Header Ads

Header ADS

রহস্যময় স্বামী নামক এক অজানা চরিত্র! পার্ট ৫


আগের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-অনু তুমি মন খারাপ করো না।আসলে অ্যান্টি তোমাকে নিয়ে প্রথম থেকেই অ্যাপসেট।আসলে যে মেয়ে মা হতে অক্ষম একজন মা হয়ে সেই মেয়েকে নিজের ছেলের লাইফে এক্সেপ্ট করাটা কষ্টকর।

অনু হা করে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।অনু তখন শ্বাশুড়ির বলা কথাগুলো শুনে কাঁদতে কাঁদতে ঘরে চলে আসে।কিন্তু নির্ঝর ঘুৃমোচ্ছে।তাই ঘর থেকে বের হতেই সিমি অনুকে হাত ধরে টেনে বাহিরে নিয়ে যায়।
-মানে সিমিআপি তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না!!
-ওও নির তোমায় কিছু বলে নি তাই না??থাক আমি ও না হয় না বলি!
-না না তুমি বলো...কি হয়েছে?? কেন এরকম বলছো তোমরা?
-আসলে অনু।আমার বলতে খারাপই লাগছে কিন্তুু..তুমি কখনো মা হতে পারবে না।সায়নের সাথে আকদের দিন ডক্টর তোমার পরিবারকে এসব জানায় আর তাই....!!কিন্তু সায়নের এতে কোনো সমস্যা ছিলো না।সমস্যাতো তৈরী করেছিলো অ্যান্টি মানে সায়নের মা।সেই সায়নকে আর বিয়েটা করতে দেয় নি।
(এক নিশ্বাসে গড়গড় করে কথাগুলো বলে দম নিলো সিমি)

কথাটা শোনার পর অনুর যেন গোটা পৃথিবী তোলপাড় হতে শুরু করে।কি শুনছে ও এসব!!
অনুর চোখ দিয়ে টুপটুপ করে বৃষ্টির মতো পানি পরছে।কি বলবে বুঝতে পারছে না।শুধু শান্ত চোখে সিমির দিকে তাকিয়ে আছে।
-তুমি কি আমার সাথে মজা করছো??
-উহু সব সত্যি অ্যান্টি তো নির্ঝরকে বিয়েটা করতেই দিবে না কিন্তু নির্ঝর....

অনু চুপচাপ মুর্তির মতো দাড়িয়ে আছে।এসব কি সত্যি?? তারমানে এই কারণে সায়ন বিয়েটা করেনি??মি.চৌধূরীও তো এতোদিন আমাকে কিচ্ছু বলে নি।কিন্তু কেন?ওনি কেন আমায় এগুলো বলেন নি??বাবা মা ভাইয়া ভাবি কেউই তো কিছু বলে নি??সিমি কি মিথ্যে বলছে না কি সত্যি বলছে??
অনু কাঁদতে কাঁদতে বাগান থেকে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।

নির্ঝর বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ছিলো।অনুকে দেখে একটু উঠে বসে
-মি.চৌধূরী আমি কি সত্যিই কোনো দিন মা হতে পারবো না???আমিকি ইস্যুলেছ??

অনুর কথায় নির্ঝর অবাক চোখে তাকায়।হটাৎ এরকম সময় অনুর মুখে এই কথাটা শুনবে নির্ঝর মোটেও আশা করে নি!!
-মানে??
-মানে বুঝতে পারছেন না??আপনি তো সব জানেন আমাকে বলেন নাই কেন??
-আমি চাই নি তুমি কষ্ট পাও
-এখন আমার খুব মজা লাগতিছে তাই না??

অনু কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়ে।নির্ঝর এগিয়ে যায় অনুর কাছে।
নির্ঝরকে কাছে পেয়ে অনু দু হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।।।
এনিয়ে আর একটি কথাও বলেনি অনু।কি বলবে??বলার তো কোনো ভাষাই নেই।প্রত্যেক মেয়েই তো মাতৃত্বের সাধ পেতে চায়।কিন্তু অনু সেটা পাবে না।আজ অনুর কাছে গোটা জীবনটায় বিষাধময় লাগছে।
নির্ঝরকে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করছে তবে কথাগুলো গলায় আটকে যাচ্ছে।সব কষ্ট একসাথে দলা পাকিয়ে আর মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।
সেই মুহূর্তে অনু নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে শুধু একটা কথায় বলেছিলো....
-নির্ঝর আমি মা হতে চাই!!

নির্ঝর অনুকে শক্ত করে বুকের মধ্যে আকড়ে ধরেছিলো।অনুর কথা প্রতি উওরে নির্ঝর শুধু এইটুকুই বলেছিলো
-আমার শুধু তোমাকে চাই।আল্লাহ যেমন আমার ইচ্ছে পুরোন করেছে তেমন হয়তো তোমায় ইচ্ছেও পুরোন করবে।

অনুর কাছে এখন সবটা পরিষ্কার সায়ন কেন সেদিন হাসপাতাল থেকো চলে গিয়েছিলো বিয়েটা আর করে নি।হয়তো অনুর এতো বড় দূর্বলতা সে মানতে পারে নি।তাই পালিয়ে গিয়েছিলো।
প্রেমিকার এতো বড় অপারগতা হয়তো সায়নের মতো প্রেমিক মানতে পারে নি।কিন্তু নির্ঝর মেনে নিয়েছে।মেনে নিয়েই তো বিয়েটা করেছে।
নির্ঝর বিষয়টা মেনে নিয়েছে না কি মানিয়ে নিয়েছে এ নিয়ে অনুর মনে বড্ড সন্দেহ ডানা বাদে।

-আচ্ছা নির্ঝর আপনি বিয়ের আগে সবটা জানতেন??
-কোনটা??
-আমি ইস্যুলেছ??
-হুম্ম
-সব জেনে কেন বিয়েটা করলেন??
নির্ঝর মুচকি হেসে জবাব দেয়
-মানুষ তো অনেক কিছুই চায় সব কি আর একসাথে পায়।আমি যা পেয়েছি তা নিয়েই ভালো আছি।
অনু মাথা নিচু করে নেয়
-কিন্তু আমি চাই।ছোট্ট ছোট্ট হাত পা নিয়ে খেলতে চায়। নাদুস নুদুস একটা বেবি যে আমাকে মা বলে ডাকবে।ওর তুলতুলে গাল ধরে আদর করতে চাই
-আল্লাহ চাই লে সব হবে!!
-নির্ঝর আপনি সায়নের ব্যাপারটা জানতেন??

নির্ঝর মুচকি হেসে জবাব দেয়।
-অনু এখনো অনেক কিছু আছে যা তুমি জানো না আমি চাই ও না তুমি জানো!!
-আমি জানতে চাই
-সব কিছু জানতে নেই!!

আজকাল অনুর শ্বাশুড়ি অনুকে বড্ড কথা শুনায়।যখন খুশি যা নয় তাই বলে অপমান করে।তবে অনু নিশ্চুপ।ওনি যা বলেন সত্যিই তো বলেন।

সেদিন হাসপাতালে আনিকা আপুর বাচ্চা দেখতে গিয়েও অনুর শ্বাশুড়ি একঘর লোকের সামনে অনুকে যা নয় তাই বলে অপমান করলো।বাচ্চাটাকে একটিবার দেখতেও দেয় নি।কেন দেবে এসব বাজা মেয়ে মানুষের ছায়া পরলেও নাকি বাচ্চাদের ক্ষতি হবে।শ্বাশুড়ির কথার প্রতিউওরে অনু শুধু বলেছিলো
-কোনো মেয়েই ইচ্ছে করে বন্ধ্যা হতে চায় না যদি আল্লাহ সন্তান না দেয় আমার কি করার আছে??নিজে সন্তানের জন্ম দিতে পারবো না বলে আমি অন্যের সন্তানের ক্ষতি চাইবো এটা কেমন কথা!!

সেদিন অনু মুখ গোমড়া করে বাড়ি চলে এসেছিলো!!নির্ঝরের বুকে মাথা রেখে বলেছিলো
-আমি মা হতে চাই!!
-আল্লাহ চাইলে সব হবে।

বেশ কয়েকটা দিন কেটে গেছে।সব কিছু মিলিয়ে অনু নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে।আল্লাহ সবার কপালে কি সব সুখ রাখে।নির্ঝরের মতো স্বামী পেয়েছে এই অনেক।যে সব জেনে শুনে কখনো কোনো অভিযোগ করে না।
তবে আজকাল সায়ন বড্ড জ্বালায়।তার না কি কিসব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।তবে অনু সেসবের কিছুই জানতে চায় না।
এখন অনুর কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে ভরসার জায়গা হলো নির্ঝর।সে ছাড়া অনু যেন আর কাওকে দেখতেই পায় না।

[আজকাল সিমিটা বড্ড জ্বলে।চোখের সামনে নির্ঝর আর অনুর ঢলাঢলি তার আর সহ্য হয় না
এতো কিছু করেও লাভ হলো না।সিমির ধারনা ছিলো বিদেশ থেকে সায়নকে এনে অনুকে বিদায় করবে তারপর নির্ঝর.....
কোনো লাভই তো হলো না।সায়ন তো এলো কিন্তু এ মেয়েকে কিছুতেই ভাগাতে পারছে না।
তারপর ভাবলো সায়নকে দিয়ে নির্ঝরের মনে সন্দেহ জাগাবে।সেই জন্য কতো কি না করলো।প্লান করে সেদিন সপিং মলে নিজে সায়নকে ডেকে অনুকে সেখানে পাঠিয়ে নির্ঝরকে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেছিলো
-নির অনু বোধয় সত্যি তোর সাথে থাকতে চায় না।নাহলে এতো কিছুর পরও সে সায়নকে সপিং মলে ডেকে পাঠায় দেখা করার জন্য??
-কিহ্??
-হুম্ম।বোধয় আজই দুজন পালিয়ে যাবে....

নির্ঝর এসেছিলো, অনুকে হাতে নাতে ধরলো,প্রমানও পেলো তারপর আবার সব ভুলেও গেলো???
আচ্ছা এতো বড় ঘটনার পরও নির্ঝরের বিন্দু মাত্র হেদোল নেই।ঠিকই অনু অনু করছে।

সিমির সবচেয়ে বেশি অবাক লাগে
এই তো সেদিন আনিকা আপুর বেবি শওয়ারে সায়নকে ডাকলো।বেশ কিছু কাজের ছবিও তুললো নির্ঝরকেও পাঠালো।সে নিয়ে নির্ঝরের রিয়াক্টও দেখার মতো ছিলো।সিমি তো ভেবেছিলো কেল্লাফতে আজই নির অনুকে ঘার ধাক্কা দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিবে।কিন্তু কোই ঠিক তার পরদিনই নির্ঝর সব ভুলে অনু অনু করছে।এমন একটা ভাব যেন ছবিগুলো তার চোখেই পরে নি।

রাগে গা জ্বলছে সিমির।এই মেয়েটা কি ম্যাজিক জানে??নাহলে এতো বড় বড় ঘটনা কেমনে ধামা চাঁপা দেয়??
নাহ্ এবার এমন কিছু করতে হবে যাতে অনু নামটা একেবারে নির্ঝরের মন থেকে মুছে যায়.....]

একদিন বিকেলে অনুর মন খারাপ করছিলো তাই সে বাগানে চলে আসে।কিছু কিছু গোলাপ কাছে নতুন কুড়ি ফুটেছে।সেগুলোতে পানি দেয়।একটু ঘোরা ফেরা করতেই শ্বাশুড়ি ডাক দেয়।
শ্বাশুড়ির ডাকে অনু ভেতরে আসতে নিলেই কেউ একজন অনুর হাত ধরে ফেলে.....

-কে(ভয় পেয়ে)

-নির্ঝরকে তুমি যতোটা মহান ভাবছো সে ঠিক ততোটা মহান নয় অনু যে তোমার সম্পর্কে এরকম কথা জেনেও তোমায় বিয়ে করবে।আসলে সব ওর পরিকল্পনা।

অনু পাশ ফিরে তাকায়।দেখে সায়ন দাড়িয়ে আছে...
-তুমি..
-হুম্ম তোমায় বার বার সত্যি জানাতে চেয়েছিলাম তুমি শোনো নি।
-আরো কি জানার বাকি আছে বলো??আমি কিচ্ছু জানতে চাই না।
-অনু এইসব কিছু নির্ঝরের প্লান ছিলো আমাদের আলাদা করার।
নির্ঝর ইচ্ছে করে এসব করেছে।ও প্লান করে আমাকে তোমার থেকে আলাদ করেছ....

একটু মন দিয়ে পড়ুন--
পরবর্তী অংশ অর্থাৎ সবগুলো পর্ব এই I'd তে দেয়া হবে, পুরো গল্পটি পড়তে রিকুয়েস্ট দিয়ে সাথেই থাকুন। ভালো ভালো গল্প পেতে এই আইডির সাথেই থাকুন!অনেক সময় গ্রুপে গল্প পোস্ট হয় না। তাই গ্রুপে গল্প পেতে সমস্যা হলে ফলো অথবা রিকুয়েস্ট দিয়ে রাখতে পারেন ধন্যবাদ।

সায়ন এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে দম নয়।অনু অবাক হয়ে দাড়িয়ে আছে।সায়ন কেমন এক অন্যরকম দৃষ্টি দিয়ে অনুকে দেখছে।এই দৃষ্টির মাঝেই তো অনু হারিয়ে গিয়েছিলো তবে আজ সেরকম কিছু হবে না।
অনু দ্রুত নিজের হাতটা সায়নের কাছ থেকে ছুটিয়ে নিয়ে হাটা ধরে।
-অনু বিশ্বাস করো তুমি যা জানো সব মিথ্যা....

-সায়ন লাগছে!! হাত ছাড়ো আমি তোমার কোনো কথায় শুনতে চাই না!!
-তোমাকে শুনতে হবে অনু সব জানতে হবে!!তুমি এভাবে আমাকে ফেলে ভালো থাকতে পারো না
-সায়ন লাগছে ছাড়ো বলছি....

সায়ন অনুর হাতটা শক্ত করে ধরে আছে।আজ অনুকে সব বলেই ছাড়বে।নির্ঝর যে কতো বড় বেঈমান তা আজ অনুকে জানাতে হবে
অনু বারবার ছুটার চেষ্ট করছে কিন্তু পারছে না।চিৎকার দিতে যাবে সায়ন মুখ চেঁপে ধরে অনুকে টেনে বাগানের ভেতর দিকে নিয়ে যায়
-অনু প্লিজ আমি যেই কথাগুলো বলবো সেগুলো শোনা খুব জরুরি।সেগুলো বলেই আমি চলে যাবো।প্লিজ এইটুকু সময় আমাকে দাও...

অনু একটু শান্ত হয়ে দাড়ায়।হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বলে
-বলো কি বলবে???তবে শুনে রাখো তুমি যদি নির্ঝকে নিয়ে বানিয়ে বানিয়ে একটা ও মিথ্যে কথা বলো আমার থেকে খারাপ কিন্তু কেউ হবে
সায়ন মুচকি হেসে জবাব দেয়...

-অনু তোমার ভালোবাসা এতোই ঠুনকো ছিলো যে আমাকে এতো অল্পেতেই ভুলে গেলে।ভয় নেই আমি প্রমান ছাড়া কিছুই বলবো না...আর আমি যে তোমায় মিথ্যে বলতে পারি না এটা তুমিও ভালো করেই জানো!!
-যা বলবে তাড়াতাড়ি বলো...(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে)
-নির্ঝর নিশ্চয় তোমাকে বলেছে তুমি ইস্যুলেছ তোমার কখনো বেবি হবে না তাই আমি তোমাকে ফেলে চলে গিয়ছিলাম!!....বলে নি এগুলো???
-হুম্ম আমি জানি কথাগুলো তবে নির্ঝরের কাছ থেকে না সি....
-কথাটা কিছুটা সত্যি হলেও গোটা টা নয়...
-মানে???
-অনু নির্ঝর আমার খালাতো ভাই হয় ওও শুধু ভাই বললে ভুল হবে এক কথায় জিগড়ি দোস্ত ছিলো।তোমার আমার সম্পর্কের শুরু থেকে শেষ অব্দি ও ছিলো।ও সব জানতো।কিন্তু ও না কি তোমাকে অনেক আগে থেকেই পছন্দ করতো।তবে আমি সেটা রিসেন্টলি জেনেছি। ওও তোমাকে আমার পাশে এক্সেপ্ট করতে পারে নি তাই তোমাকে আমার থেকে আলাদা করার জন্য প্লান করে এসব করেছে...

অনু হা করে সায়নের কথাগুলো গিলছে...
-কিসের প্লান??
-সেদিন আকদের দিন তুমি হুট করে সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে সেন্সহারিয়ে ফেল্লে ঐ সময় কি করবো বুঝতে পারছিলাম না তাই আমি সরাসরি নির্ঝরকে ফোন করি আর নির্ঝরই সব ব্যবস্থা করে।তোমাকে নির্ঝরের ফুপার নার্সিং হুমে নিয়ে যাওয়া হয়।আর তোমার ডক্টর কে ছিলো জানো??
-কে??
-আনিকা আপু...
-মানে নির্ঝরের সেই ফুপাতো বোন??
-হুম্ম!!
-তো...?
-আনিকা আপুই সবাইকে বলে তুমি না কি কোনো দিনও মা হতে পারবে না।ঐ কথাগুলো শোনার পর পরই মা বিয়েতে না করে দেয়।বিশ্বাস করো অনু আমার কোনো সমস্যা ছিলো না।আমি তো তোমায়.....কিন্তু মা কিছুতেই মানছিলো না। আমাকে কিসব কসম টসম দিলো আমি না চেয়েও তোমায় ফেলে চলে যেতে বাধ্য হয়েছিলাম!!ভেবেছিলাম পরে...মা কে বুঝিয়ে

অনু চুপচাপ মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে হয়তো সায়ন মিথ্যে বলছে।
অনু সায়নের দিকে একপলক তাকিয়ে যেতে নিলে সায়ন অনুর হাত ধরে নেয়।
-আমার কথা বিশ্বাস হচ্ছে না তাই তো?হবে কি করে তোমার স্বামী তো তোমার পরিবারের কাছে নিজে মহান সেজে আমাকে ভিলেন বানিয়ে দিয়েছে।
-জাস্ট স্যাট অ্যাপ এন্ড গেট লস্ট
-নির তোমার ভাইকে পটিয়ে পাটিয়ে তোমাকে বিয়ে করেছে।আমি বিয়েটা না করায় তোমার বাবা মা ভাই সবাই ভেঙ্গে পরেছিলো হয়তো তোমার ভবিষ্যৎ নিয়েই। তখন নির তোমাকে বিয়ে প্রস্তাব দেয় তোমার বাবা মা ও রাজি হয়ে যায়।তাদের কাছে তো নির্ঝর ফেরেস্তা!!
-আপনি জানতেন না আমার বিয়ে হচ্ছে??
-জানতাম কিন্তু নির্ঝরের সাথে হচ্ছে এটা জানতাম না।মা আসতে দেয় নি!!
-ওওও।তাহলে এখন কেম এসেছেন?এখন কি আপনার মা আপনাকে আসতে দিচ্ছে??
-অনু আমি আগে ভিতু ছিলাম এখন সাহসী হয়ে গেছি!!
-আফসোস এই সহসটা যদি আগে থাকতো!
-অনু তুমি এখনো আমাকে বিশ্বাস করছো না তাই না???
-আমি আমার স্বামীকে বিশ্বাস করি!!
-তাহলে এই নাও নিজেই দেখে নাও নিজে রিপোর্ট....
-কিসের...
-এই একটা নকল যেটা সেদিন অনামিকা আপু তৈরী করিয়েছিলো নির্ঝরের কথায় আর এইটা আসল।জানতে চাওনা রিপোর্টটাতে কি লিখা আছে

অনু জিঙ্গাসা সূচক দৃষ্টিতে সায়নের দিকে তাকিয়ে আছে..
-এই একটাতে লিখা আছে তোমার ওভারিতে প্রবলেম আছে।তুমি কখনো মা হতে পারবে না।আর একটাতে লিখা আছে তোমার সিস্ট হয়েছে যার জন্য পেট ব্যাথ্যা হচ্ছিলো।
-মানে?? কি সব বলছো তুমি??
-বুঝিয়ে বলি....আসলে তুমি কখনো মা পারবে না ব্লা ব্লা এগুলো সব সাজানো নাটক তোমাকে আমার থেকে আলাদা করার জন্য....ওঔ এর পেছনে অবশ্য তুমি ছাড়াও আরেকটা কারন আছে সেটা হলো- নীরা
-নীরা??
-হুম্ম নীরা আমায় ভালোবাসে ছোটবেলা থেকে!!
খালামুনি চান আমি নীরাকে বিয়ে করি সবাই এটাই চায় মা ও।কিন্তু আমি না করে দিই কারন তোমাকে...অনু নির্ঝর নিজের স্বার্থে আমাদের জীবনটা শেষ করে দিলো!!!

অনু চুপচাপ মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে।কি বলবে কি করবে বুঝতে পারছে না।কথায় আছে না অল্প শোকে কাতর আর অধিক শোকে পাথর....

-সায়ন তুমি নীরাকে বিয়ে করে নাও আর ভালো থেকো!!
-কি??
-হুম্ম ভুলে যাও আমাকে।ভুলে যাও অনু নামের কেউ তোমার জীবনে ছিলো।

কথাগুলো বলেই অনু ছুটতে ছুটতে বাড়ি চলে আসে।
এবার হয়তো অনুর সব হিসেব মিলে গেছে।
"কেন সেদিন নির্ঝর নীরার আকদে অনুকে থাকতে দেয় নি!!কেন নির্ঝর নীরার বিয়ের কথা বললেই এরিয়ে যেত আর কেনই বা নির্ঝর এভাবে জোড় করে অনুকে আটকে রেখেছে।সব মিলে যাচ্ছে সবকিছু"

অনুর চোখ দিয়ে পানি পারছে না।একরকম পাথর হয়ে গেছে।যাকে বিশ্বাস করলো ভরসা করলো সেই তো দাম দিলো না।

অনুকে ভেতের আসতে দেখে নীরা এগিয়ে যায়
-কি গো ভাবি কখন থেকে খুজছি তোমায় কোই ছিলা??
-নীরা তোমার হবু বরের নাম কি সাজ্জাদ আহম্মেদ সায়ন???
-হুম্ম কেন?(অবাক হয়ে)
-সে কি তোমার খালাতো ভাই হয়??তুমি কি তাকে ছোটবেলা থেকেই ভালোবাসতে??
-হুম্ম কিন্তু কেন???
-তোমার ভাই কি জানে সব??
-বাড়ির সবাই জানে সবাই তো চায় আমাদের বিয়েটা হোক শুধু সে চায় না।ইভেন এখনো রাজি না
-ভেবে না সেও রাজি হয়ে যাবে....

কথাগুলো বলে অনু উপরে চলে যায়।নীরা সেখানে দাড়িয়ে অনুর কথাগুলো ভাবছে।অনু কেমন অচেনা লাগছে নীরার।

অনু ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়।বেশ কান্না পাচ্ছে কিন্তু কাঁদতে পারছে না।দুচোখ উপচে নোনা পানির ঢেউ আসছে কিন্তু কোনো এক বিশাল প্রাচীর সেই ঢেউকে বাহিরে আসতে বাধা দিচ্ছে....।
খুব কষ্ট হচ্ছে।

[কষ্ট পেয়ে কাঁদার মাঝেও এক অনন্য সুখ লুকিয়ে থাকে।তাতে হয়তো বেশির ভাগ কষ্ট চোখের সেই নোনা জলের মাধ্যমে বেরিয়ে পড়ে।কিন্তু মানুষ যখন কাঁদতে পারে না সেই কষ্ট গুলো বুকের মাঝে দলা পাকিয়ে পাথরের মতো ভরী হয়ে যায়।তখন কষ্ট হয় বড্ড বেশিই কষ্ট হয়]

এই ঘরে অনুর দম বন্ধ হয়ে আসছে।বেশ কিছুক্ষন অনু মেঝেতে গুটিশুটি হয়ে বসে থাকে তারপর হুট করেই এক কাঁপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে।কোথায় যাবে আপাতোতো মাথায় আসছে না তবে এই ঘর এই বাড়ি এই মিথ্যে সম্পর্কগুলোর থেকে তার মুক্তি চাই।

অনুর চলে যাওয়া কারো চোখে না পড়লেও সিমির চোখে পড়ে।
এতো দিনের খাটাখাটুনির পর আজ সিমির কাজ সফল হলো!!সিমির মুখে এ তৃপ্তির হাসি

প্রায় সন্ধ্যে গড়িয়ে রাত নেমে এলো।এদিকে অনুর কোনো খোজ নেই।নীরা সারবাড়ি খুজেও অনুকে পায়নি।অনু কখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছে...কোথায় গেছে কেউ জানে না।

নির্ঝরের মা তো রেগে মেগে আগুন।একেই তো এই মেয়ের দোষ আছে তার উপর এরকম হুট হাট করে বাড়ি ছেড়ে কোথায় গেছে কে জানে
"আজ নির বাড়ি ফিরুক এই মেয়েকে আর ঘরেই তুলবো না" কথাগুলো মনে মনে বলে নিজের ঘরে চলে যায় নির্ঝরের মা...

প্রায় রাত এগারোটা নাগাত নির্ঝর বাড়ি ফিরে।
নীরা ড্রইং রুমে বসে বসে কাঁদছে।সেই সন্ধ্যে থেকে অনুর কোনো খবর নেই।নির্ঝর ঘরে ঢুকতেই নীরা নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়
-নীরা কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?
-ভাইয়া ভাবি!!
-অনু!!কি হয়েছে অনুর??
-ভাইয়া ভাবিকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না!!

নির্ঝরের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।
-কিহ্?
-হুম্ম...
-কোথায় গেছে অনু?
-জানি না।আমাদের কাউকে কিচ্ছু বলে যায় নি ভাইয়া।আমার না খুব ভয় করছে।

হুট করে সিমি এসে নির্ঝরের হাত ধরে নেয়।
-আমার সাথে চল আমি বলছি সব।
সিমি নির্ঝরকে টানতে টানতে ঘরে নিয়ে আসে।
-কি হয়েছে এভাবে এখানে আনলি কেন আমাকে??
-নির আমার কথা শোন আসলে অনু কোথা আমি জানি!!
-অনু কোথায় তুই জানিস?তোকে বলে গেছে??
-আসলে অনু সায়নের সাথে পালিয়ে গেছে....
-what??
-হুম্ম আমি জানতাম নির অনু তোকে কখনো ভালোবাসবে না আমি তো আগে থেকেই জানতাম!!
-(...)
-আমি তোকে বার বার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলাম।মনে আছে সেদিন সপিংমলেও তো অনু সায়নের সাথে পালাতে চেয়েছিলো।তুই তো ওকে কিছুই বললিই না!!তারপর ঐ ছবিগুলো আমি তোকে পাঠালাম তুই বিশ্বাসই করলি না।গোটা বিষয়টাকে এড়িয়ে গেলি এখন বোঝ।তোর বউ অন্য কারো সাথে পালিয়েছে.....এটাই সত্যি

নির্ঝর রাগে কটমট করতে করতে সিমিকে সামনে ঘুরাই তারপর ঠাটিয়ে একটা চড় মারে।
সমি টাল সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যায়....
-নির
সিমি উঠে দাড়াতেই নির্ঝর আরেকটা চড় মারে সিমি আবারো পড়ে যায়....
-নির তুই আমাকে মাড়লি??
-আরো একটা চড় বাকি আছে।তবে সেটা আমি মারবো না অনুকে দিয়ে মারাবো তুই শুধু অপেক্ষা কর..!!

(নির্ঝর চলে যেতে নিলে)
-যা সত্যি তাই তো বললাম খুব গায়ে লাগছে তাই না তোর বউ তার প্রেমিকের সাথে নোংরামি করবে আর আমি বললেই দোষ....
-সিমি যদি আর চড় না খেতে চাস তো প্লিজ চুপ হয়ে যা।কি সত্যি আর কি মিথ্যা তুইও ভালো জানিস আমি ও জানি তাই বলছি....(স্ স্ স্ স্) চুপ একদম চুপ....!!

কথাগুলো বলেই নির্ঝর বেরিয়ে যায় অনুকে খুজতে হবে।মেয়েটা যে বড্ড অভিমানী।যদি কিছু করে ফেলে....
নির্ঝরের বুকটা ধক করে উঠে
"ইস্স অনুকে যে আমার অনেক কিছু বলার ছিলো-সেগুলো কি অনুকে বলা হবে না???"

-সায়ন তুমি নীরাকে বিয়ে করে নাও
-কি বলছো এসব??
-ঠিকই বলছি।আমাকে ভুলে যাও আর নীরাকে বিয়ে করে নাও নীরা যে তোমায় খুব ভালোবাসে।
-অনু প্লিজ ফিরে এসো!!
-সব দরজা সবার জন্য সব সময় খোলা থাকে না।
-তোমার জন্য আমার মনের দরজা সব সময় খোলা অনু।
-জানো তো সায়ন যে পথ আমার নয় সে পথে বার বার গিয়ে ফিরে আসতে হয়।সায়ন তোমার আর আমার পথ আলাদা হয়ে গেছে অবশ্য আমাদের পথ এক ছিলোই বা কবে যে নতুন করে আলাদা হবে।যা হয়েছে ভুলে যাও ভুলে যাও অনু নামের কেউ ছিলো তোমার জীবনে।
-শুধু শুধু নির্ঝরের ভুলের শাস্তি আমাকে দিচ্ছো কেন??
-ভুল যে নির্ঝর একা করেছে তা তো নয় ভুল আমি ও করেছি বার বার করেছি।ভুল করে ঠকেছি।বার বার ঠকেছি!
যাই হোক ভালো থেকো।আর নীরাকে ভালো রেখো
-অনু
-বিয়েটা করে নাও
-অ....
-টুট টুট টুট....

বাড়ি থেকে বেরিয়ে অনু শুধু একবার সায়নকে ফোন করে কথাগুলো বলে ফোন অফ করে দেয়।
সায়ন বার কয়েক অনুকে ফোন করলেও লাইন পায় নি।ফোনটা সুইচট অফ বলছে।।।

এখন পর্যন্ত অনুর কোনো খবর নেই।নির্ঝর সারা রাত অনুকে খুজেও কোথাও পায় না।

অনু বাবার কাছে যায় নি।নির্ঝর খবর নিয়েছিলো কিন্তু অনুর বাবার বাড়ির কেউ জানে না অনু কোথায়।নির্ঝর অনেক খোজা খুজি করে ভোরের দিকে বাড়ি চলে আসে।

নির্ঝর ঢুলু ঢুলু চোখে ক্লান্ত শরীরে বাড়ির ভেতর ঢুকতেই দেখে অন্ধকারে কেউ একজন সোফায় উল্টো দিকে ফিরে বসে আছে।
নির্ঝর হালকা আলো আধারে পেছন ফিরে থাকা মেয়েটাকে দেখছে।সেই হালকা গোলাপি কালারের শাড়িটা নির্ঝর স্পস্ট দেখতে পাচ্ছে।কাল রাতেও অনু এই শাড়িটাই পড়ে ছিলো।

-অনু??
-(...)

নির্ঝর একছুটে গিয়ে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।অনুর ঘারে মুখ গুজে বাচ্চাদের মতো কাদতে থাকে।এতোক্ষন পর যেন নির্ঝরের বুকের খাচায় প্রান ফিরে এলো।

অনুকে শক্ত করে ধরে বলতে শুরু করে..

-কোই গিয়েছিলে??এভাবে কেউ হুট হাট করে চলে যায়?জানো কতো চিন্তা হচ্ছিলো!!তুমি কেন বঝোনা আমি তোমায় কতোটা ভালোবাসি??
-(...)
-কি হলো চুপ করে আছে কেন??
-(..)
-অনু...

নির্ঝর অনুকে এপাশ ফেরাতেই দেখে।এতো অনু নয়।
-সিমি???

সিমি অনুর সেই হালকা গোলাপী রঙ্গের শাড়িটা পরেছে।অনুর মতো করে হাত খোপা করে পিঠে ছড়িয়ে দিয়েছে। খোপায় সদ্য মালা করা বেলী ফুল পরেছে।

নির্ঝর সিমিকে দেখে দূরে সরিয়ে দেয়।সিমি আবার নির্ঝকে কাছে টেনে নেয়।
-নির দেখো আমি শাড়ি পরেছি এই রংটা তোমার অনেক পছন্দের তাই না!!আমি জানি....দেখো নির আমাকে অনুর মতো লাগছে তাই না....এবার আমায় ভালোবাসো!!

কথাগুলো বলেই সিমি নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে।
নির্ঝর সিমিকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়।
-তোর মাথা কি আবার খারাপ হলো?
-নীর দেখ না আমাকে অনুর মতো লাগছে তো?তাহলে আমাকে অনুর মতো ভালোবাস না প্লিজ।দেখ ধরে নে না আমিই অনু
-সিমি😡😡😡 ছাড় আমায়
-নির প্লিজ একটু ভালোবাস না প্লিজ একটু
কথাগুলো বলেই সিমি নির্ঝরের দিকে এগিয়ে গিয়ে নির্ঝরের গলা জড়িয়ে ধরে।

-সিমি প্লিজ ছাড়
-এই নির এই একটু ভালোবাসলে কি হয় বল না??কেন এমন করিস আমার সাথে? আমি ভুল করেছি নির প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দে
-সিমি সব কিছুর একটা সীমা আছে।আমার সহ্যেরও একটা সীমা আছে প্লিজ!
-নির কেন করিস এমন হুম্ম।কার জন্য করিস তোর বউ তো তার পুরানো প্রেমিকের সাথে ভেগেছে একটিবার ও তো তোর কথা ভাবে নি।তোকে কাঁচ কলা দেখিয়ে পালিয়েছে।শুধু শুধু কেন আমার সাথে এমন করছিস ভুলে যা না।অনু সুখে বাঁচার জন্য সায়নকে বেছে নিয়েছে তুই ও আমাকে নিয়ে নে না তোর করে। প্লিজ একটু ভালোবাস না আমাকে..আমাকে ভালোবেসে তোর করে নে।
ঐ চরিত্রহীন মেয়ের জন্য আর কতো কষ্ট দিবি আমাকে...???(চেঁচিয়ে)

নির্ঝর সিমিকে সরিয়ে দিয়ে ঠাটিয়ে থাপ্পর মেরে দেয়।সিমি ছিটকে গিয়ে সোফায় বসে পরে।

-আর একবার অনুর নামে কোনো বাজে কথা বললে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
কি ভেবেছিস তুই বার বার আমার সামনে অনুকে খারাপ প্রমান করলেই অনু খারাপ হয়ে যাবে।সেদিন তুই সায়নকে সপিং মলে ডেকে অনুর নাম দিয়েছিলি তোর জন্যই আমি সেদিন অনুকে....
ছি...মেয়েটা কষ্টে ছটপট করেছে বেল্টের আঘাতে রক্তাত্ত হয়েছে তবে মুখ দিয়েয়ে টু শব্দ করে নি।

কথাগুলো বলেই নির্ঝর দেয়ালে ঘুষ মারে....

তুই সেদিন আনিকা আপু বেবি সওয়ারে সায়নকে ডেকেছিলি।ভেবেছিলো অনু আমাকে ছেড়ে চলে যাবে!!
সায়ন সেদিন অনুকে জোড় করেছিলো সায়নের সাথে যাবার জন্য কিন্তু অনু যায় নি।কারণ কি জানিস? অনু আমাকে ভালোবেসেছে।তবে সেদিন তুই আড়াল থেকে ছবি তুলেছিলিস আরর আমাকে পাঠিয়েছিলিস যাতে আমি অনুকে ভুল বুঝে দূরে সরিয়ে দিই।
-মা....মানে কি বলছিস এসব?
-বুঝতে পারছিস না তাই না...(সিমির দুই হাত ধরে ঝাকিয়ে)
আমি ঐ ছবিগুলো দেখে অনুকে হয়তো ভূলই বুঝতাম। বুঝতাম কেন তুইই তো আমাকে যা বুঝিয়েছিলিস তাই বুঝে অনুকে....
যাই হোক....থ্যাকস্ টু আল্লাহ সেদিন সঠিক সময় আনিকা আপু আমাকে বলে দিয়েছিলো অনু আর সায়নের মাঝে কি কি কথা হয়েছিলো!!
-নির প্লিজ আমি তোকে খুব ভালোবাসি!!
সিমিকে জোড়ে ধাক্কা দিয়ে
-তোর অনেক কিছু পাও না আছে সৌমিতা খান আমার থেকে অনুর থেকে সব হিসেব মিলিয়ে দিয়ে তারপর তোর ছুটি
-নির

নির্ঝর বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়।

একটা ঘর তখনই পরিপূর্ণ হয় যখন সে ঘরে ভালোবাসা থাকে।আর সেই ভালোবাসা যত্ন করে সাজিয়ে রাখে কিছু গুরুত্বপূর্ণ মানুষ।সেই মানুষগুলো যখন থাকে না তখন না থাকে ভালোবাসা না থাকে ভালোলাগা।ভালোবাসা ছাড়া সব কিছুই কেমন অগোছালো ছন্নছাড়া।মায়াহীন.....

নির্ঝর খুব দ্রুত গাড়ি ড্রাইভ করছে।
মাথা ভর্তি চিন্তা।অনু কোথায় কেমন আছে সে??অনুও কি তবে হারিয়ে গেলো???
আচ্ছা আমার কপাল এমন কেন?একটু তো ভালোবাসাই চেয়েছি বেশি কিছু তো চাই নি!!
অনু কি সায়নের কাছে গেছে??
অসম্ভব...

নির্ঝর কি মনে করে সায়ন কে ফোন দেয়...
-হ্যালো সায়ন?
-হু
-অনু কোই?অনু কি তোর সাথে??
-লিসেন মি.নির্ঝর চৌধূরী আমার অনুর যদি কিছু হয় তোকে আমি ছাড়বো না!!
-টুট...টুট....টুট

সায়ন হুট করে ফোন রেখে দেয়।অনু কোই সেটা সায়ন জানে না।
নির্ঝর দুঃখের মুখে হেসে দেয়

"আমি ও না কতো বোকা বার বার তোমায় অবিশ্বাস করি।আজ ও করলাম।অনু তুমি কোই??একটিবার ফিরবা প্লিজ শুধু একবার ছরি বলবো"

নির্ঝরের চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে...
বুকের ভেতর এক অজানা ভয় কাজ করছে।অনুকে ফিরে পাবো তো??
-আর কতো জোড় করবেন আমাকে মি.নির্ঝর?জোড় করে বিয়ে করলেন!বিয়ের প্রথম রাতে জোড় করে স্বামীত্ব ও ফলালেন এখন এসছেন জোড় করে ধরে বেঁধে সংসার করাতে!এভাবে আমি পারছিনা প্লিজ এবার আমায় মুক্তি দিন প্লিজ!!

[অনেক খোজাখুজির পরও নির্ঝর অনুর খোজ পাচ্ছিলো না।অনুর বাবার বাড়ি থেকেও কেউ কিছু বলছিলো না।নির্ঝর পাগলের মতো এদিক ওদিক খুজছিলো কিন্তু অনুর কোনো খবর নেই।হটাৎই অনুর ভাবি নির্ঝরকে ফোন দেয়।

-সংসারে এমন মান অভিমান হবেই।অনু ছেলে মানুষ তাই রাগ কন্ট্রোল করতে পারে নি।তুমি একটু গিয়ে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে এসো
-ইয়ে মানে অনু তো আমাকে বলে যায়নি মানে আমি জানি না অনু কোথায়
-তা ভাই এ বিষয়ে আমি তোমায় সাহায্য করতে পারি
-হ্যা ভবি বলেন না অনু কোই
-বাবাহ্ বউকে দেখার তড় সইছে না
-ইয়ে....
-বলছি অনু ছোট ফুপ্পির বাড়ি গেছে।

অনু ভাবির কাছ থেকেই নির্ঝর জানতে পারে অনু তার ফুপ্পির বাসায় আছে।নির্ঝর খবর পেয়েই ভাবির ঠিকানা মতো ছুট লাগায় অনুর কাছে।
অনুর কাছে পৌছালেও অনু নির্ঝরের সাথে দেখা করতে নারায।সে এক জিদ ধরে বসে আছে।
অনেক জোড়া জুড়ির পর শেষ মেষ দেখা করতে রাজি হয়।অনু বার বারই নির্ঝরের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলছিলো যা নির্ঝরের একদম পছন্দ হয়নি তাই সে জোড় করে গিয়ে অনুকে জড়িয়ে ধরে।অনুকে একরকম জোড় করেই বাড়ি নিয়ে যেতে চায়।তখনই অনু নির্ঝরকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে কথাগুলো বলে
অনু কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে।নির্ঝর মূর্তির মতো দাড়িয়ে আছে]

"আজ অনু মুক্তি চাইছে!!মুক্তি চাইছে তার ভালোবাসা থেকে।অনু মুক্তি চাইছে এই সম্পর্ক থেকে"
নির্ঝরও অনুর পাশে বসে পড়ে অনুর মুখটা উঁচু করে তুলে ধরে
অনুর চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে
-অনু একটি বার আমার চোখে চোখ রেখে বলো তুমি আমায় ভালোবাসো না??
-(...)
-কি হলো বলো
-(....)
অনু মাথা নিচু করে নেয়।নির্ঝর আবার অনুর মুখটা উঁচু করে তুলে ধরে
-তোমার ঐ দুই চোখে আমার বার বার ডুবতে চেয়েছি।তোমার ঠোটের কোণে ঐ মিষ্টি হাসিটাতে বার বার হাড়িয়ে যেতে চেয়েছি।তোমার ভালোবেসে পাড়ি দিতে চেয়েছি নিজের বাঁকি জীবন।অনু তোমার হাতে হাত রেখে আমি বুড়ো হতে চেয়েছি।আমার এই চাওয়াগুলো কি এতোই বেশি ছিলো যে তুমি মুক্তি চাইছো আমার থেকে।বলো না বলো???

অনু নির্ঝরের জ্বলন্ত দৃষ্টি থেকে চোখ সড়িয়ে নেয়।অনুর থুতনি থেকে নির্ঝরের হাত সরিয়ে নেয়
-আপনার চাওয়াগুলো ভুল ছিলো ভুল হলাম আমি।নির্ঝর আপনি ভুল মানুষের কাছে ভুল জিনিস চেয়েছেন।প্লিজ আমি হাত জোড় করছি আমাকে এবার মুক্তি দিন।

একটু মন দিয়ে পড়ুন--
পরবর্তী অংশ অর্থাৎ সবগুলো পর্ব এই I'd তে দেয়া হবে, পুরো গল্পটি পড়তে রিকুয়েস্ট দিয়ে সাথেই থাকুন। ভালো ভালো গল্প পেতে এই আইডির সাথেই থাকুন!অনেক সময় গ্রুপে গল্প পোস্ট হয় না। তাই গ্রুপে গল্প পেতে সমস্যা হলে ফলো অথবা রিকুয়েস্ট দিয়ে রাখতে পারেন ধন্যবাদ।

নির্ঝর অনুকে শক্ত করে ধরে তারপর দাড় করিয়ে দেয়
-বার বার এক কথা কেন বলছো
-বলছি তার কারণ আপনার মতো বিশ্বাসঘাতক বেঈমান লোকের সাথে আমি একটি মুহূর্তও থাকতে চাই না।
-অনু...
-দয়া করে আর একবার ও আমাকে ছোবেন না প্লিজ
-কি করেছি আমি?
-আপনি আমাকে ডিভোর্স দিবেন নাকি আমি নিজেকে...??

নির্ঝর অনুকে ঠাটিয়ে চড় মারে
-আমি বার বার বলছি তোমাকে ছাড়া আমি মরে যবো
-আপনার মতো স্বামী থাকার থেকে বিধবা হওয়া অনেক ভালো!!

নির্ঝর অনুকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে যায়।নির্ঝরের কানে বার বার অনুর বলা একটা কথায় বাজছে।"বিধবা!অনু বিধবা হতে চায়"
-আমার ভালোবাসা তোমার কাছে এতোই অসহ্য লাগছে যে তুমি আমার মৃত্যু কামনা করছো!!
-আসলে....
-আসছি।আল্লাহ্ তোমার ইচ্ছে পুরন করুক

কথাগুলো বলেই নির্ঝর বেরিয়ে যেতে নিলে....অনুু বলে উঠে
-আপনার পরিকল্পনা সার্থক হয়েছে মি.নির্ঝর চৌধূরী আপনার বোনের ভালোবাসার পথে আরর আমি বাঁধা হয়ে দাড়াবো না।আপনার বোন তার ভালোবাসার মানুষকে পাবেই
-কি?(অবাক হয়ে)
-আপনি এখন আসতে পারেন আর যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিভোর্সটা দিয়ে দিবেন এই সম্পর্কে এবার ইতি টানা প্রয়োজন!!

অনুর কথাগুলো শুনে নির্ঝর আর একমুহূর্ত দাড়ায়নি।হনহনিয়ে বেরিয়ে পড়ে

"যখন কেউ আঘাত করে ব্যাথ্যা লাগে খুব লাগে কিন্তু ভালোবাসার মানুষের দেওয়া আঘাত শুধু ব্যাথ্যা দেয়না সাথে দেয় অসহ্য যন্ত্রনা।যে যন্ত্রনা প্রত্যেক মুহূর্তে ভেতরটা কুড়ে কুড়ে খায়"

নির্ঝর গাড়ি নিয়ে একটানে হাইওয়েতে চলে এসেছে।রাতের এই সময়টা হাইয়ওয়ের রাস্তা ফাঁকায় থাকে ইচ্ছে মতো গাড়ি চালানো যায়।নির্ঝরেরর গাড়িও সর্বোচ্চ গতিতে ছুটছে।
অনুর দেওয়া ব্যাথ্যাগুলো মনে হয় নির্ঝরের হৃদয়ে গেথে গেছে।

এদিকে কাঁদতে কাঁদতে অনুর ও নাজেহাল অবস্থা।ভেতরটা বড্ড বেশি পুড়ছে।মুখে তো বলে দিলো সে মুক্তি চায় নির্ঝর নামের প্যারা থেকে সে মুক্তি চায় কিন্তু সেই মুক্তির স্বাদ কি অনু নিজে মেনে নিতে পারবে??কি করে থাকবে সে নির্ঝরের সেই রোমান্টিক অত্যাচার ছাড়া...

কথাগুলো মনে হতেই অনুর চোখ বেয়ে পানি পরতে থাকে।

হটাৎই অনুর বা চোখ কেমন কাঁপছে।ছোট বেলায় অনুর মা বাম চোখ কাঁপলেই কেমন ভয় পেতেন বা চোখ কাঁপলে না কি কাঁছের মানুষের বিপদ হয়।

হুট করেই অনুর মাথায় নির্ঝরকে বলা শেষ কথাটা চলে আসে।
"আপনার মতো স্বামী থাকার থেকে বিধবা হওয়া অনেক ভালো"

তাহলে কি নির্ঝরের কোনো ক্ষতি হবে।কথাটা মাথায় আসতেই অনুর বুকটা ভয়ে কেঁপে উঠে

অনেক ধৈয্য ধরে শেষ মেষ এক পাহাড় সংকোচ নিয়ে নির্ঝরকে ফোন করে
দুইবার ফোন বাজতেই নির্ঝর ফোনটা তোলে....

ফোনটা কানে ধরে নির্ঝর চুপ করে আছে।অনুও চুপ করে আছে।অনু বার বার কথা বলতে চেয়েও বলতে পারছে না।সব কথা কান্না হয়ে গলায় এসে আটকা পরে যাচ্ছে আর চোখে জল হয়ে বাইরে বেরিয়ে আসছে।

অনেক ক্ষন চুপ থেকে নির্ঝর বলতে শুরু করে
-জানো তো অনু কেন যেন আমার মনে হচ্ছে এটাই তোমার সাথে আমার শেষ দেখা হয়তো আর কখনো তোমায় দেখতে পাবো না!!
-নির্ঝর আপনি ঠিক আছেন তো কিছু হয় নি তো???
-এখন ঠিক আছি তবে কতোক্ষন ঠিক থাকবো জানি না!!
-নির্ঝর.....
-টুট...টুট....টুট

হটাৎ দুম করে নির্ঝরের ফোনটা কেটে যায়।অনুও অবাক হয়।তারপর বার কয়েক নির্ঝরকে কল ব্যাক করলেও ফোনটা কানেক্ট হচ্ছে না।অনুর বুকের ভেতর ঢিপ ঢিপ করছে।কেন যেন প্রচুন্ড ভয় হচ্ছে।ভয়ে হাত পা কাঁপছে...
"ভুল করে মুখ দিয়ে ভুল কথা বেরিয়ে গেছে কথাটা যেন সত্যি না হয়"
অনুর মাথয় বার বার একটা প্রশ্নই ঘুরছে "নির্ঝর ঠিক আছে তো??"



নীরা সোফায় বসে রাগে ফুসছে।রাগে দুঃখে চোখ বেয়ে পানি পড়ছে।হাত পা থরথর করে কাঁপছে।
পাশেই সিমি বসে বসে নীরার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।নীরার চোখ মুখের ভঙ্গি দেখে সিমির বেশ হাসি পাচ্ছে।

অনুর কান্ড করখানার গুলো বেশ রং চং মিশিয়ে নীরার সামনে উপস্থাপন করেছে সিমি।
"সিমির কথা হলো:সুখ যদি আমি না পাই তুমিও পাবে না অনু।নির্ঝর তোমার নয়।সে আমার সম্পদ তাই সেই সম্পদের রক্ষা আমাকেই করতে হবে।হোক না তা বাঁকা পথে তবুও নির শুধু আমার।
তোমাকে যে আমি সুখে থাকতে দিবো না।যে সুখ আমার নয় তা তোমারও নয়"

নীরার ঠিক বিপরীতে নির্ঝরের মা ও বসে বসে সিমির কথাগুলো শুনছিলো।রাগে শরীর জ্বলছে ওনার।

একেই তো বাজা মেয়ে মানুষ তার উপর মেয়ের কি না চরিত্রখারাপ।ভাবা যায় এসব!

-মেয়ের মুখ দেখে মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না এখন দেখছি ঠিক উল্টো এ মেয়ের মুখে এক ভেতরে আরেক।
অসভ্য বাজা মেয়ে মানুষ।আমার ছেলে তো দয়া করে বিয়ে করেছিলো এখন অন্য প্রেমিক পেয়ে...ছি ছি যতো সব নোংরা মেয়ে মানুষের কৃত্তিকারখানা!!

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলেই দম নেয় নীরার মা।রাগে ফুসতে ফুসতে পায়চারি করছেন ওনি

-বোঝো না মা ঐ মেয়ে যে গভীর জলের মাছ।বাহিরে ভালোর মুখোশ পড়ে এক সাথে দুই নৌকায় পা রেখে চলছিলো।এখন সুযোগ পেয়ে ভাইয়াকে রেখে.....

কথাগুলো শেষ করতে পারে নি নীরা।হাউ মাউ করে কেঁদে উঠে।ঐ একজনকেই তো সে ভালোবেসেছে।নিজের জীবনে আর কউকে চায়নি সে শুধু সায়নকে ভালোবেসে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে চেয়েছে।সেই। সায়নই কিনা এভাবে ঠকালো।
সায়নের তো কোনো দোষ নেই সব দোষ এই মেয়ের মেয়ে যদি ছেলেকে ফুসলায় তাহলে কোন ছেলে গলবে না....
নীরা ফুপিয়ে কাঁদছে।ছোটবেলার ভালোবাসা,এতো দিনের চাওয়া এক মুহূর্তে ভুলে যেতে হবে তাকে।মুছে ফেলতে হবে জীবন থেকে।
নীরার চোখ দিয়ে পানি পারছে।এর চেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে ভাইয়ের কথা ভেবে।
ভাই অনু ভবিকে ছাড়া কি করে বাঁচবে?এই একজন মেয়েকে ভালোবেসে ভাই গোটা পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে...
আর আজ সেই মেয়েই কি না তার প্রাক্তনের সাথে পালিয়ে গিয়ে ভাইয়ের পিঠে ছুড়ি মারলো।ভাই ভাবির দেওয়া এতো বড় আঘাত মানতে পারবে তো???

কথাগুলো মনে আসতেই অনুর আরো কান্না পাচ্ছে।এদিকে নির্ঝরের মা তো তখন থেকেই অনুকে গাল মন্দ করেই চলেছে.....

ওনি তো মনে মনে স্থির করেই ফেলেছে সিমিকে এবার বাড়ির বউ করবে।তা নির্ঝর চাক বা না চাক...
আগের বার ছেলের জিদ ওনি রেখেছে এবার ছেলেকে তার জিদ মানতে হবে।

এখানে যে যার চিন্তায় আছন্ন।এমন সময় বাড়ির ল্যান্ড নম্বারে ফোন আসে।প্রথম বার বেজে বন্ধ হয়ে যায় আবার বাজতেঔ নীরা গিয়ে ফোন তোলে...
অপর পাশ থেকে কেউ একজন বলে উঠে
-এটা কি নির্ঝর চৌধূরীর বাড়ি??
-জ্বি কে বলছেন??
-আমি হাসপাতাল থেকে বলছি।আসলে নির্ঝর চৌধূরী.....

-কেন এসছো এখানে?তোমার নতুন বরকে রেখে এখানে আসলে কেন???আমার ভাইয়ের মরা মুখ দেখতে???

নীরার কথাগুলো শুনে অনুর বুকের ভেতরটা ধক করে ওঠে।তাহলে কি সত্যি নির্ঝরের অবস্থা খুব খারাপ??নির্ঝর কি আমাকে রেখে চলে যাবে??

কিছুক্ষন আগে যখন নীরা সিমি আর মা বসে বসে অনুকে ইচ্ছে মতো গাল মন্দ করছিলো হটাৎই বাড়ির ল্যান্ড নম্বরে একটা ফোন আসে

নীরা ফোনটা তুলেই অপর প্রান্ত থেকে নির্ঝরের কোনো বন্ধু বেশ উদ্দ্বীগ্ন কন্ঠে জানায় নির্ঝরের এক্সিডেন্ট হয়েছে।হাইওয়ের রাস্তা ধরে নির্ঝর বেশ জোড়ে গাড়ি চালাচ্ছিলো।অমনষ্ক থাকায় হটাৎই একটা ট্রাক এসে নির্ঝরের গাড়িটাকে ধাক্কা মেরে দেয়।নির্ঝরকে সেখানকার লোকাল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।অবস্থা তেমন ভালো না।
কথাটা শুনেই নীরা স্তবদ্ধ হয়ে যায়।হয়তো
এমন কিছুরই আশংকা করছিলো নীরা

ভাই যে অনু ভাবিকে কতেটা ভালোবাসে তা তো নীরার অজানা নয়।কথাটা শুনেই নীরা মেঝেতে ধপ করে বসে হাউ মাউ করে কেঁদে ওঠে।সবাই উদ্বীগ্ন হয়ে নীরাকে প্রশ্ন করছে কি কি হয়েছে??
নীরা চুপ চাপ কেঁদেই চলেছে!! মুখে কোনো কথা নেই!!

বাড়ি সুদ্ধো সবাই এখন হাসপাতালের বারান্দায় জমা হয়েছে।সবাই নির্ঝরের রুমের সামনে থাকলেও অনু দূরে এক কোণে চুপটি করে দাড়িয়ে আছে।
নির্ঝরের কেবিন থেকে ডাক্তার বের হতেই অনু গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যায় ডাক্তারের কাছে।

অনুকে এতেক্ষন নীরা একদম লক্ষ করে নি।কিন্তু এদিকে এগিয়ে আসাতে নীরা অনুকে দেখতে পায়।অনুকে দেখে নীরা রাগে ফুসতে থাকে।
-অসভ্য মেয়ে আবার কেন এসেছো এখানে??তোমার এক্স বফ কোই ও সরি তোমার নতুন বর সে কোথায়?দুজন মিলে তো আমার ভাইকে মেরেই ফেল্লে লজ্জা করলো না এখানে আসতে?কি নতুন তামাশা করতে এসেছো এখানে??
-নীরা এসব কি বলছো?নির্ঝর আমার স্বামী
-নীরা যা বলেছি ঠিকিই বলেছে তুমি তো দেখছি গাছেরও খাও তলার ও কুড়াও... অসভ্য বাজা মেয়ে মানুষ... আমার ছেলেকে ফুসলিয়ে ফাসকিয়ে আবার এসেছো নাটক করতে(নীরার মা)
-মা আমি তো....
-যাও এখান থেকে বের হউ।তুমি ভালোবাসার দাম দিতে জানো না।তোমার মতো মেয়ে ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না (নীরা)

নীরা কথাটা বলেই অনুকে ধাক্কা দেয় অনু নিচে পড়ে গিয়ে কান্না করতে থাকে।

ডাক্তার জানিয়েছে নির্ঝরের অবস্থা ভালো না।মাথায় খুব ব্যাথ্যা পেয়েছে।এছাড়া পায়েও খুব লেগেছে।অনেক ব্লিডিং হয়েছে রক্তের প্রয়োজন।

যখন সবাই চারদিক নির্ঝরের জন্য রক্ত খুজছিলো তখন কোথা থেকে সায়ন চলে আসে।সায়ন আর নির্ঝরের ব্লাডগ্রুপ সেম।সায়নই নির্ঝরকে রক্ত দেয়।

সায়ন নির্ঝীকে রক্ত দিয়েই মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়।কোনো কথা বলে নি।সায়ন বেশ কিছুক্ষন অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।বেশ খিটিয়ে খুটিয়ে দেখছে অনুকে।কেঁদে কেঁদে চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে।চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।ঠোটটা শুকিয়ে গেছে।
অনুকে দেখে মনে হচ্ছে তার দম যেন গলার কাছে বিঁধে আছে।প্রান পাখিটা ছট পট করছে।একটু ঊনিশ কুড়ি হলেই প্রান পাখিটা খাঁচা ছেড়ে পালাবে।

সায়ন আর অনুর সাথে কথা বলে নি শুধু একটিবার অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গিয়েছে।অনুকে এভাবে দেখতে মোটেও ভালো লাগছে না তার।

সায়ন চলে যেতে নিলে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে নীরা তাকে ছলছল চোখে দেখছে।
নীরার এরকম দৃষ্টি কেন যেন সায়নের বুকে গিয়ে বিঁধছে।
অনু তখন দূ
একটা চেয়ারে বসে বসে কাঁদছিলো।এইজগতের সাথে তার যেন কোনো সম্পর্কই নেই।অনু একরকম জমে গিয়েছে।

প্রায় দুদিন পর

নির্ঝরকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে।বলতে গেলে নির্ঝর এখন আউট অফ ডেঞ্জার

নির্ঝরের ঞ্গান ফিরতেই দেখে
নির্ঝরের মাথার কাছে বসে আছে নীরা। মা একটু দূরে বসে আছে।আর সিমি নির্ঝরের বা পাশে হাতটা ধরে বসে আছে।

নির্ঝর চোখ তুলে তাকাতেই দেখে সিমি হাতটা শক্ত করে ধরে আছে।নির্ঝর গোটা ঘরটায় দিকে একবার চোখ বুলায়।নির্ঝরের তৃষ্ঞার্ত চোখ দুটো কাউকে খুজছে।
অনু!!অনু কোথায়??তাহলে কি সে আসে নি?অনু কি জানে না আমি অসুস্থ??তাহলে কি সত্যি অনু আমাকে আর চায় না??তাহলে কি সত্যি অনুকে ছাড়ায় বাকি জীবনটা কাঁটাতে হবে??অনু কি আর ফিরবে না??

কথাগুলো মনে আসতেই নির্ঝরের বুকটা ধক করে ওঠে।
হয়তো তার ভালোবাসার সমাপ্তি ঘটতে চলেছে।এবার বোধয় সত্যিই সম্পর্কটাতে ইতি টানতে হবে।অনুকে মুক্তি দিতে হবে।

এতো শত ভাবনার মাঝে নির্ঝর বাম হাতে চাপ অনুভব করে।নির্ঝর বা পাশে তাকাতেই দেখে সিমি নির্ঝরের হাত ধরে আছে।নির্ঝর সিমির থেকে হাত সরিয়ে এদিক সেদিক তাকাতেই দেখে দরজার পাশে হালকা গোলাপি রঙের একটুকরো কাপড় দেখা যাচ্ছে।নির্ঝর একটু ভালো করে তাকিয়ে দেখে এটা করো শাড়ির আচল....

নির্ঝরের মুখে রাজ্য জয়ের হাসি....
নির্ঝর বেশ অস্পস্ট স্বরে ডাক দেয়
-অনু...!!!

কোথা থেকে অনু ঝড়ের গতিতে ছুটে এসে সিমিকে ধাক্কা মেরে সড়িয়ে দিয়ে নির্ঝরের বুকে আছরে পড়ে।
ঘটনাটা আকষ্মিক ঘটায় নীরা, নির্ঝরের মা হা হয়ে তাকিয়ে আছে।ততোক্ষনে অনু নির্ঝরের বুক ভাসিয়ে দিচ্ছে নিজের অশ্রু ধারায়

-যদি যেতে চাও আমায় নিয়ে যাও,তুমি হীন আমি আলোহীন আধার.....
তুমি হীন আমি অর্থহীন,অসমাপ্ত আমি জায়গা চায় আমি বাঁচতে চায় আমি আশ্রয় চাই।দিন না আমায় একটু জায়গা!!মি.নির্ঝর আমাকে আপনার বুকের বা পাঁশটায় একটু জায়গা দিবেন???

নির্ঝর মুচকি হেসে উওর দেয়....
-আমি পেরেছি তেমার বুকের বা পাশটায় নিজের নাম লিখতে.....!!!অনু ভালোবাসি!!!

অনু একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নির্ঝরের দিকে আর নির্ঝর অনুর দিকে।বাঁকি সবার দৃষ্টি এই দুজনের দিকে।কি হচ্ছে কি এখানে????

-নীরা আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই!!এই বিয়ে নিয়ে আমার আর কোনো আপত্তি নেই
-বাবাহ্ মি.সায়ন হটাৎ আমার প্রতি তোমার এতো দরদ??
-নীরা মা খালামুনি আর অ... সবাই চায় তোমাকে আমি বিয়েটা করি তাই.....
-ওওও সবাই বলেছে বলে বিয়ে করতে চাইছেন তাই তো??
সায়ন মাথা নিচু করে ফেলে।

[মাঝে বেশ কয়েক দিন কেটে গেছে। নির্ঝর অনুর সম্পর্কটা বেশ স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।এই ক দিন সিমি নিখোজ।সেদিন হাসপাতালেই সিমিকে শেষবারের মতো দেখা গেছে তারপর আর সিমির খোজ পাওয়া যায় নি।তা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথ্যা নেই। তবে নীরা আর সায়নের বিষয়টা এখনো থেমেই আছে।তবে কাল রাতে হটাৎই সায়ন নীরাকে ফোন করে ক্যাফেতে ডাকে।নীরা প্রথমে রাজি না হলেও ভালোবাসার ডাক এড়ানোর মতো সাধ্য নীরার নেই।হাজার মান অভিমানের পাহাড় জমে থাকলেও ভালোবাসা যখন হাতছানি দেয় তা এড়ানোর সাধ্য কি কারো আছে!!
নেই ভালোবাসা তো এমনই হয়!!

ক্যাফেতে মুখোমুখি বসে আছে নীরা আর সায়ন। বেশ কিছুক্ষন দুজন চুপ চাপ বসে আছে।সায়নই প্রথম কথা বলা শুরু করে।
নীরা মুখ ভার করে বসে আছে।সায়নও এখন মাথা নিচু করে বসে আছে।
নীরা কিছুক্ষন সায়নের দিকে অপলক তাকিয়ে থেকে উঠে যেতে নিলে সায়ন নীরার হাত ধরে নেয়
-কি হলো উওর দিলে না তো!!
-আপনার বুকের বা পাশটায় একটা নাম লিখা আছে তবে সে নাম আমার নয়।যে দিন আপনার হৃদয়ে আমার নাম লিখা হবে সেদিন৷ আসবেন।
-নীরা!!
-এতো দিন যখন আপনার জন্য অপেক্ষা করেছি বাঁকি জীবনটাও অপেক্ষা করেই কাটাতে পারবো!!
-আমার সময় লাগবে!!
-নিন না যতো খুশি সময় নিন আপনার জন্য অপেক্ষা করার অভ্যেস আছে আমার।না হয় আরো কিছু দিন অপেক্ষা করলাম.....

সায়ন চুপ চাপ মাথা নিচু করে আছে।সায়নকে চুপ থাকতে দেখে নীরা উঠে যায়।তবে এবার।আর সায়ন নীরাকে আটকায় নি।নীরাও আর পেছন ফিরে তাকায় নি!!
পেছন ফিরে তাকিয়ে কি লাভ।এখন তো অপেক্ষার পালা।অপেক্ষা করতে হবে ভবিষ্যতের জন্য!!অপেক্ষা করতে হবে তার ভালোবাসার জন্য।অপেক্ষা করতে হবে ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পাওয়ার জন্য...!!
এ অপেক্ষার স্বাদ অন্য রকম...এ অপেক্ষার মাঝেও যেন এক তৃপ্তি রয়েছে।
হাজার চাওয়ার মাঝে একটি চাওয়ার জন্য অপেক্ষা.........
শুধু অপেক্ষা......

সাওয়ার নিয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে আছে অনু।আকাশটা কেমন মেঘলা মেঘলা ঠেকছে।ধবধবে মেঘের আড়ালে রক্তিম সূর্যটা মাঝে মাঝে উকি দিচ্ছে।
মেঘের আড়ালে সূর্যটা লুকোচুরি খেলছে।অনুর কাছে বেশ লাগছে এই আকাশটা

-যখন তোমার মনের আকাশে মেঘ জমবে আমার কাছে এসো আমি মন ভালো করে দিবো!!
নির্ঝরের কথা শুনে অনু চমকে গিয়ে চোখ বড় বড় করে তাকায়।
নির্ঝরের মুখে দুষ্টামি মার্কা হাসি।
অনু নির্ঝরের দিক থেকে চোখ সড়িয়ে নিয়ে আবার আকাশের দিকে তাকায়।
এখন সে আকাশ দেখতে ব্যস্ত।অনু কিছুতে মনোযোগ দেওয়ার সময় নেই।
-কি হলো কথা বলো না কেন?

নির্ঝর অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে......
-উহু
-তাহলে চুপ করে আছো কেন?আর এখানে এভাবে দাড়িয়ে কি দেখছো??
-আকাশ.... দেখুন নির্ঝর আল্লাহ্ সবকিছু কি সুন্দর পরিপূর্ন করে সাজিয়ে দিয়েছে। নীল আকাশ সাদা মেঘ লাল সূর্য.....আর জমিনে মাটির সাথে সবুজ গাছ পালা.....সবাই সবাইকে পেয়ে কি সুন্দর পূর্ণ...
-হুম্ম তো???
-আমি পূর্ণ নই

(অনুর গাল বেয়ে এক ফোটা পানি নির্ঝরের হাতে পরে।নির্ঝর চমকে যায়।অনু কাঁদছে।অনুকে পেছন থেকে সামনে ঘুড়িয়ে দেয় নির্ঝর।তারপর অনুর ডান হাতটা শক্ত করে ধরে)
-কি হয়েছে কাঁদছো কেন???
-নির্ঝর আমি পূর্ণ নই আল্লাহ হয়তো আমাকে কখনো পূর্ণতা দেবে না!!
-অনু কি হয়েছে..??
-আমি মা হতে চাই নির্ঝর আপনার সন্তানের মা হতে চাই!!

অনু কাঁদতে কাঁদতে মেঝেতে বসে পড়ে.......

নির্ঝর দাড়িয়ে আছে।পায়ে খুব ব্যাথ্যা তাই নির্ঝর চেয়েও বসেতে পারছে না.....তবে নির্ঝর একটু নিচু হয়ে অনুর হাত দুটো শক্ত করে ধরে.....

অনুকে টেনে তোলে
-কাঁদছ কেন পাগলি হবে সব হবে তুমি আমার সন্তানের মা হবে....দেখো আমাদেরও ফুটফুটে মিষ্টি একটা বেবি হবে ঠিক তোমার মতো

(কথাটা বলেই নির্ঝর অনুর নাকটা টেনে দেয়)

অনু ফিক করে হেসে দেয়
-সত্যি???
-হুম্ম......
অনু নির্ঝরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
-আউউউউউ....
-কি হলো???
-ব্যাথ্যা.....বাবাহ্ অনু তুমি তো দিন দিন মোটা হয়ে যাচ্ছো!!
-কিহ্ আমাকে মোটা বললেন??
-কোই না তো!!🤐🤐🤐🤐
-😒😒😒😒
-😓😓😓
-সরুন....
অনু নির্ঝরকে ধাক্কা মেরে ঘরে চলে যেতে নিলে নির্ঝর অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে......

-অনু...আল্লাহ্ যার ভাঙ্গে যতোটুকু রেখেছে তাকে ততোটুকুতেই সুখে থাকতে হয়।তুমি পূর্ণতা চাও আমিও সন্তান সুখ চাই আল্লাহ্ যদি চায় তো অবশ্যয় হবে সব হবে তুমি ও মা হবে আমিও বাবা হবো.....আমাদের ঘরে ছোট্ট ছোট্ট এ জোড়া পা ছুটাছুটি করবে.......

অনু কাঁদতে কাঁদতে নির্ঝরকে জড়িয়ে ধরে....
নির্ঝরও অনুকে ধরে কপালে চুমু এঁকে দেয়।

এদিকে সায়ন মন স্থির করে নিয়েছে সে নীরাকেই বিয়ে করবে।অনু তো বেশ আছে তার নতুন সংসারে তাহলে সে কেন দুঃখ নিয়ে বাঁচবে তাকেও সুখি হতে হবে।আর বর্তমানে তার সুখ মানেই নীরা। কিন্তু নীরা তো....

এই নীরাই তো ছোটবেলায় কতো পাগলামো করতো।যখন সায়ন খালামুনির বাসায় যেতো তখন নীরা বার বার নানা অছিলায় তার ঘরে আসতো।বার বার দরজার আড়াল থেকে উকি ঝুকি মারতো।আজ এই নীরাই কি না তাকে এড়িয়ে চলছে......

এতো চিন্তার মাঝে হটাৎই সায়নের ফোনটা বেজে উঠে.....
-হ্যালো সায়ন
-হুহ
-আমি সিমি বলছি
-বুঝতে পেরেছি...
-আমার একটু তোর সাহায্য চাই শেষবারের মতো....
-what???
-হুহ।প্লিজ দোস্ত এটাই শেষবার.......

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.