামী।ভালো হোক মন্দ হোক আমারই তো।
-ওও তার মানে অন্য মেয়েদের মতো নির্ঝর তোমাকেও পট্টি পড়িয়ে দিলো!!বাহ্ নির্ঝর বাহ্
-রাখছি...
-আচ্ছা ও কি খাইয়েছে তোমাকে যে এমন স্বামী স্বামী করছো??
-মানে??
-মানে দুদিন আগেও নাকি শুধু আমি আমি করতে এখন হটাৎ করেই! আচ্ছা ও তোমায় কি পানি পড়া টানি পড়া খাইয়েছে যে তুমি।
-সায়ন প্লিজ...(বেশ জোড়ে ধমকের সুরে)
-অনু
-রাখছি!!
-অনু তোমায় অনেক কিছু বলার আছে।নির্ঝর যা যা করেছে সব বলার আছে তোমায়।
-আমার কিচ্ছু শোনার নেই
-অনু
-টুট টুট টুট....

নির্ঝর ঘুমাচ্ছিলো বলে অনু ফোনটা নিয়ে বারান্দায় চলে গিয়েছিলো।কথা বলে ঘরে আসতেই দেখে নির্ঝর বিছানায় হেলান দিয়ে সুয়ে আছে....
-কি হলো উঠে পরলেন যে জ্বরটা তো এখনো বোধয় কমে নি!
-কথা হলো??
-কি??
-কখন নিতে আসছে ও তোমায়?আজকেই না কি কাল??
-আমাকে কে নিতে আসবে?
-কে আবার সায়ন!!
-নিতে আসতে হবে কেন যেতে চাইলে আমি একাই যেতে পারবো আমার কি পা নেই না কি আমি হাটতে পারি না!! (মুচকি হেসে)
-হুম্ম খুব আছে।এক পা বেরিয়ে দেখো পা ভেঙ্গে ঘরে ফেলে রাখবো
(অনুর হাত ধরে কাছে টেনে এনে)
-বা রে একটু আগেই না বললেন যেতে চাইলেই না কি যেতে পারবো আপনি বাঁধা দেবেন এখন কি হলো??
-ধূর...
-আপনি তো দেখছি কথা উল্টাচ্ছেন।মি.নির্ঝর চৌধূরী একটা কিন্তু মোটেও ভালো কাজ নয় যা পারবেন না তা বলতে নেই।
-তুমি সত্যি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাও??
-দেখি দেখি
-কি?
-জ্বরটা তো একটু কমেছে!!
একটু বসুন কিছু খেয়ে ঔষুধ খাবেন!!
-খাবো তো।
অনু উঠতে গেলে....
কোই যাও(অনু উঠতে গেলে)
-খাবার আনতে!!
-লাগবে না দাও
-কি?
-তোমার ঠোট!!
-কিহ্
-হুম্ম
-অসুখ হয়ে মাথাটা আপনার গেছে!!
-ধূর...
(নির্ঝর একটু একটু করে অনুর কাছা কাছি যেতেই হুট করে কোথা থেকে সিমি চলে আসে।হাতে স্যুপের বাটি)

সিমি আসতেই অনু নির্ঝরের থেকে দূরে সরে যায়।
-ইয়ে সরি তোমাদের ডিসটার্ব করলাম!
-না না সিমিআপি আসো।তোমার হাতে কি?
-খাবার!!
-ওও (ভ্রু কুচকে)
-নির আমি তোকে খাইয়ে দিই?? দেখ ভালোলাগবে

সিমির কথা শুনে অনু চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে।

অনুর চোখে চোখ পরতেই নির্ঝর একটা চোখ টিপ দেয়।
-হ্যা হ্যা তুই আমাকে খাইয়ে দে সমস্যা নেই
অনু রাগী চোখে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে সিমি নির্ঝরকে খাইয়ে দিচ্ছে।

অনু রাগে গজগজ করতে করতে উঠে যায়।কিন্তু পেছন থেকে সিমি ডাক দেয়।
-অনু কি সিদ্ধান্ত নিলে??তুমি যা ভেবেছো নির্ঝরের সামনে বলো ভয় নেই আমি আছি!!
-কি সম্পর্কে??(অবাক হয়ে)
-সায়ন সম্পর্কে!!তুমি কি সায়নের কাছে যেতে চাও??
-নাহৃ অনু কোথাও যাবে না।ও আমার সাথেই থাকবে(নির্ঝর বেশ জোড় দিয়ে কথাটা বলে)
-নির!!
-তুই এখন যা আমার খাওয়া হয়ে গেছে
-নির এভাবে জোড় করে....
-বললাম তো যা!অনু সিমি চলে গেলে দরজাটা বন্ধ করে দাও!!
-হু
সিমি নির্ঝরের দিকে ছলছল চোখে একবার তাকিয়ে এক ছুটে ঘর থেকে চলে যায়।অনু থম মেরে দাড়িয়ে আছে।সিমির চোখের ভাষা নির্ঝর না বুঝলেও অনুর কাছে কেমন কেমন লাগছে।সিমির চোখে অন্য কিছু ছিলো নির্ঝরের জন্য।অনুর মনটা খচখচ করছে।
হটাৎই নির্ঝর ডেকে বসে
-এই মাঝ রাতে এভাবে দাড়িয়ে আছো কেন?
-না মানে!!
-ঘুমিয়ে পড়ো মাঝ রাতেরও মাঝরাত হয়ে গিয়েছে।
-অনু মুচকি হেসে নির্ঝর পাশে শুয়ে পড়ে।
নির্ঝর জ্বর কমে গেছে।তবে গা টা ছ্যাত ছ্যাত করছে।অনু পাশে শুতেই নির্ঝর অন্য পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে।
-এই যে শুনছেন??
-হুম্ম।কি হলো?
-আমাকে একটু জড়িয়ে ধরবেন না হলে আমার ঘুম আসবে না।ইয়ে মানে অভ্যেস হয়ে গেছে।
নির্ঝর মুচকি হেসে অনুকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে রাখে।
-অনু
-হু
(কিছুক্ষন চুপ থেকে নির্ঝর বলে উঠে)
-আমায় ছেড়ে যেও না!!
-অনু...অনু(সে তো ঘুমিয়ে পরেছে)

সকালে ঘুম থেলে লাফিয়ে উঠে।ঠিক সকাল বললে ভুল হবে সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে শুরু করেছে।ঘড়িতে তখন এগারোটা বেজে বিশ মিনিট।নির্ঝর এখনো ঘুৃমাচ্ছে।
অনু ঝটপট উঠে নিচে যেতেই দেখে সবাই চলে এসেছে।
সবাই দুপুরের রান্না বান্নায় ব্যস্ত।
অনু রান্না ঘরে যেতেই দেখে অনুর শ্বাশুড়ি চোখ মুখ কালো করে কাজ করছে।অনুকে দেখে দপকরে তার চোখ দুটো জ্বলে উঠে
-কি চাই এখানে?
-না আমি!
-যাও যাও নিজের ঘরে যাও রান্না ঘরে কেন এসেছো তোমি চাইলে আমার ছেলে তোমার জন্য দশ জন দাসী বান্দি রেখে দিবে
-মা আমি আসলে
-খবর দার আমায় মা বলবে না।যে মেয়ের সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা নেই সে এসেছে আমায় মা ডাকতে
-চুপ চাপ রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে যাও।
-আপনি আমায় পছন্দ করেন না কেন?কি করেছি আমি?
-না আমি তোমায় পছন্দ করি না তোমাকে আমার ছেলের বউ বলেও মানি না।আর মতো বাজা মেয়ে মানুষকে কেই বা নিজের ছেলের বউ বলে মানে। মেয়ে মানুষ অথচ সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা নেই সে এসেছে আমার ছেলের বউ হতে।অলক্ষী মেয়ে মানুষ।আমার ছেলেকে রূপের জালে ফাসিয়ে...যাও দূর হও আমার চোখে সামনে থেকে।

অনুর শ্বাশুড়ি একদমে কথাগুলো বলেই চলেছে।তবে অনুর কানে কোনো কথায় ঢুকছে না তার মস্তিস্ক এখন একটা প্রশ্নের মানে খুজতে ব্যস্ত।
"শ্বাশুড়ি মা তাকে বন্ধ্যা বললো কেন??"
-এই মেয়ে(ধমকের।সুরে)

অনু চমকে যায়...
-হ্যা... মা.. না.... মানে
-এখানে হা করে দাড়িয়ে আছো কেন?যাও বেরিয়ে যাও ঘরে গিয়ে আমার ছেলেকে ইনিয়ে বিনিয়ে আমার সম্পর্কে লাগাও।যাতে আমি তার চক্ষূ শূল হই।এমনি তেও তো তুমি এসব ভালোই জানো!

অনু চোখের পানি ফেলতে ফেলতে মাথা নিচু করে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে পরে।দু চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পরছে। বাবা মা কোনো দিন অনুর সাথে একটু জোড়ে কথা বলেনি সেই অনুকো শ্বাশুড়ি এতোগুলে.....

তবে এতোগুলো শব্দের মাঝে একটা শব্দ অনুর মনে গেথে গেছে....
"বাজা"
"কিন্তু ওনি আমাকে এমন একটা কথা বললেন???"

চলবে.....
পরের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.