রহস্যময় স্বামী নামক এক অজানা চরিত্র! পার্ট ৩
আগের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
নির্ঝর ছাড়ুন লাগছে...
নির্ঝর অনুর হাতটা পিছনে পেঁচিয়ে রেখেছে।।
-অনু কি পাগলামো হচ্ছে এসব??বলেছি না তুমি আমাকে ছাড়া কোথাও যেতে পারবে না!!
অনু বাহিরে সিমি আর নির্ঝরকে একসাথে দেখে ঘরে এসে ব্যাগ পত্র গোছাতে থাকে।অনেক হয়েছে।এ বাড়িতে অনু আর এক মুহূর্ত থাকবে না।কিন্তু নির্ঝর এসে অনুকে আটকে দেয়।
-দেখুন নির্ঝর ছাড়ুন আমাকে আমি আপনার মতো চরিত্রহীন লোকের সাথে থাকতে চাই না!!
কথাগুলো বলতে বলতে অনু ছটফট করছে।বার বার ছোটার চেষ্টা করছে নির্ঝরের হাত থেকে।
-এক চড় লাগাবো এতো রাতে কি নাটক শুরু করেছো??কোথায় যাবে তুমি??
-আমার বাড়ি!আপনার মতো চরিত্রহীন লোকের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।দয়া করে আপনি আপনার এক্স ওর প্রেসেন্ট গার্লফ্রেন্ড নিয়েই থাকুন আমি আমার বাবার কাছে চলে যাবো।।
নির্ঝর অনুকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দেয়।তারপর অনুকে বিছানায় চেপে ধরে ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।
অনু নির্ঝরকে ইচ্ছে মতো ধাক্কাচ্ছে,কিল ঘুষিও মারছে কিন্তু নির্ঝরকে একচুল নড়াতে পারছে না।
একটা সময় নির্ঝর অনুকে ছেড়ে দিয়ে ওঠে দাড়ায়
-তুমি চাও বা না চাও তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।আমাকে ছাড়া এক পা এ বাড়ির বাহিরে দিয়ে দেখো ঠাং ভেঙ্গে ঘরে ফেলে রাখবো।তবুও কোথাও যেতে দিবো না।
কথাগুলো বলেই নির্ঝর হাটা ধরে। অনু বিছানায় গুটি শুটি মেরে বসে আছে।নির্ঝর কি মনে করে আবার ফিরে আসে।অনুর সামনে হুট করে হাটু গেড়ে বসে অনুর হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলতে শুরু করে...
-সৌমিতা আমার বন্ধু খুব ভালো বন্ধু।ছোটবেলা থেকেই আমরা একই স্কুলে পড়তাম আর সেখান থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব।সৌমিতাকে আমি ছোট্ট করে সিমি বলি।সেই ছোট্ট বেলা থেকেই আমরা একসাথে বড় হয়েছি।সিমি আমি আর সা....
যাই হোক তুমি যেমনটা ভাবছো তেমন কিছুই নেই আমাদের মাঝে আমারা জাস্ট ফ্রেন্ড।
কথাটা বলেই নির্ঝর অনুর হাতে একটা চুমু এঁকে দেয়। তারপর উঠে দাড়ায়........
নির্ঝর এক দৃষ্টিতে অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।অনুও ছলছল চোখে নির্ঝরের
"অনু আমার জীবনে প্রেম বলো আর ভালোবাসা বলো তা একবারই এসেছে।আর সেই একজন হলে তুমি।তুমি ছাড়া না কেউ কখনো আমার মনে ছিলো না কেউ কখনো আসবে।অনু বড্ড ভালোবাসি তোমায়"
কথাটা বলেই নির্ঝর বারান্দার দিকে হাটা ধরে তার বড্ড সিগারেটের তেষ্টা পেয়েছে।চেইন স্মোকারদের এই এক বিপদ একটু পর পর সিগারেটের নেশা মাথায় চড়ে বসে......
তবে নির্ঝর চেইন স্মোকার হলেও সিগারেটের নেশা তাকে যতোটা ঘায়েল করতে পারে নি তার চেয়ে বেশি ঘায়েল করেছে অনুর নেশা।
অনুর কথা বলা, চলা ফেরা,হাসি দুষ্টোমি সব নির্ঝকে বার বার ঘয়েল করেছে......
একটু মন দিয়ে পড়ুন--
পরবর্তী অংশ অর্থাৎ সবগুলো পর্ব এই I'd তে দেয়া হবে, পুরো গল্পটি পড়তে রিকুয়েস্ট দিয়ে সাথেই থাকুন। ভালো ভালো গল্প পেতে এই আইডির সাথেই থাকুন!অনেক সময় গ্রুপে গল্প পোস্ট হয় না। তাই গ্রুপে গল্প পেতে সমস্যা হলে ফলো অথবা রিকুয়েস্ট দিয়ে রাখতে পারেন ধন্যবাদ।
অনু এতোক্ষন কাঁদছিলো কিন্তু নির্ঝরের বলা শেষ কথাগুলো কানে আসতেই ঠোটের কোনে ঈশৎ হাসির রেখা ফুটে ওঠলো।কি জানি কি আছে নির্ঝরের সেই ভালোবাসি কথাটায়।এতো দিন নির্ঝরের কথাটা অসহ্য লাগলেও এখন বেশ ভালোই লাগে।।
জ্বানালার পাশে বসে আছে সায়ন।বার বার নির্ঝরের ফোনে ফোন করছে কিন্তু গতকাল হটাৎই ফোনটা কাটার পর প্রত্যেক বারই নির্ঝরের ফোনটা সুইট ওফ বলছে।
সায়নের মাথাটা হাং হয়ে আছে।কাল যখন নির্ঝকে ফোন করেছিলো তখন কোনো একটা মেয়ে ফোন ধরেছিলো।গলাটা বড্ড চেনা চেনা লাগছে সায়নের কাছে।হটাৎই নেটওয়ার্ক প্রবলেম তাই ভালোমতো কিছু শোনা যাচ্ছিলো না।
সায়নের কেন যেন মনে হচ্ছে ওটা অনুর গলা ছিলো।
কিন্তু নির্ঝরের ফোনে অনু কি করে আসবে......
অনু!!
একয়দিন সায়ন অনুকে নিয়ে এতো ভেবেছে যে শুতে গেলেও অনু বসতে গেলেও অনু।হয়তো মনের ভূল।।কথাগুলো নিজেই নিজেকে বলছিলো সায়ন
বাহিরে স্নো ফল হচ্ছে।
সায়ন এক মনে বাহিরে সাদা তুলোর মতো স্নো গুলো দেখছে।
অনুর বড্ড ইচ্ছে ছিলো হ্যানিমুনে এরকম একটা জায়গায় আসবে।
আর সারা রাত জ্বানালার পাশে বসে স্নোফল দেখবে।
ওহ্ ম্যাডামের আবদার সারা রাত সায়নকেও অনুর পাশে ঠায় দাড়িয়ে থাকতে হবে।
কি আবদার বাবা!!
সারা রাত নাকি দুজন হাত ধরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে স্নো ফল দেখবে
সায়ন তো অনুর এমন আবদার শুনে হেসে দেয়।
অনুতো রাগে লাল হয়ে গিয়েছিলো।
অনু যখন রেগে যায় তখন অনু ফর্সা গাল দুটো গোলাপী রং ধারন করে আর নাকের মাথাটা লাল হয়ে যায় তাতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে।
সায়ন কতো বার দুষ্টামি করে অনু নাক টেনে দিতো অনু তো আরো বেশি রেগে যেতো.....
অতীতের কথা মনে পড়তেই সায়ন হেসে দেয়।
"অনুকে তোমাকে নিয়ে কতো স্বপ্নই না ছিলো।কিন্তু মাতৃ আগ্ঞা উপেক্ষা করার সাহস বা স্পর্ধা কোনোটাই আমার ছিলো না।আমাকে ক্ষমা করো"
কথাগুলো ভাবতেই সায়নের ফোন বেজে ওঠে।
মোবাইলের স্ক্রিনে সৌমিতা নাম আর সায়ন,সিমি আর নির্ঝরের ছবিটা ভেসে ওঠে.......
-এভাবে যখন তখন গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পরেন কেন শুনি??লজ্জা করে না??
নির্ঝর অনুর কথায় মুচকি হেসে অনুকে বেশ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।তারপর অনুর ঘাড়ে মুখ গুজে একটা গভীর চুমু এঁকে দেয়।
অনু গোসল করে আয়নার সামনে চুল আচড়াচ্ছিলো হটাৎই নির্ঝর কোথা থেকে এসে অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
ব্যাস!!অনু তো রেগে মেগে আগুন!!
-এসব ঢং আমার ভালো লাগে না।
অনু নির্ঝরের থেকে একটু সরে যেতেই নির্ঝর অনুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এখন নির্ঝরের হাতটা অনুর নাভি বরাবর চলে গেছে।
তবে এখন আর অনুর আগের মতো অসহ্য লাগে না।বরং অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।
একেবারেই অন্যরকম।মাঝে মাঝে তো ভালোলাগা মন্দ লাগা সব মিলে মিশে এক হয়ে যায়।
নির্ঝর নিজের ইচ্ছে মতো অনুর পেটে হাতটা স্লাইড করছে আর অনু চোখ বন্ধ করে আছে।
নির্ঝর অনুর ঘাড়ে থুতনি লাগিয়ে আয়নার অনুর প্রতিবিম্ব দেখছে।।।
নির্ঝরের দৃষ্টি অনুর গোলাপি ঠোঁটে আটকে আছে....।।
নির্ঝর অনুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে অনুর ঠোটের দিকে এগুতেই.....
হটাৎই সিমির আগমন ঘটে।
সিমিকে হুট করে ঘরে ঢুকতে দেখে নির্ঝর অনু দুজনেই চমকে যায়।
অনু একরম নির্ঝরের কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে যায়।।
সিমি হতম্ভের মতো দাড়িয়ে আছে।যেন সে হটাৎই খুব বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে।
-বড্ড ভুল সময় চলে এসেছি মনে হয়।
(নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে)
নির্ঝর কি বলবে বুঝতে পারছে না।সে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।বোধয় খুব লজ্জা পেয়েছে নয়তো অন্য কিছু।অনুই বলে ওঠে
-ইয়ে মানে না না!!
-সরি
-সরি কেন বলছো??
-আসলে আগে কখনো এঘরে ঢোকার জন্য নক করার প্রয়োজন পরেনি তবে এখন থেকে পরবে সেটা বুঝতে পারি নি ....
বাই দ্যা ওয়ে সরি গাইছ। ক্যারি ওন।
কথাগুলো বলেই সিমি সেখান থেকে চলে যায়।
অনুর কেন যেন খুব হাসি পাচ্ছি।রাজ্য জয়ের হাসি।যেন সে গোটা রাজ্যটাকেই জয় করে ফেলেছে।
না না সিমির মুখটা দেখে অনুর খুব হাসি পাচ্ছে।কিন্তু কেন?
কি জানি!!
নির্ঝর অবাক চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে.....
-আপনি দেখছি লজ্জা পাচ্ছেন...
-ইয়ে মানে সিমি এভাবে...
-হয়েছে থাক!!
কথাগুলো বলেই অনু নিচে চলে যায়।সেই দুপুরে অনু ঘরে ঢুকেছে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে গেল আর ঘরের বাহিরে বের হয় নি অনু।
এতোটা সময় অনু নির্ঝরের কাছেই ছিলো।।।
আজ বাড়িতে রমরমে ব্যপার।নীরা কলেজ ট্যুর শেষ করে বাড়ি ফিরেছে।খুব তাড়াতাড়ি তার বিয়েও নাকি হয়ে যাবে।
দুই এক দিনের মধ্যে ছেলে পক্ষ আসবে পাকা কথা বলতে নয় একে বারে বিয়ের কাবিন করে নীরাকে নিয়ে যাবে....।।
অনু নিচে নামতেই দেখে নীরা সোফাই পা তুলে বসে আছে
অনুকে দেখে নাক ফুলিয়ে বলতে থাকে
-ভাবি সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি কোই তুমি তো নিচেই নামো না!!
অনু মুচকি হেসে নীরার পাশে গিয়ে বসে পড়ে
-ননদীনী গো আমি কি জানতাম তুমি এসেছো জানলে তো গোসল টোসল বাদ দিয়ে ছুটে তোমার কাছে চলে আসতাম!!
-ওয়েট ওয়েট এই বিকেল বেলা গোসল কি ব্যাপার হুম্ম??
-অনেক ব্যপার আছে তবে তোমাকে বলা যবে না...!!
কথাটা বলেই অনু হেসে দেয়।
-উহু বলো না!!
-হুম্ম বললে কি আর বুঝবে দুদিন পর তোমারও দিন আসছে!!
-মানে??
-মানে জানো না বুঝি??
-তুমি ও না!!
-তা প্রেম ট্রেম করে না কি!!
-ওবাবা প্রেম একদম ই না।খালামুনির ইচ্ছে আমাকে তার ছেলের বউ করবে তাই....
(কথাটা বলতেই নীরা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো)
-খালামুনি মানে??
-মানে তুমি জানো না??
-কোই না তো!!
-ভাইয়া তোমাকে কিছুই বলে নি??
-না রে বাবা!!
-সে আমার বড় খালামুনির ছেলে!!
-এবাবা তাই নাকি?? তাহলে তো প্রেম ট্রেম জমিয়ে করেছো!!তা কতোদিনের প্রেম শুনি?
-নাহ্ গো ভাবি সে তো আমাকে পিচ্চু ছাড়া কখনো ডাকেই নি।তারমতে আমি নাকি তার বোনে মতো!!
-তুমি লাইন মারার চেষ্ট করেছো??
-হুম্ম পাত্তা দেয় নি!!
-ধুর কে বলেছে সে তোমাকে বোন ভাবে!! তার মনেও হয়তো তোমাকে নিয়ে কিছু ছিলো, না হলে বিয়ে করছে কেন...??
নীরা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে....
-ধূর!!
-হুম্ম তা ভাই সোহাগী ননদীনী দুদিন পর বর সোহাগী হবে!!
-ভাবি চুপ করবা??
-তা তার নাম কি??
-নাম তো.....
নীরা সিড়ির দিকে তাকাতেই দেখে নির্ঝর আর সিমি একসাথে সিড়ি দিয়ে নামছে....
নীরা অনুর দিকে তাকিয়ে বলে...
-এভাবে বসে না থেকে বরকে একটু আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখো।তোমার বর যা হ্যান্ডসাম যখন তখম চুরি হয়ে যাবে....!!এমনিতেও অনেকেরই নজর রয়েছে তোমার বরের উপর...!!
(নির্ঝর আর সিমির দিকে ইশারা করে)
অনু একবার তাকাতেই নির্ঝরের চোখে চোখ পড়ে যায়...
অনু মুখ ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।তবে নির্ঝর বেশ সিরিয়াস লুকে আছে!
অনু বসা থেকে ওঠে দাড়াতেই কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে আবার পড়ে যায়....
নির্ঝর অনুর সামনে এসে দাড়িয়ে আছে।অনু ধাক্কাটা নির্ঝরের সাথেই খেয়েছে
নির্ঝর গম্ভীর মুখে অনুর সামনে দাড়িয়ে আছে....
-অনু
-হুম্ম
-তৈরী হয়ে নাও
-মানে
-মানে আমরা এখন বেরুবো
-কিন্তু কোথায়??
-তোমার বাসায়
-মানে??
-(...)
-কেন??
-এমনি!!তোমাকে তিন দিনের জন্য তোমার মার কাছে দিয়ে আসবো।তিন দিনপর আবার নিয়ে আসবো!!
-কিন্তু কেন??দুদিন পরই তো নীরার হয়তো আকদ হয়ে যাবে!!
-তো??
-তো মানে আমি থাকবো না??
-না তুমি থাকবে না
-আমি যাবো না....
নির্ঝর রাগী চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে বেশ ঝাঝালো গলায় বলে ওঠে.....
-তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও.... আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোমাকে গাড়িতে দেখতে চাই।
-কিন্তু
কথাটা বলেই নির্ঝর দমদম করে বেরিয়ে চলে যায়!!
অনু নীরা দুজনই মন খারাপ করে বসে আছে।নির্ঝর এমন করছে কেন??
-আপনি খুব বাজে একটা লোক মি.নির্ঝর চৌধুরী!!
গাড়িতে মুখ গোমড়া করে বসে আছে অনু।নির্ঝর ড্রাইভ করছে।
অনু তো তখন থেকেই নির্ঝরকে যা নয় তাই বলে যাচ্ছে কিন্তু তাতে নির্ঝরের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই সে তো চোখ মুখ লাল করে বসেই আছে।
নির্ঝরের গাড়িটা অনুদের বাড়ির সামনে গিয়ে থামে।
নির্ঝর গাড়ি থেকে নেমে অনুর সামনে দরজাটা খুলে দিয়ে অনুকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়।
-নামো
-(...)
-নামবে কি না??
-না নামবো না!!
অনু নির্ঝরের দিকে একবার তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে নেয়!!!
নির্ঝর রেগে গিয়ে অনুর হাত ধরে জোড় করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়।
অনুতো রেগে মেগে আগুন!!নির্ঝরের হাতে একটা খামছি দিয়ে বলতে শুরু করে...
-আপনি একটা লুচ্চু,গন্ডার,বদমেজাজী হাতি,ছাগল সব! সব! সব আপনি....
-চুপ!!
-ইউ চুপ!!!আমি নীরার বিয়েটাই দেখতে পারলাম না.....(এ্যা...এ্যা)
-অনু এখন তো বিয়ে হচ্ছে না শুধু আকদ হচ্ছে।।
-তো আমি নীরার আকদে থাকতে চাই মি.নির্ঝর!!আমি না ঐ বাড়ির একমাত্র বউ!!
-তাই বুঝি??
-(....)
-কবে থেকে তুমি নিজেকে আমার বউ ভাবতে শুরু করলে??
-আমি তো!!
-তুমি নীরার আকদে থাকতে পারবে না তোমার কষ্ট হবে আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও....
-কেন??কেন হবে আমার কষ্ট??
-জানি না যাও তুমি বাড়িতে আমি পরে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো!!
কথাগুলো বলেই নির্ঝর পেছনে হাটা ধরে....!!!
-আপনি খুব বাজে মি.চৌধুরী!!আপনার থেকে সায়ন....
নির্ঝর একবার অনুর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়িতে চড়ে বসে।
অনু বোকার মতো দাড়িয়ে আছে।
নির্ঝর আর একবারও পেছন না ফিরে চলে যায়!!
অন্য দিন নির্ঝরের সামনে সায়নের কথা বললে রেগে যেতো কিন্তু আজ নির্ঝরের চোখে কোনো রাগ ছিলো না।কি জানি কি ছিলো ঐ দুই চোখে।যা ছিলো তা নীরার বোঝার বাহিরে!!
অনু বাড়ি ভেতরে আসতেই সবাই অনুকে দেখে অবাক।।সবাই তখন ড্রইং রুমে বসে চা খাচ্ছিলো!!
অনুর মা অনুর দিকে এগিয়ে আসে।
-কিরে তুই এই ভর সন্ধ্যেবেলা এভাবে??কি হয়েছে??জামাই কোথায়??আসে নি??বাড়িতে কি কিছু হয়েছে???তুই আবার কোনো কান্ড বাধাস নি তো??
অনু মায়ের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে
-কি রে চুপ করে আছিস কেন??
-তোমার দেখছি আমাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন।তোমার বা তোমাদের কোনো প্রশ্নের উওরই আমি দিবো না।
-মানে??
-মানে সব প্রশ্ন তোমার জামাইকে কোরো সেই আমাকে রেখে গেল!!কেন রেখে গেলো জানি না তাই তোমারা তাকেই প্রশ্ন করো হয়তো তোমাদের বলবে আমাকে রেখে যাওয়ার কারণটা।
অনুর বাবা এতো সময় অনুর কথা শুনছিলো।এবার বলতে শুরু করে
-নির্ঝর এসেছিলো অথচ আমাদের জানায় নি।বাড়ির দরজা থেকে ঘুড়ে চলে গেল!!তুমি তাকে ভেতরে আসতে বলো নি কেন??
-প্রয়োজন বোধ করি নি তাই!!
কথাগুলো বলেই অনু চলে যায় নিজের ঘরে।চোখ দুটো ছল ছল করছে।নির্ঝর তাকে এভাবে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেল!!
এই নাকি স্বামী.....
আজ দুদিন হলো নির্ঝরের সাথে অনুর কথা হয় নি।নির্ঝর একটি বারের জন্যেও অনুকে ফোন করে নি।অনুও ফোন করার প্রয়োজন বোধ করে নি!!
যে কথা বলতে চায় না তাকে জোড় করার প্রয়োজন নেই!!
অনু বারান্দায় চা হাতে দাড়িয়ে আছে।মনটা যে বড্ড খারাপ।
বোধয় এই আজকেই নীরার আকদ।
ইশ্ যদি থাকতে পারতাম!!
অনুর বুকে বড্ড অভিমান জমেছে নির্ঝরের উপর।একেই তো এভাবে রেখে গেলো তার উপর একটিবার খবরও নিলো না।
কি প্রেমিক রে বাবা!! না না প্রেমিক তো নয়।প্রেমিক শব্দের অর্থটা অনেক গভীর।প্রেমিক মানে প্রেমিকার মেঘলা আকাশে একটা ছোট্ট সূর্য।
প্রেমিক মানে ঘন বর্ষন যে বর্ষার প্রত্যেকটা ফোটা প্রেমিকার হৃদয়কে ভিজিয়ে দেয়। প্রেমিক মানে প্রেমিক মানে একটা বিশাল সাগর যে সাগরে প্রত্যেকটা প্রেমিকই হাসি মুখে ডুবে যেতে পারে....আর প্রেমিক মানে.....
ধূর প্রেমিক নিয়ে এতো ভেবে কি লাভ সে জায়গাটা তো সায়নের ছিলো।আর নির্ঝর সে তো প্রেমিক নয় সে তো শুধুই স্বামী!!
সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে "নীল ক্যাফের ভালোবাসা" পেজে পাবেন।
আচ্ছা স্বামীরা কি প্রেমিক পুরুষ হতে পারে না??নাকি বউয়েরা প্রেমিকা হতে পারে না??
না কি তাদের প্রেমিক প্রেমিকা হতে মানা?? কে জানে!!!!
অনু নিজের মনেই কথা গুলো ভাবছিলো।মায়ের ডাকে হুস ফিরে অনুর পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে মা দাড়িয়ে আছে।
-কিছু বলবে??
-নির্ঝরের সাথে কি মনমালিন্য হয়েছে??
অনু মুচকি হেসে জবাব দেয়
-যার সাথে মনেরই কোনো সম্পর্ক নেই তার সাথে আবার....বাদ দাও সে সব!!
-তাহলে??সায়নকে নিয়ে সমস্যা??
-জানি না!!
-জানো না মানে নির্ঝর তোমার স্বামী!!
-তো
-অনু (ধমকের সুরে)
অনু মায়ের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।
-সায়নকে তোমারা কেন তাড়িয়ে দিলে।সায়নকে যে আমি বড্ড ভালোবাসতাম।
-আর নির্ঝর তোকে বড্ড ভালোবাসে
-কিন্তু মা সে তো একবারও আমার খবরই নিলো না!!
অনুর মা মুচকি হেসে অনুর মাথায় হাত বুলা বুলাতে বলে
-অভিমান এক তরফা ভালো যখন অভিমান দুই তরফা হয়ে যায় তখন সম্পর্কে ফাটল ধরে.....
কথাগুলো বলেই অনুর মা চলে যায়। যেতে যেতে অনুর মা পেছন ফিরে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলে
-তোমার ওনি রোজ দিনে দুই করে ফোন দিয়ে তোমার খোজ নেয়।।।
কোই তুমি তো তাকে একবারও ফোন দাও না...
অনুর মা কি বলতে চাইছে তা হয়তো অনু বুঝতে পেরেছে।
অনু কি মনে করে ফোনটা হাতে নিয়ে নির্ঝরকে ফোন করে একবার রিং হয়ে কেটে যায়
দিত্বীয়বার রিং হতেই রিসিভ করে নেয়
অনু কথা বলতে যাবে তার আগেই অপর প্রান্ত থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে।
-হ্যালো
অনু বাকরুদ্ধ এতো সিমির গলা!!
-সিমি তুমি নির্ঝর কোথায়
-কে অনু!! নির তো ওয়াশরুমে সাওয়ার নিচ্ছে।
-ওওও রাখছি
-ওকে
অনু ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানায় ছুরে মারে।
খুব রাগ হচ্ছে ভিষন রাগ হচ্ছে।রাগে গা জ্বালছে।এই মেয়েটা যেমন লুচু আবার বরটাও তেমন লুচু......
আচ্ছা সত্যিই কি সিমির সাথে নির্ঝরের কোনো সম্পর্ক আছে??
-এ্যা এ্যা এই লুচু ব্যাটার সাথে যদি সিমি না না তখন আমার কি হবে???
আজকাল অনু বড্ড বেশি নির্ঝরকে নিয়ে ভাবে।তবে কখনো সখনো অনুর মেঘলা আকাশে সায়ন উঁকি দেয়।সায়নের কাছে অনুর একটাই প্রশ্ন সে কেন অনুকে একা ফেলে চলে গেল????
-অনুর বিষয়ে সবটা জানে অ্যান্টি??
নির্ঝর অনুর হাতটা পিছনে পেঁচিয়ে রেখেছে।।
-অনু কি পাগলামো হচ্ছে এসব??বলেছি না তুমি আমাকে ছাড়া কোথাও যেতে পারবে না!!
অনু বাহিরে সিমি আর নির্ঝরকে একসাথে দেখে ঘরে এসে ব্যাগ পত্র গোছাতে থাকে।অনেক হয়েছে।এ বাড়িতে অনু আর এক মুহূর্ত থাকবে না।কিন্তু নির্ঝর এসে অনুকে আটকে দেয়।
-দেখুন নির্ঝর ছাড়ুন আমাকে আমি আপনার মতো চরিত্রহীন লোকের সাথে থাকতে চাই না!!
কথাগুলো বলতে বলতে অনু ছটফট করছে।বার বার ছোটার চেষ্টা করছে নির্ঝরের হাত থেকে।
-এক চড় লাগাবো এতো রাতে কি নাটক শুরু করেছো??কোথায় যাবে তুমি??
-আমার বাড়ি!আপনার মতো চরিত্রহীন লোকের সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব না।দয়া করে আপনি আপনার এক্স ওর প্রেসেন্ট গার্লফ্রেন্ড নিয়েই থাকুন আমি আমার বাবার কাছে চলে যাবো।।
নির্ঝর অনুকে ধাক্কা মেরে বিছানায় ফেলে দেয়।তারপর অনুকে বিছানায় চেপে ধরে ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।
অনু নির্ঝরকে ইচ্ছে মতো ধাক্কাচ্ছে,কিল ঘুষিও মারছে কিন্তু নির্ঝরকে একচুল নড়াতে পারছে না।
একটা সময় নির্ঝর অনুকে ছেড়ে দিয়ে ওঠে দাড়ায়
-তুমি চাও বা না চাও তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে।আমাকে ছাড়া এক পা এ বাড়ির বাহিরে দিয়ে দেখো ঠাং ভেঙ্গে ঘরে ফেলে রাখবো।তবুও কোথাও যেতে দিবো না।
কথাগুলো বলেই নির্ঝর হাটা ধরে। অনু বিছানায় গুটি শুটি মেরে বসে আছে।নির্ঝর কি মনে করে আবার ফিরে আসে।অনুর সামনে হুট করে হাটু গেড়ে বসে অনুর হাতটা নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলতে শুরু করে...
-সৌমিতা আমার বন্ধু খুব ভালো বন্ধু।ছোটবেলা থেকেই আমরা একই স্কুলে পড়তাম আর সেখান থেকেই আমাদের বন্ধুত্ব।সৌমিতাকে আমি ছোট্ট করে সিমি বলি।সেই ছোট্ট বেলা থেকেই আমরা একসাথে বড় হয়েছি।সিমি আমি আর সা....
যাই হোক তুমি যেমনটা ভাবছো তেমন কিছুই নেই আমাদের মাঝে আমারা জাস্ট ফ্রেন্ড।
কথাটা বলেই নির্ঝর অনুর হাতে একটা চুমু এঁকে দেয়। তারপর উঠে দাড়ায়........
নির্ঝর এক দৃষ্টিতে অনুর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।অনুও ছলছল চোখে নির্ঝরের
"অনু আমার জীবনে প্রেম বলো আর ভালোবাসা বলো তা একবারই এসেছে।আর সেই একজন হলে তুমি।তুমি ছাড়া না কেউ কখনো আমার মনে ছিলো না কেউ কখনো আসবে।অনু বড্ড ভালোবাসি তোমায়"
কথাটা বলেই নির্ঝর বারান্দার দিকে হাটা ধরে তার বড্ড সিগারেটের তেষ্টা পেয়েছে।চেইন স্মোকারদের এই এক বিপদ একটু পর পর সিগারেটের নেশা মাথায় চড়ে বসে......
তবে নির্ঝর চেইন স্মোকার হলেও সিগারেটের নেশা তাকে যতোটা ঘায়েল করতে পারে নি তার চেয়ে বেশি ঘায়েল করেছে অনুর নেশা।
অনুর কথা বলা, চলা ফেরা,হাসি দুষ্টোমি সব নির্ঝকে বার বার ঘয়েল করেছে......
একটু মন দিয়ে পড়ুন--
পরবর্তী অংশ অর্থাৎ সবগুলো পর্ব এই I'd তে দেয়া হবে, পুরো গল্পটি পড়তে রিকুয়েস্ট দিয়ে সাথেই থাকুন। ভালো ভালো গল্প পেতে এই আইডির সাথেই থাকুন!অনেক সময় গ্রুপে গল্প পোস্ট হয় না। তাই গ্রুপে গল্প পেতে সমস্যা হলে ফলো অথবা রিকুয়েস্ট দিয়ে রাখতে পারেন ধন্যবাদ।
অনু এতোক্ষন কাঁদছিলো কিন্তু নির্ঝরের বলা শেষ কথাগুলো কানে আসতেই ঠোটের কোনে ঈশৎ হাসির রেখা ফুটে ওঠলো।কি জানি কি আছে নির্ঝরের সেই ভালোবাসি কথাটায়।এতো দিন নির্ঝরের কথাটা অসহ্য লাগলেও এখন বেশ ভালোই লাগে।।
জ্বানালার পাশে বসে আছে সায়ন।বার বার নির্ঝরের ফোনে ফোন করছে কিন্তু গতকাল হটাৎই ফোনটা কাটার পর প্রত্যেক বারই নির্ঝরের ফোনটা সুইট ওফ বলছে।
সায়নের মাথাটা হাং হয়ে আছে।কাল যখন নির্ঝকে ফোন করেছিলো তখন কোনো একটা মেয়ে ফোন ধরেছিলো।গলাটা বড্ড চেনা চেনা লাগছে সায়নের কাছে।হটাৎই নেটওয়ার্ক প্রবলেম তাই ভালোমতো কিছু শোনা যাচ্ছিলো না।
সায়নের কেন যেন মনে হচ্ছে ওটা অনুর গলা ছিলো।
কিন্তু নির্ঝরের ফোনে অনু কি করে আসবে......
অনু!!
একয়দিন সায়ন অনুকে নিয়ে এতো ভেবেছে যে শুতে গেলেও অনু বসতে গেলেও অনু।হয়তো মনের ভূল।।কথাগুলো নিজেই নিজেকে বলছিলো সায়ন
বাহিরে স্নো ফল হচ্ছে।
সায়ন এক মনে বাহিরে সাদা তুলোর মতো স্নো গুলো দেখছে।
অনুর বড্ড ইচ্ছে ছিলো হ্যানিমুনে এরকম একটা জায়গায় আসবে।
আর সারা রাত জ্বানালার পাশে বসে স্নোফল দেখবে।
ওহ্ ম্যাডামের আবদার সারা রাত সায়নকেও অনুর পাশে ঠায় দাড়িয়ে থাকতে হবে।
কি আবদার বাবা!!
সারা রাত নাকি দুজন হাত ধরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে স্নো ফল দেখবে
সায়ন তো অনুর এমন আবদার শুনে হেসে দেয়।
অনুতো রাগে লাল হয়ে গিয়েছিলো।
অনু যখন রেগে যায় তখন অনু ফর্সা গাল দুটো গোলাপী রং ধারন করে আর নাকের মাথাটা লাল হয়ে যায় তাতে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে।
সায়ন কতো বার দুষ্টামি করে অনু নাক টেনে দিতো অনু তো আরো বেশি রেগে যেতো.....
অতীতের কথা মনে পড়তেই সায়ন হেসে দেয়।
"অনুকে তোমাকে নিয়ে কতো স্বপ্নই না ছিলো।কিন্তু মাতৃ আগ্ঞা উপেক্ষা করার সাহস বা স্পর্ধা কোনোটাই আমার ছিলো না।আমাকে ক্ষমা করো"
কথাগুলো ভাবতেই সায়নের ফোন বেজে ওঠে।
মোবাইলের স্ক্রিনে সৌমিতা নাম আর সায়ন,সিমি আর নির্ঝরের ছবিটা ভেসে ওঠে.......
-এভাবে যখন তখন গায়ের উপর হুমড়ি খেয়ে পরেন কেন শুনি??লজ্জা করে না??
নির্ঝর অনুর কথায় মুচকি হেসে অনুকে বেশ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে।তারপর অনুর ঘাড়ে মুখ গুজে একটা গভীর চুমু এঁকে দেয়।
অনু গোসল করে আয়নার সামনে চুল আচড়াচ্ছিলো হটাৎই নির্ঝর কোথা থেকে এসে অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
ব্যাস!!অনু তো রেগে মেগে আগুন!!
-এসব ঢং আমার ভালো লাগে না।
অনু নির্ঝরের থেকে একটু সরে যেতেই নির্ঝর অনুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। এখন নির্ঝরের হাতটা অনুর নাভি বরাবর চলে গেছে।
তবে এখন আর অনুর আগের মতো অসহ্য লাগে না।বরং অন্য রকম ভালো লাগা কাজ করে।
একেবারেই অন্যরকম।মাঝে মাঝে তো ভালোলাগা মন্দ লাগা সব মিলে মিশে এক হয়ে যায়।
নির্ঝর নিজের ইচ্ছে মতো অনুর পেটে হাতটা স্লাইড করছে আর অনু চোখ বন্ধ করে আছে।
নির্ঝর অনুর ঘাড়ে থুতনি লাগিয়ে আয়নার অনুর প্রতিবিম্ব দেখছে।।।
নির্ঝরের দৃষ্টি অনুর গোলাপি ঠোঁটে আটকে আছে....।।
নির্ঝর অনুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে অনুর ঠোটের দিকে এগুতেই.....
হটাৎই সিমির আগমন ঘটে।
সিমিকে হুট করে ঘরে ঢুকতে দেখে নির্ঝর অনু দুজনেই চমকে যায়।
অনু একরম নির্ঝরের কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে যায়।।
সিমি হতম্ভের মতো দাড়িয়ে আছে।যেন সে হটাৎই খুব বড়সড় ধাক্কা খেয়েছে।
-বড্ড ভুল সময় চলে এসেছি মনে হয়।
(নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে)
নির্ঝর কি বলবে বুঝতে পারছে না।সে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।বোধয় খুব লজ্জা পেয়েছে নয়তো অন্য কিছু।অনুই বলে ওঠে
-ইয়ে মানে না না!!
-সরি
-সরি কেন বলছো??
-আসলে আগে কখনো এঘরে ঢোকার জন্য নক করার প্রয়োজন পরেনি তবে এখন থেকে পরবে সেটা বুঝতে পারি নি ....
বাই দ্যা ওয়ে সরি গাইছ। ক্যারি ওন।
কথাগুলো বলেই সিমি সেখান থেকে চলে যায়।
অনুর কেন যেন খুব হাসি পাচ্ছি।রাজ্য জয়ের হাসি।যেন সে গোটা রাজ্যটাকেই জয় করে ফেলেছে।
না না সিমির মুখটা দেখে অনুর খুব হাসি পাচ্ছে।কিন্তু কেন?
কি জানি!!
নির্ঝর অবাক চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে.....
-আপনি দেখছি লজ্জা পাচ্ছেন...
-ইয়ে মানে সিমি এভাবে...
-হয়েছে থাক!!
কথাগুলো বলেই অনু নিচে চলে যায়।সেই দুপুরে অনু ঘরে ঢুকেছে দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে নেমে গেল আর ঘরের বাহিরে বের হয় নি অনু।
এতোটা সময় অনু নির্ঝরের কাছেই ছিলো।।।
আজ বাড়িতে রমরমে ব্যপার।নীরা কলেজ ট্যুর শেষ করে বাড়ি ফিরেছে।খুব তাড়াতাড়ি তার বিয়েও নাকি হয়ে যাবে।
দুই এক দিনের মধ্যে ছেলে পক্ষ আসবে পাকা কথা বলতে নয় একে বারে বিয়ের কাবিন করে নীরাকে নিয়ে যাবে....।।
অনু নিচে নামতেই দেখে নীরা সোফাই পা তুলে বসে আছে
অনুকে দেখে নাক ফুলিয়ে বলতে থাকে
-ভাবি সেই কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি কোই তুমি তো নিচেই নামো না!!
অনু মুচকি হেসে নীরার পাশে গিয়ে বসে পড়ে
-ননদীনী গো আমি কি জানতাম তুমি এসেছো জানলে তো গোসল টোসল বাদ দিয়ে ছুটে তোমার কাছে চলে আসতাম!!
-ওয়েট ওয়েট এই বিকেল বেলা গোসল কি ব্যাপার হুম্ম??
-অনেক ব্যপার আছে তবে তোমাকে বলা যবে না...!!
কথাটা বলেই অনু হেসে দেয়।
-উহু বলো না!!
-হুম্ম বললে কি আর বুঝবে দুদিন পর তোমারও দিন আসছে!!
-মানে??
-মানে জানো না বুঝি??
-তুমি ও না!!
-তা প্রেম ট্রেম করে না কি!!
-ওবাবা প্রেম একদম ই না।খালামুনির ইচ্ছে আমাকে তার ছেলের বউ করবে তাই....
(কথাটা বলতেই নীরা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো)
-খালামুনি মানে??
-মানে তুমি জানো না??
-কোই না তো!!
-ভাইয়া তোমাকে কিছুই বলে নি??
-না রে বাবা!!
-সে আমার বড় খালামুনির ছেলে!!
-এবাবা তাই নাকি?? তাহলে তো প্রেম ট্রেম জমিয়ে করেছো!!তা কতোদিনের প্রেম শুনি?
-নাহ্ গো ভাবি সে তো আমাকে পিচ্চু ছাড়া কখনো ডাকেই নি।তারমতে আমি নাকি তার বোনে মতো!!
-তুমি লাইন মারার চেষ্ট করেছো??
-হুম্ম পাত্তা দেয় নি!!
-ধুর কে বলেছে সে তোমাকে বোন ভাবে!! তার মনেও হয়তো তোমাকে নিয়ে কিছু ছিলো, না হলে বিয়ে করছে কেন...??
নীরা লজ্জায় লাল হয়ে গেছে....
-ধূর!!
-হুম্ম তা ভাই সোহাগী ননদীনী দুদিন পর বর সোহাগী হবে!!
-ভাবি চুপ করবা??
-তা তার নাম কি??
-নাম তো.....
নীরা সিড়ির দিকে তাকাতেই দেখে নির্ঝর আর সিমি একসাথে সিড়ি দিয়ে নামছে....
নীরা অনুর দিকে তাকিয়ে বলে...
-এভাবে বসে না থেকে বরকে একটু আঁচল দিয়ে ঢেকে রাখো।তোমার বর যা হ্যান্ডসাম যখন তখম চুরি হয়ে যাবে....!!এমনিতেও অনেকেরই নজর রয়েছে তোমার বরের উপর...!!
(নির্ঝর আর সিমির দিকে ইশারা করে)
অনু একবার তাকাতেই নির্ঝরের চোখে চোখ পড়ে যায়...
অনু মুখ ভেংচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।তবে নির্ঝর বেশ সিরিয়াস লুকে আছে!
অনু বসা থেকে ওঠে দাড়াতেই কিছু একটার সাথে ধাক্কা খেয়ে আবার পড়ে যায়....
নির্ঝর অনুর সামনে এসে দাড়িয়ে আছে।অনু ধাক্কাটা নির্ঝরের সাথেই খেয়েছে
নির্ঝর গম্ভীর মুখে অনুর সামনে দাড়িয়ে আছে....
-অনু
-হুম্ম
-তৈরী হয়ে নাও
-মানে
-মানে আমরা এখন বেরুবো
-কিন্তু কোথায়??
-তোমার বাসায়
-মানে??
-(...)
-কেন??
-এমনি!!তোমাকে তিন দিনের জন্য তোমার মার কাছে দিয়ে আসবো।তিন দিনপর আবার নিয়ে আসবো!!
-কিন্তু কেন??দুদিন পরই তো নীরার হয়তো আকদ হয়ে যাবে!!
-তো??
-তো মানে আমি থাকবো না??
-না তুমি থাকবে না
-আমি যাবো না....
নির্ঝর রাগী চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে বেশ ঝাঝালো গলায় বলে ওঠে.....
-তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নাও.... আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে তোমাকে গাড়িতে দেখতে চাই।
-কিন্তু
কথাটা বলেই নির্ঝর দমদম করে বেরিয়ে চলে যায়!!
অনু নীরা দুজনই মন খারাপ করে বসে আছে।নির্ঝর এমন করছে কেন??
-আপনি খুব বাজে একটা লোক মি.নির্ঝর চৌধুরী!!
গাড়িতে মুখ গোমড়া করে বসে আছে অনু।নির্ঝর ড্রাইভ করছে।
অনু তো তখন থেকেই নির্ঝরকে যা নয় তাই বলে যাচ্ছে কিন্তু তাতে নির্ঝরের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই সে তো চোখ মুখ লাল করে বসেই আছে।
নির্ঝরের গাড়িটা অনুদের বাড়ির সামনে গিয়ে থামে।
নির্ঝর গাড়ি থেকে নেমে অনুর সামনে দরজাটা খুলে দিয়ে অনুকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়।
-নামো
-(...)
-নামবে কি না??
-না নামবো না!!
অনু নির্ঝরের দিকে একবার তাকিয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে নেয়!!!
নির্ঝর রেগে গিয়ে অনুর হাত ধরে জোড় করে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়।
অনুতো রেগে মেগে আগুন!!নির্ঝরের হাতে একটা খামছি দিয়ে বলতে শুরু করে...
-আপনি একটা লুচ্চু,গন্ডার,বদমেজাজী হাতি,ছাগল সব! সব! সব আপনি....
-চুপ!!
-ইউ চুপ!!!আমি নীরার বিয়েটাই দেখতে পারলাম না.....(এ্যা...এ্যা)
-অনু এখন তো বিয়ে হচ্ছে না শুধু আকদ হচ্ছে।।
-তো আমি নীরার আকদে থাকতে চাই মি.নির্ঝর!!আমি না ঐ বাড়ির একমাত্র বউ!!
-তাই বুঝি??
-(....)
-কবে থেকে তুমি নিজেকে আমার বউ ভাবতে শুরু করলে??
-আমি তো!!
-তুমি নীরার আকদে থাকতে পারবে না তোমার কষ্ট হবে আমি চাই না তুমি কষ্ট পাও....
-কেন??কেন হবে আমার কষ্ট??
-জানি না যাও তুমি বাড়িতে আমি পরে এসে তোমাকে নিয়ে যাবো!!
কথাগুলো বলেই নির্ঝর পেছনে হাটা ধরে....!!!
-আপনি খুব বাজে মি.চৌধুরী!!আপনার থেকে সায়ন....
নির্ঝর একবার অনুর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়িতে চড়ে বসে।
অনু বোকার মতো দাড়িয়ে আছে।
নির্ঝর আর একবারও পেছন না ফিরে চলে যায়!!
অন্য দিন নির্ঝরের সামনে সায়নের কথা বললে রেগে যেতো কিন্তু আজ নির্ঝরের চোখে কোনো রাগ ছিলো না।কি জানি কি ছিলো ঐ দুই চোখে।যা ছিলো তা নীরার বোঝার বাহিরে!!
অনু বাড়ি ভেতরে আসতেই সবাই অনুকে দেখে অবাক।।সবাই তখন ড্রইং রুমে বসে চা খাচ্ছিলো!!
অনুর মা অনুর দিকে এগিয়ে আসে।
-কিরে তুই এই ভর সন্ধ্যেবেলা এভাবে??কি হয়েছে??জামাই কোথায়??আসে নি??বাড়িতে কি কিছু হয়েছে???তুই আবার কোনো কান্ড বাধাস নি তো??
অনু মায়ের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে
-কি রে চুপ করে আছিস কেন??
-তোমার দেখছি আমাকে নিয়ে অনেক প্রশ্ন।তোমার বা তোমাদের কোনো প্রশ্নের উওরই আমি দিবো না।
-মানে??
-মানে সব প্রশ্ন তোমার জামাইকে কোরো সেই আমাকে রেখে গেল!!কেন রেখে গেলো জানি না তাই তোমারা তাকেই প্রশ্ন করো হয়তো তোমাদের বলবে আমাকে রেখে যাওয়ার কারণটা।
অনুর বাবা এতো সময় অনুর কথা শুনছিলো।এবার বলতে শুরু করে
-নির্ঝর এসেছিলো অথচ আমাদের জানায় নি।বাড়ির দরজা থেকে ঘুড়ে চলে গেল!!তুমি তাকে ভেতরে আসতে বলো নি কেন??
-প্রয়োজন বোধ করি নি তাই!!
কথাগুলো বলেই অনু চলে যায় নিজের ঘরে।চোখ দুটো ছল ছল করছে।নির্ঝর তাকে এভাবে ছুড়ে ফেলে দিয়ে চলে গেল!!
এই নাকি স্বামী.....
আজ দুদিন হলো নির্ঝরের সাথে অনুর কথা হয় নি।নির্ঝর একটি বারের জন্যেও অনুকে ফোন করে নি।অনুও ফোন করার প্রয়োজন বোধ করে নি!!
যে কথা বলতে চায় না তাকে জোড় করার প্রয়োজন নেই!!
অনু বারান্দায় চা হাতে দাড়িয়ে আছে।মনটা যে বড্ড খারাপ।
বোধয় এই আজকেই নীরার আকদ।
ইশ্ যদি থাকতে পারতাম!!
অনুর বুকে বড্ড অভিমান জমেছে নির্ঝরের উপর।একেই তো এভাবে রেখে গেলো তার উপর একটিবার খবরও নিলো না।
কি প্রেমিক রে বাবা!! না না প্রেমিক তো নয়।প্রেমিক শব্দের অর্থটা অনেক গভীর।প্রেমিক মানে প্রেমিকার মেঘলা আকাশে একটা ছোট্ট সূর্য।
প্রেমিক মানে ঘন বর্ষন যে বর্ষার প্রত্যেকটা ফোটা প্রেমিকার হৃদয়কে ভিজিয়ে দেয়। প্রেমিক মানে প্রেমিক মানে একটা বিশাল সাগর যে সাগরে প্রত্যেকটা প্রেমিকই হাসি মুখে ডুবে যেতে পারে....আর প্রেমিক মানে.....
ধূর প্রেমিক নিয়ে এতো ভেবে কি লাভ সে জায়গাটা তো সায়নের ছিলো।আর নির্ঝর সে তো প্রেমিক নয় সে তো শুধুই স্বামী!!
সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে "নীল ক্যাফের ভালোবাসা" পেজে পাবেন।
আচ্ছা স্বামীরা কি প্রেমিক পুরুষ হতে পারে না??নাকি বউয়েরা প্রেমিকা হতে পারে না??
না কি তাদের প্রেমিক প্রেমিকা হতে মানা?? কে জানে!!!!
অনু নিজের মনেই কথা গুলো ভাবছিলো।মায়ের ডাকে হুস ফিরে অনুর পেছন ফিরে তাকাতেই দেখে মা দাড়িয়ে আছে।
-কিছু বলবে??
-নির্ঝরের সাথে কি মনমালিন্য হয়েছে??
অনু মুচকি হেসে জবাব দেয়
-যার সাথে মনেরই কোনো সম্পর্ক নেই তার সাথে আবার....বাদ দাও সে সব!!
-তাহলে??সায়নকে নিয়ে সমস্যা??
-জানি না!!
-জানো না মানে নির্ঝর তোমার স্বামী!!
-তো
-অনু (ধমকের সুরে)
অনু মায়ের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।
-সায়নকে তোমারা কেন তাড়িয়ে দিলে।সায়নকে যে আমি বড্ড ভালোবাসতাম।
-আর নির্ঝর তোকে বড্ড ভালোবাসে
-কিন্তু মা সে তো একবারও আমার খবরই নিলো না!!
অনুর মা মুচকি হেসে অনুর মাথায় হাত বুলা বুলাতে বলে
-অভিমান এক তরফা ভালো যখন অভিমান দুই তরফা হয়ে যায় তখন সম্পর্কে ফাটল ধরে.....
কথাগুলো বলেই অনুর মা চলে যায়। যেতে যেতে অনুর মা পেছন ফিরে অনুকে উদ্দেশ্য করে বলে
-তোমার ওনি রোজ দিনে দুই করে ফোন দিয়ে তোমার খোজ নেয়।।।
কোই তুমি তো তাকে একবারও ফোন দাও না...
অনুর মা কি বলতে চাইছে তা হয়তো অনু বুঝতে পেরেছে।
অনু কি মনে করে ফোনটা হাতে নিয়ে নির্ঝরকে ফোন করে একবার রিং হয়ে কেটে যায়
দিত্বীয়বার রিং হতেই রিসিভ করে নেয়
অনু কথা বলতে যাবে তার আগেই অপর প্রান্ত থেকে মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসে।
-হ্যালো
অনু বাকরুদ্ধ এতো সিমির গলা!!
-সিমি তুমি নির্ঝর কোথায়
-কে অনু!! নির তো ওয়াশরুমে সাওয়ার নিচ্ছে।
-ওওও রাখছি
-ওকে
অনু ফোনটা কেটে দিয়ে বিছানায় ছুরে মারে।
খুব রাগ হচ্ছে ভিষন রাগ হচ্ছে।রাগে গা জ্বালছে।এই মেয়েটা যেমন লুচু আবার বরটাও তেমন লুচু......
আচ্ছা সত্যিই কি সিমির সাথে নির্ঝরের কোনো সম্পর্ক আছে??
-এ্যা এ্যা এই লুচু ব্যাটার সাথে যদি সিমি না না তখন আমার কি হবে???
আজকাল অনু বড্ড বেশি নির্ঝরকে নিয়ে ভাবে।তবে কখনো সখনো অনুর মেঘলা আকাশে সায়ন উঁকি দেয়।সায়নের কাছে অনুর একটাই প্রশ্ন সে কেন অনুকে একা ফেলে চলে গেল????
-অনুর বিষয়ে সবটা জানে অ্যান্টি??
সিমির কথায় নির্ঝর একবার সিমির দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আবার ড্রাইভিং-এ মনযোগ দেয়।
নির্ঝর সিমি একসাথে বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।
-নির্ঝর সায়ন জানে অনুর সাথে তোর বিয়ের কথা....
নির্ঝর কোনো উওর করছে না।
নির্ঝরকে নির্বাক দেখে সিমিও চুপ করে যায়।
গাড়ি নিজ গতিতে চলছে।হাটৎই সিমি চিৎকার করে গাড়ি থামিয়ে দেয়....
-কি??
-নির
-হুম্ম
-হাওয়াইমিঠা খাবো!!
-কিহ্??
-হুম্ম প্লিজ প্লিজ....নির এনে দে না....!!
নির্ঝর প্রথমে বিরক্ত হলেও কি মনে করে গাড়িটা সাইড করে দাড় করিয়ে নেমে যায়....
সিমি তো খুশিতে আত্মহারা।নির্ঝর এক ছুটে রাস্তার উপা থেকে তিনটে হাওয়াইমিঠা কিনে আনে।
সিমিকে একটা দিয়ে দুটো গাড়ির পেছনে রেখে দেয়।
-নির এই দুটো কার??
-অনুর
-মানে?
-আরে অনু খুব ভালোবাসে তাই অনুর জন্য নিলাম।
-ওওও
হুট করেই সিমির মুখটা কালো হয়ে গেল.....।।
অনু রাগে গজ গজ করতে করতে বাড়ি চলে এলো।সকালে সিমির সাথে কথা বলার পর কি মনে করে অনু একা একাই শ্বশুড় বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায় হটাৎই চোখে পড়ে রাস্তায় নির্ঝরের গাড়ি।গাড়ির দিক ভালো করে লক্ষ করতেই অনুর চোখে পড়ে নির্ঝর সিমির হাতে গোলাপী রঙ্গের হাওয়াইমিঠাই ধরিয়ে দিচ্ছে আর সিমি অন্যরকম দৃষ্টিতে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।ব্যাস একেই তো অনু মাথা গরম ছিলো এদৃশ্য দেখার পর যেইটুকু বাকি ছিলো তাও গরম হয়ে গেল।
অনু বাড়িতে ঢুকতেই দেখে নীরা সোফায় ঘুমিয়ে আছে।বাড়ির কাজের লোক দরজা খুলে দিয়েছে অনু আসে পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই বোধয় সবাই দুপুরের খাবার খেয়ে দেয়ে রেস্ট নিচ্ছে।অনু কোনো কথা না বলে সোজা ঘরে চলে যায়।
ইমেগ্রেশান ক্রস করে বিমান্দরের অন্দরমহল থেকে ধীর পায়ে বেরিয়ে আসছে সায়ন।
যদিও আরো দুদিন আগে তার বাংলাদেশে ফেরার কথা ছিলো কিন্তু বিদেশের পাঠ চুকিয়ে দেশে আসতে দেরী হয়ে গেল।আবহাওয়া ভালো থাকায় প্লেন এক ঘন্টা আগে দেশে ল্যান্ড করেছে।
বাহিরে বারিয়ে সায়ন সরাসরি গাড়ি ওঠে যায় উদ্দেশ্য নিজের বাড়ি যাবে।তবে সায়নের মায়ের কড়া কথা সে যেন যতো দ্রুত সম্ভব তার খালার বাসায় ওঠে কিন্তু তবুও সায়ন নিজের বাড়িই যাবে।
সায়নকে নিতে সায়নের খালাতো ভাই নির্ঝর আর বেস্ট ফ্রেন্ড সিমি আসছে তবে দুঘন্ট পর।সায়ন ইচ্ছে করেই সবাইকে দুঘন্টা পরের ফ্লাইটের কথা বলেছিলো না হলে ওরা জোড় করেই সায়নকে ধরে বাড়ি নিয়ে যেত।।
গত কালই সায়নের বোন সায়নকে ফোন করে জানিয়েছে অনু নাকি বাড়ি চলে এসেছে।মানে অনুর বর নাকি অনুকে রেখে গেছে।তাই সায়ন ও সোজা বাড়ি চলে যাচ্ছে।
অনুর সাথে অন্তত একবার দেখা করা খুব জরুরি।নিজের দোষে মেয়েটাকে বড্ড কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সে।তবে আর কোনো ধোয়াশা নয় এবার সায়ন সরাসরি অনুকে সব সত্যি বলবে কেন সে অনুর সাথে এমন করেছিলো। শুধু যে সত্যি বলবে তা নয় অনু যদি চায় সব অতীত ভূলে গিয়ে অনুকে নিজের করে নিবে সে।অনুকে নিয়ে এ দেশ এই পরিচিতি সব ছেড়ে চলে যাবে।কিন্তু "অনু কি ক্ষমা করবে আমাকে??"
"করবে অনুতো আমায় ভালোবাসে আমি চাইলে অনু সব ছেড়ে চলে আসবে আমার কাছে"
এরকম কিছু চিন্তা ভাবনা নিয়ে সায়ন গাড়ি রওনা হয়ে গেছে বাড়ির উদ্দেশ্যে।
অনুদের বাড়ির পেছনের পথটায় সায়নদের বাড়িতে যাওয়ার পথ।গাড়িটা যখন অনুদের বাড়ির পেছনের দরজাটা ক্রস করছিলো সায়ন গাড়ির জ্বানালা দিয়ে উকি দেয়..
ওই তো বাড়ির পেছনের সেই বকুল তলা।ঠিক তার পাশেই একটা ইয়া বড় তেতুল গাছ।অনুর গায়ে হলুদের দিন অনু সায়নকে এখানেই দাড়াতে বলেছিলো কিন্তু সায়ন সেদিন আসেনি।
"অনু কি এসেছিলো??সে কি সেদিন অপেক্ষা করেছিলো সায়নের জন্য??হয়তো করেছিলো।মেয়েটা যে আস্ত একটা পাগলি!!"
যদি সেদিন আসতো তাহলে আজ হয়তো বুক ভরা আফসোস নিয়ে বাঁচতে হতো না।হয়তো অনু এখন তার বুকে থাকতো
কিন্তু কি করে আসতো সে মা যে তাকে......
কথাগুলো ভাবতেই অনুর চোখ বেয়ে দুফেটা পানি বেয়ে পড়লো...
সব কেমন হুট করেই পাল্টে গেল.....
বাড়িতে পৌছাতেই সাবই সায়নকে দেখে অবাক।ছেলে ফেরায় মা যতো না খুশি হয়েছে তার বেশি রেগে গেছে সরাসরি এখানে ওঠায়।
সায়নের মায়ের বড্ড ভয় করছে।ছেলে আবার ঐ খুদওয়ালা মেয়েতে মজবে না তো??
কে জানে একেই তো মেয়েটির একটা বড় খুদ রয়েছে তার উপর আবার বিয়ে করে চার মাস সংসার করেছে এমন মেয়ে যদি আবার না না আর কিছু ভাবতে পারছে না সামিয়া বেগম।একমাত্র ছেলে সায়ন। কলিজার টুকরা সে ছেলেরর ক্ষতি ওনি কখনো ভাবতেই পারেন না।
যতো দ্রুত সম্ভব সায়নের বিয়েটা দিতে হবে....
যদি সম্ভব হয় আজ কালের মধ্যেই।পুরুষ মানুষের মন গলতে কতোক্ষন!!
নির্ঝর আর সিমি বেশ অনেকটা সময় বিমান্দরে অপেক্ষা করেছে সায়নের কোনো খবরই নেই।
পরে অবশ্য খালামুনি ফোন করে বলে দিয়েছে সায়ন নাকি একাই বাড়ি চলে গেছে।
তাই আর অপেক্ষা না করে নির্ঝরও বাড়ি চলে এসেছে...!!
ফিরে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দেয় নির্ঝর।হুট করেই নির্ঝরের মাথায় অনুর কথা চলে আসে।আচ্ছা অনুকেও তো বাড়ি রেখে এসেছে সে আর সায়নও তো বাড়িতে যদি দুজনের...
না না এমন হতে পারে না।।
কথাটা এতোক্ষন কেন মাথায় আসে নি।নির্ঝর হুট করে ওঠতে যাবে তখন হটাৎই কেউ একজন নির্ঝরেরর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে দেয়।
হুট করে এমন কান্ডে নির্ঝরের দম বন্ধ হয়ে আসে....
নির্ঝর গায়ের সব শক্তি দিয়ে ধাক্কা মারে।অপর পক্ষ ধপ করে মেঝেতে পড়ে যায়
-ও মা গো কোমড়টা ভেঙ্গে গেলো গো আমাকে মেরে ফেল্লো গো....কে কোথায় আছো গো!!
অনুর এমন চিৎকারে নির্ঝর দম নেওয়ারও সময় পায় না!!!
অনুকে হটাৎ এভাবে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে যায় নির্ঝর!!
-তুমি
-হ্যা আমি!!
-তুমি কখন এলে??
-কেন আমি আসাতে সমস্যা হবে বুঝি??
-মানে?
-মানে আবার কি আমি থাকলে আপনার পিরিতের সিমির সাথে ডুবে ডুবে জ্বল না না হাওয়াইমিঠায় খাওয়া হবে না তাই তো আমাকে বাড়ি রেখে এসেছেন!!
অনু রাগে দাত কড়মড় করছে....
নির্ঝর অবাক চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে...
-কি হলো আমাকে তুলুন দেখতে পাচ্ছেন না আমি ব্যাথ্যা পেয়ে উঠতে পারছি না??সিমি হলে তো
নির্ঝর ঝটপট গিয়ে অনুকে কোলে তুলে নেয় তার পর বিছানায় শুয়ে দিয়ে অনুর উপর শুয়ে পরে...
-তুমি কখন দেখলে আমি সিমিকে হাওয়াইমিঠায় কিনে দিয়েছি??
-কেন কি ভেবেছিলেন লুকিয়ে লুকিয়ে মিষ্টি খাবেন না না খাওয়াবেন আমি দেখতে পাবো মা হুম্ম....সরুন তো সরুন আপনার সিমির কাছে যান আমার কাছে কেন এসেছেন....
-উফ্ এতো সিমি সিমি করো কেন??
-একবার ও তো খবরও নিন না আমি ফোন দিলে ফোন ধরে সিমি...
-ওওও কোথাও পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি...বোধয় কিছু একটা পুড়ছে!!
একটু মন দিয়ে পড়ুন--
পরবর্তী অংশ অর্থাৎ সবগুলো পর্ব এই I'd তে দেয়া হবে, পুরো গল্পটি পড়তে রিকুয়েস্ট দিয়ে সাথেই থাকুন। ভালো ভালো গল্প পেতে এই আইডির সাথেই থাকুন!অনেক সময় গ্রুপে গল্প পোস্ট হয় না। তাই গ্রুপে গল্প পেতে সমস্যা হলে ফলো অথবা রিকুয়েস্ট দিয়ে রাখতে পারেন ধন্যবাদ।
অনু দুম করে নির্ঝরের নাকে একটা ক্লিপ লাগিয়ে দেয়
-আউউউচ্
-এখন আর পাবেন না!!
অনু নির্ঝরকে ধাক্কা দিয়ে উঠে যায়।টেবিলে নির্ঝরের ফোনটা বাজচ্ছে আর নির্ঝর বিছানায় বসে নাক ডলছে।ক্লিপটা লেগে নাক লাল হয়ে গেছে।
অনু ফোনটা হাতে নিতেই দেখে ফোনের স্ক্রিনে বড় বড় করে লিখা
"SHAYON"
কলটা সায়ন করেছে........
বারান্দায় পেছন ফিরে দাড়িয়ে আছে অনু।আর অনুকে পেছন থেকে জড়িয়ে রেখেছে নির্ঝর।
তখন হুট করেই অনুর হাত থেকে ফোনটা কেঁড়ে নেয় নির্ঝর।
-আপনি তখন আমার হাত থেকে ফোনটা ওভাবে নিয়ে নিলেন কোন??
অনুর কথা নির্ঝরের কানে যাচ্ছেই না সে তো অনুর ঘাড়ে নাক ঘষতে ব্যস্ত।
(তখন নির্ঝরের ফোনে সায়ন নামটা দেখে অনু প্রথমে একটু ভড়কে গেলেও পরে মানিয়ে নেয় হতে পারে এটা অন্য কেউ)
-(..)
-কি হলো বলুন???
-এমনি
-এমনি না অন্য কিছু??
-বললাম তো এমনি।ইশ্ এতো নড় কেন একটু চুপটি করে দাড়াতে পারো না??
-ছাড়ুন তো সব সময় ভালো লাগে না....ঐসব!!
কথাটা বলেই অনু নির্ঝরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে একটু দূরে সরে দাড়ায়।নির্ঝর কিছুই বলে না।
অনুর দুচোখ এখন আকাশে ওঠা বড় চাঁদটার দিকে....
আর নির্ঝরের চোখ অনুর দিকে।অনুর চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত চোখ বুলাচ্ছে নির্ঝর...।।আজ বোধয় অনুকে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে।
-এভাবে ড্যাব ড্যাব করে কি দেখছেন টা কি হুম্ম??
-তোমাকে!!
-এমন করে দেখছেন যেন এক্ষুনি গিলে খাবেন!!
-খাবোই তো
অনু নির্ঝরের দিকে দু কদম এগিয়ে এসে দু হাত দিয়ে নির্ঝরের গলা জড়িয়ে ধরে।নির্ঝর অনুর কোনড় জড়িয়ে একটু উঁচু করে তুলে ধরে.....
-জানেন তো আমি খাওয়ার জিনিস না!!
-তো তুৃমি কিসের জিনিস??
-ভালোবাসার জিনিস
-তাই বুঝি???(মুচকি হেসে)
-হুম্ম!!
-আমি তো ভালোবাসিই কিন্তু তুমি???
-জানি না!!
-জানতে হবে না!!
দুজন বেশ কাছাকাছি।নির্ঝরের গরম নিঃশ্বাস অনুর চোখে মুখে আঁচড়ে পরছে...অন্যরকম অনুভূতি
"কোই খারাপ তো লাগছে না ভালোই লাগছে নিজেকে কোমন বর সোহাগী মনে হচ্ছে"
নির্ঝর হটাৎই অনুর ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।দুজন পাড়ি দেয় অন্য জগতে!!
বেশ কিছুক্ষন পর অনু নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।
-অনু তুমি সায়নকে এখনো ভালোবাসো তাই না??
-জানি না!!
-ওওও
-হুম্ম্
-জানতে হবে না কারণ তুমি আমার শুধুই আমার।
।নির্ঝর পেছন ফিরে চলে আসতেই অনু নির্ঝরকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে....।
নির্ঝর অনুকে সামনে ঘুড়িয়ে কোলে তুলে নেয়..!!
তারপর বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুয়ে দেয়।।
-আজ আকাশে অনেক বড় চাঁদ ওঠেছে।হালকা বৃষ্টি একটু শীত শীত আবহাওয়া।ওয়েদারটা বেশ রোমান্টিক।জানো তো এমন ওয়েদারে বর বউরা মধুচন্দ্রীমায় যায়
-(...)
-তুমি যাবে আমার সাথে মধূচন্দ্রীমায়??
-(....)
অনু লজ্জায় লাল গোলাপী হয়ে গেছে
-বোধয় আজ আমাদের ফের ফুলসয্যা হবে!!(মুচকি হেসে)
অনু নির্ঝরের কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে গেছে...!!!
কি জানি আজকাল নির্ঝরকে তো আর আগের মতো খারাপ লাগে না।নির্ঝরও আগের মতো নেই...
তবে এটা কি ভালোবাসা না কি শুধুই সস্তা আবেগ??নাকি এটাকে শুধুই মানিয়ে নেওয়া বলে?? কি জানি!!এর কোনো অর্থই অনুর মাথায় ঢুকছে না!!
সায়নের ঘরে...
বারান্দার গ্রীলে বেশ কয়েকটা বাড়ি দিয়েছে সায়ন।হাট কেটে রক্ত পড়ছো তবুও রাগটা কমছে না।সায়ন স্বভাবত বেশ শান্ত শিষ্ট তবে রেগে গেলে নিজের উপর কোনো নিয়ন্ত্রন থাকে না তার।রাগে গ্রীলে আরো কয়েকটা বাড়ি দেয় সায়ন।পাশেই সিমি আছে তবুও কিছু বলছে না বাঁধাও দিচ্ছে না!!
চুপটি করে সায়নের কান্ড দেখছে সে!
সায়ন রক্ত বর্ন চোখে সিমির দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়
-নির্ঝর এরকম একটা নোংরা প্লান করলো তুই জেনে শুনে আমাকে আগে কিছুই বললিস নি কেন??
-সায়ন বিশ্বাস কর আমি আগে কিছুই জানতাম না।আমি তো রিসেন্টলি এসব জেনেই তোকে দেশে ফিরে আসতে বললাম।আর নির্ঝর অনুকে পাওয়ার জন্য এরকম কিছু করবে তা আমার কল্পনার বাহিরে!!
সিমি এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে দম নেয়
-অনুর দিকে যে নির্ঝরের নজর ছিলো সেটা তুই আগে থেকে জানতিস??
-ইয়ে মানে
-ইসেছ ওর নো!!
-হুম্ম।জানতাম....।।।সে বার সমুদ্র সৈকতে গিয়ে অনুকে নির্ঝরের ভালো লাগে।
-তাহলে আমাকে আগে বলিস নি কেন ইউ স্টুপিড গার্ল!!
-বিশ্বাস কর সায়ন নির্ঝর যেদিন জেনেছিলো অনুর সাথে তোর সম্পর্ক আছে সেদিন নির্ঝর দমে গেছিলো আমি ভেবেছিলাম নির্ঝর হয়তো অনুকে ভুলে যাবে কিন্তু অনুকে পাওয়ার জন্য যে নির্ঝর এতো কিছু করবে তা যদি জানতাম
(সায়ন শুধু রাগে ফুসছে।এয়ারপোর্টে সায়নকে না পেয়ে নির্ঝর বাড়ি চলে এলেও সিমি কাজের নাম করে সরাসরি সায়নের বাড়ি চলে আসে সায়নকে এখন তার প্রয়োজন।তাই তো সবার আড়ালে সায়নকে এতো কিছু বলতে এসেছে সিমি।সায়নই তো তার....)
সায়নকে রাগতে দেখে সিমি জ্বলন্ত আগুনে আরেকটু ঘি ঢেলে দিলো
-সায়ন আমার মনে হয় অনুর ঐ রিপোর্টটাও মিথ্যা হয়তো অ্যান্টিকে অনুর বিরুদ্ধে রাগানোর জন্য নির্ঝরই ঐ ফলস্ রিপোর্টটা বানিয়েছে আফটার অল ঐ নার্সিং হোমটা তো নির্ঝরের ফ্রেন্ডের!!
সায়ন একটু চুপ হয়ে গেলো।হুম্ম আকদের দিন হটাৎই অনু সিড়ি থেকে পড়ে যায়।পেট ব্যাথ্যায় বার বার ছটপট করতে থাকে সায়ন কোনো তাল না পেয়ে নির্ঝরকে ফোন দেয় নির্ঝরই তো সে দিন অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছিলো।তারপর তো ঐ রিপোর্ট ওরকম একটা ঘটনা সব কেমন তাল গোল পাকিয়ে দিলো।অনুর ব্যাপারে ওরকম একটা কথা জানার পর সায়নের মা আর একটি মুহূর্ত সায়নকে হাসপাতালে থাকতে দেয় নি।সত্য গোপনের দায়ে অনুর পরিবারকে যাচ্ছে তাই বলে অপমান করে।তবে বিষয়টা দুঃখজনক হলেও অনুর এরকম সমস্যার কথা তারাও আগে টের পায় নি।তবে সায়নের মার কাছে তারা অপরাধী তাই তাদের যোগ্য অপমানই করেছিলো সেদিন।।
বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়ে সায়নকে নিয়ে চলে আসেন তিনি।কসম টসম দিয়ে সায়নের মুখও বন্ধ করে দেয়!তবে সেদিন অনুর রিপোর্টটা কি মিথ্যে ছিলো???সেদিনের সবই কি নির্ঝরের সাজানো প্লান ছিলো অনুকে আমার থেকে আলাদা করার জন্য??
নাহ আর কিছু ভাবতে পারছে না সায়ন।মাথা গুলিয়ে যাচ্ছে।নির্ঝর তো শুধু সায়নের ভাই ছিলো না বেস্ট ফ্রেন্ডও ছিলো তাহলে!
বন্ধু হয়ে বন্ধুর সাথে এতো বড় বেঈমানী??
-নির্ঝর শুধু মাত্র নিজের জন্য নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডের সাথে বেঈমানী করলো এরফল ভালোহবে না একদম ভালো হবে না।
কথাগুলো বলতে বলতে সায়ন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় আর সিমি বিছানায় একই ভঙ্গিতে বসে আছে।
যেন সেও বিষয়টা মানতে পারছে না।।
তবে ধীরে ধীরে তার মুখে ম্লান হাসি ফুটে উঠছে....
"খেলা তো সবে শুরু মি.নির্ঝর এবার দেখো তোমার কর্মের ফল তোমায় আমি কিভাবে দেয়।আমি ভালো নেই নির্ঝর তুমিও ভালো থাকবে না।তোমাকে আমি ভালো থাকতে দেবো না"
(Flash-Back)
নার্সিং হোমে দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে সায়ন।হালকা ক্রীম কালার শেরওয়ানীতে ছোপ ছোপ রক্ত লেগে আছে।শেরওয়ানীটা অনু নিজে পছন্দ করে কিনেছিলো আকাদে সায়ন পরবে বলে অথচ এই এই শেরওয়ানীতে অনুর রক্ত লেগে আছে।
সিড়ি থেকে পড়ে গিয়ে মাথাটা ফেটে গেছে অনুর পুরাপুরি হুস নেই বললেই চলে তবে বিছানায় সুয়ে সুয়ে বারবার ব্যাথ্যায় কাতরাচ্ছে অনু।স্বাভাবিক ভাবে ব্যাথ্যাটা মাথায় হওয়া উচিত যেহেতু মাথাটা ফেটেছে কিন্তু অনুর ব্যাথ্যা হচ্ছে পেটে।যাকে বলে প্রচুন্ড ব্যাথ্যা।
অনু ঐ অবস্থায় বেশ কয়েকটা টেস্ট করা হয়।বর পক্ষ কনে পক্ষ মোটামুটি সবাই উপস্থিত আছে।
অনুর বাবার তো মুখটা শুকিয়ে গেছে।একমাত্র মেয়ের এ অবস্থা তাও আবার এমন শুভ দিনে।
সায়নের চোখ বেয়ে টুপটুপ করে পানি পরছে।কোথায় মেয়েটাকে লাল শাড়ি জড়িয়ে বউ সেজে শ্বশুড় বাড়ি নিয়ে যাবে তা নয় বরং হালকা নীল পোশাক পড়ে হাসপাতালের বিছানায় পরে আছে......
"অনু তুমি ভালো হয়ে যাও প্লিজ।আমি আর নিতে পারছি না"
সায়নের ভাবনায় ছেদ পরে ডাক্তার অনামিকার ডাকে.....
অনামিকা নির্ঝরের ফুপাতো বোন।অনু সম্পর্কে সবটায় জানে সে।
অনামিকা সায়নকে ডেকে বলে,
-সায়ন পেশেন্ট সম্পর্কে কিছু কথা ছিলো সেগুলো তুমি আলাদা শুনবে না কি সবার সামনে??
পাশ থেকে সায়নের মা উঁচু সুরে বলতে থাকে
-এখানে অনুর পরিবার উপস্থিত রয়েছে তাই অনু সম্পর্কে সবটা জানার অধিকার তাদের ও রয়েছে!!তুমি সবার সামনে বলো!!
-সায়ন তুমি কি অনু সম্পর্কে আগে কিছুই জানতে না???
-মানে??
সবগুলো কৌতুহলী চোখ ডাক্তারের দিকে
-তাহলে শোনো!!প্রত্যেকটা মেয়ের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো ভ্রুন থলি যেখানে মেয়েরা মানব ভ্রুনকে ধারনকরে কিন্তুর ক্ষেত্রে সমস্যা হলো...
একটু থেমে গিয়ে...
-কি??
-অনুর সেই ভ্রুন থলি তুলনামূলক অনেক ছোট সন্তান ধারনের জন্য যথেষ্ট নয়।তাই অনু চাইলেও সন্তান ধারন করতে পারবে না!!
ডাক্তারের মুখে কথাটা শুনে সায়নের পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে গেল...
-কি বলছো কি আপু??
-হুম্ম।রিপোর্টে তাই লিখা আছে।
সায়ন ধপ করে ফ্লোরে বসে পরে।অনু সম্পর্কে এতো বড় ধাক্কা সে আশা করে নি।
অনুর মা আঁচলে মুখ গুজে কাঁদছে।
গোটা মহল জুরে পিনপিনে নিরবতা।
নিরবতা কাটিয়ে সায়নের মা বলে ওঠে
-সায়ন!!
-(...)
-ওঠো আমি বাড়ি যাবো!!
সায়ন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে
-কি হলো উঠতে বললাম না??
-মা অনু
-চুপ একদম চুপ অনুর নাম যেন তোমার মুখে না শুনি
সায়নের মায়ের কথা শুনে অনুর বাবা এগিয়ে আসে।
-বেয়ানসাহেবা এসব কি বলছেন??সায়নকে নিয়ে যাবেন মানে?অনু মার গ্ঞান ফিরলে তো সায়ন বাবাকে খুজবে
-ঠকবাজ লোক কোথাকার খবরদার আমাকে বেয়ান বলবেন না এরকম বাঁজা মেয়েমানুষের সত্য গোপন করে আমার ছেলের ঘাড়ে চাঁপাচ্ছিলেন??
সায়ন বিস্ফোরিত চোখে মায়ের দিকে তাকি আছে..
-মা কি বলছো কি?
-তুমি যদি আমার ছেলে হয়ে থাকো যদি তোমাকে আমি জন্ম দিয়ে থাকি তুমি আর একটি কথাও বলবে না।যে মেয়ে আমায় নাতি নাতনী দিতে পারবে না যে মেয়ে আমার সন্তানকে বাবা হওয়ার সুখ দিতে পারবে না সে মেয়েকে বউ তো দূরের কথা আমার ছেলের (..) করেও ঘরে তুলবো না
বাবা হয়ে নিজের মেয়ে সম্পর্কে এমন কথা শুনে মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। তবুও সোজা হয়ে দাড়িয়ে আছেন।প্রশ্নটা মেয়ের ভালোবাসার মেয়ের জীবনে।
সায়নের মা অনুর বাবাকে চরম অপমান করেন তারপর দলবল নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে চলে যান।
অনেক আকুতি মিনতি করেও আটকাতে পারে নি অনুর বাবা।
এদিকে অনুর যতোবারই হুস ফিরছে তো সমানে সায়ন সায়ন করে যাচ্ছে....
সম্পূর্ণ ঘটনার আরেক জন সাক্ষী রয়েছে যে আড়াল থেকে সবটা দেখেছে।অনুর জন্য দু ফোটা চোখের পানিও ফেলেছে।
রাতের মাঝা মাঝি অনুর হুস ফিরে।কেবিনে শুধু একজন নার্স রেয়েছে।অনুর ধারনা সায়ন বাহিরে আছে তাকে হয়তো ভেতরে ঢুকতে দেওয়া হয় নি।অনু টলমল পায়ে ধীরে ধীরে বাহিরে চলে আসে।কোই বাবা মা ভাইয়া ভাবি সবাই বারন্দায় আছে সায়ন তো নেই।
অনু সায়নকে খোজার জন্য আরেকটু এগিয়ে যায়।সিড়ির কাছে যেতেই হটাৎ মাথাটা ঘুরে আসে...
অনু পরে যেতে নিলেই কেউ একজন ধরে নেয়।সোজা অনুকে কোলে তুলে নেয়।
এদিকে অনুকে খোজা খুজি চলছে।
সেই একজন অনুকে কোলে তুলে হাটা ধরে কেবিনের দিকে।অনুকে কোলে করে কেবিনে নিয়ে গিয়ে শুয়ে দেয়।
সেই একজন ছিলো নির্ঝর।নির্ঝর সব জেনে শুনেই অনুর বাবা মাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।নির্ঝরের বিষয়ে খোঁজ খবর করে।তারপরেরটা সবারই জানা......!!!
বর্তমানে...
সকাল সকাল অনুর ঘুম ভাঙ্তেই দেখে নির্ঝর অনুকে বেশ শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে।অনু নড়ছেনা শুধু ফ্যালফ্যাল করে নির্ঝরের দিকে তাকিয়ে আছে।
কোই সেদিনের মতো তো আজ রাগ লাগছে না।
তাহলে কি আমি ওনার প্রেমে পরলাম??
-হুম্ম পড়েছো!!
অচমকায় নির্ঝরের কথা শুনে অনু চমকে যায়
নির্ঝর ফিক করে হেসে দেয়
-মেয়ে তুমি বোধয় সত্যি সত্যিই আমার প্রেমে পড়লে....
নির্ঝর অনুকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে....
অনু কি ভেবে উওর দেয়
-মানুষ প্রেমে নাকি একবারই পড়ে আমিও পড়েছিলাম একবারই।
অনুর উওর শুনে নির্ঝরের মুখটা কালো হয়ে যায়।।
-কিন্তু জানো তো অনু আমি প্রেমে পড়েছিলাম একবারই আর সে হলে তুমি......
কথাটা বলেই নির্ঝর অনুর ঠোটে ঠোট মিলিয়ে দেয়।যেন তার সব অভিমান সব রাগ সব কষ্টের সমাপ্তি ঐ ঠোঁটে মাঝে লুকিয়ে রেখেছে।
চলবে
পরের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন