Header Ads

Header ADS

পতিতা জীবন কেনো এত অনন্দের (ফুল পর্ব)

*-তর নামটা কী বলবি,,
-জুলেকা,,
-নাহ আজ থেকে তর নাম "আমেনা" তরে আমার খুব ভাল লাগে,,
-পাড়ায় চইলা আসিস,, তর জন্য অর্ধেক টাকা কমে টিকিট দিবো,,
-তরে আমার বেচাকেনার বাহিরেও ভাল লাগে বিয়ে করবি আমায়,,
-আরে বোকা আমার শরীরে পরপুরুষের গন্ধ লেগে আছে,,এতে কী চলব তর,,
চলবে না, আর তুই একটা "মাগীরে" বিয়ে করবি,,লোকে যে বলবে বেশ্যার স্বামী,,
-আমায় বিয়ে করে সবকিছু ছেড়ে দিবি,,সারাদিন রিক্সা চালিয়ে যা পাবো তা দিয়ে দু বেলা দুমোটো ভাত খেয়েই তুই আর আমি বেঁচে থাকবো,,
সারাদিন কাজ করে যখন বাড়ি ফিরবো তুই তর আঁছলখানা দিয়ে আমার কপালের ঘাম মুছে দিবি,,
পুরোনো দিনগুলো ভুলে গিয়ে আমায় নতুন করে বরণ করে নিবি,,
-মাথা ঠিক আছে তর,,হোটেলে শরীর বিক্রি করি আমি,,
-এই রাস্তা ছেড়ে দিবি,,আমায় নিয়ে বাঁচবি আর আমি তকে নিয়ে,,
-আইচ্ছা ভাইবা দেখি,,

-("নূর"রিক্সা নিয়ে চলে এলো বাড়িতে,,বাড়িতে আপন বলতে কেউ নেই,,মা-বাবা গত হয়েছেন আজ বহুবছর,,
নূর জানে জুলেকা একজন শরীর বিক্রেতা হোটেলে টাকার বিনিময়ে নিজের শরীর বিক্রি করে,,,তারপরেও নূর চায় মেয়েটাকে বিয়ে করতে,,জুলেকা না,, আমেনা নাম দিয়েই নূর বিয়ে করতে চায়,,কে কী বললো সেটা নূর দেখবে না,।)

-(জুলেকা) ঐদিন আর হোটেলে যায়নি,,নিরবে কাঁদচে আর ভাবছে আমিওতো মানুষ আমারতো মনচায় কারো সাথে সংসার করি কিন্তু সমাজ কী আমায় বধু হিসেবে তাদের চোখে মেনে নিবে,,।
নূরের প্রস্তাবটাকি সত্যিই ভালবাসা নাকি কোনো চলনা,।
(চলনা হতে যাবে কেনো,,সে ইচ্ছা করলেইতো পারতো টাকায় আমায় ভোগ করতে)
নানান চিন্তায় চিন্তায় জুলেকা কখন ঘুমিয়ে পড়েছে সে নিজেই জানেনা,,

-সকালে ঘুম ভাঙলো হোটেল মালিকের কল,,
-জুলেকা কাল রাতে তুমি আসো নাই কেনো,??
-স্যার আমি আর এই কাজ করবনা,,আমি নতুন করে বাঁচতে চাই,,
-মানে কী তোমাকে ৮০হাজার টাকা এডভাঞ্চ দেওয়া হয়েছে ভুলে গেছো নাকি,,
(জুলেকার মনেই ছিলো না এডভাঞ্চ টাকার কথা,,যে টাকা দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করিয়েছিলো)

-(রাস্তায় নূরের সাথে দেখা)
-নূর তুই আমায় ভুইলা যা আমার মত একটা বেশ্যাকে তুই কেনো বিয়ে করবি,,আমি এই হোটেল ছাড়তে পারবনারে আমি যে ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়ে গেছি,
-ফিরাইয়া দে ওদের টাকা,,
-মায়ের চিকিৎসায় টাকাটা খরচ হয়ে গেছে,,বলেই জুলেকা হাটতে শুরু করলো,,
(মাঝরাস্তায় জুলেকার হাতটা নিজের দখলে নিয়ে বললো আমার সাথে আয়)
-নূর একটা দোকানে গিয়ে তার রিক্সাটা বিক্রি করে দিয়ে টাকাটা  জুলেকাকে দিয়ে বললো,,আমেনা তুই শুধু আমার হয়ে যা,,আমেনা নামেই তরে সবাই ছিনবো,,
-নূর তুই রিক্সা বিক্রি কইরা দিলি এখন তর চলবে কি দিয়ে,,
-তুই আছচ না,,কাইট্টা খাইমো, মানুষের বাড়িতে কামলা দিমু,,
দু বেলা দু মুটু ভাত হলেই তর আমার চলে যাবে,,
জুলেকার অজান্তেই চোখগুলো ভিজে যাচ্ছিলো কাঁন্নায়,,
-(নূর)কিরে পাগলী কাঁদছিস কেনো,,?
-এই জুলেকাকে কেউ ভালবাসবে কোনোদিন ভাবিনি,।
-কে জুলেকা,? আমেনা বল,,তুই আজকে থেকে নূরের আমেনা,,
তকে নিয়েই সামনের দিনগুলো থাকতে চাইরে,,।।
-(জুলেকা) আমার কপালে কী এত সুখ সইবে...
-(নূর) চল আজকেই আমরা বিয়ে করবো,তুই যদি রাজি থাকচ,,
(অবশেষে বিয়ে সম্পন্ন করে জুলেকাকে নিয়ে বাড়ি আসে নূর)

বাসর ঘরে বসে আছে জুলেকা,
আর ভাবছে এই রাত নিয়ে নাকি অনেকের নাকি স্বপ্ন থাকে, আমার ও আছে, কে জানে পূরণ হবে নাকি,,
চলবে....

আজ কতসুন্দর করে সাজানো জুলেকার বিচানা,,
কত ফুল,,গোলাপ ফুলে চারদিক সাজানো,।
হঠাৎ নূরের আগমন,,
জুলেকা নূরের পা ছুঁয়ে সালাম করলো,
-(নূর) আমেনা তর জায়গা আমার বুকে,তর আমার নতুন জীবন শুরু হবে আজ,তুই খুশিতো,?
-(জুলেকা) আমেনা নামটা আমায় ভাবায়,, ভালবেসে কেউ কোনোদিন কিছু বলে নাইতো,,তর বুকে আগলে রাখিস আজীবন,,
-(নূর) হাতে কাপড়ে মুড়ানো একটা বাক্স দিয়ে বললো এইটা তর দেন মোহড়,আর শুন আজ থেকে তুই আমায় তুমি বলে ডাকবি,,(জোলেকা কাঁদছে)
আলতু করে চোখটা মুছে দিয়ে জুলেকাকে সম্পূর্ণ নিজের করে নিলো নূর,,।

সকাল ঘুম ভাঙতেই নূর চলে যায় কর্মস্থানে,,
-নূরের দেওয়া কাপড়ে মুড়ানো বাক্সটা খুলতেই দেখলো একখানা কোরআন আর একটা বোরকা,,
আর কোরআনের প্রতিটা পৃষ্ঠায় ছিলো টাকা,,দেন মোহড়,,।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো ৮ টা মাস,,
রাত করে বাড়ি ফিড়লো নূর,,
এসেই জড়িয়ে ধরে বিচানায় শুয়ে পড়লো,,
নূরের বুকে মাথা রেখে জুলেকা বললো এই স্থানটাই নিরাপদ এখানে কোনো ভয় নাই,,নির্ভয়ে আরামে থাকতে পারি আজীবন,,
-(জুলেকা)একটা কথা,!
-(নূর)হুম বলো কী,??
-নূরের কানের কাছে ঠোঁট জুরা নিয়ে বললো তুমি বাবা হতে চলেছো,,
নূর একলাফে বসে পড়লো কিছু সময় জুলেকার দিখে তাকিয়ে থাকলো আর তারপর খুশিতে নূর লাফাতে শুরু করলো,,
-আমি মিষ্টি আনতে গেলাম বলেই নূর চলে গেলো,,
(মাঝরাস্তায় গ্রামের মাতব্বর উনার সাথে দেখা)
-(মতব্বর) বাবা নূর তর রিক্সাটা নিয়ে আয়, আমার ছেলের বউয়ের ব্যাথা উঠেছে,,(সন্তান সম্ভবা)
-(নূর) দাঁড়ান চাচা আমি আসতাছি,,,
সেদিন রাতে আর বাড়ি ফিরেনি নূর,,।
সকাল ঘনিয়ে দুপুর হলো,,
হঠাৎ জুলেকার বাড়িতে হোটেল মালিকের আগমন,,
-(জুলেকা)আপনি,,?
-(হোটেল মালিক) কিছু মনেকরবেন না,,আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি আর আপনার টাকা ফিরিয়ে দিতে এসেছি,,
-এই টাকা আমার লাগবে না,আমি ভাল আছি,নূর দেখলে রাগ করবে আপনি যান,,
-বোন হিসেবে টাকাটা নিন,,এটা আপনার পাওনা,,
(হোটেল মালিক) টাকাটা হাত বাড়িয়ে দিলো,,তখনি নূরের আগমন,।
(নূর দূর থেকে সব দেখছে আর চোখ দুটো ভিজে একাকার)।

(হোটেল মালিক চলে যাবার পর)

-(নূর) জুলেকা আমি কী তরে সুখে রাখতে পারি নাই,
-জুলেকা কেনো কি অইছে আবার,?
-(নূর) কয়লা ধুইলা ময়লা যায় না আর পতিতা কোনোদিন সতী হয় না,, কথাটা বলেই নূর ঘর থেকে বেড়িয়ে চলে যায়,,

জুলেকা কাঁদচে আর ভাবচে ঠিকিতো বলেছে আমিতো একটা পতিতা,, টাকার বিনিময়ে শরীর বিক্রি করেছি,,পরপুরুষের গন্ধ লেগে আছে আমার শরীরে,,
বলেও জুলেকা  ফাঁসির ধরি ঝুলিয়ে,,শেষ একবার ভেবে নিলো নূরের বাচ্চার কথা,,অত:পর মনেহলো জন্মের পর হয়তো লোকে বলবে পতিতার ছেলে/মেয়ে,,

(নূর হোটেলে যায়)
-(নূর) হোটেল মালিকের কলার চেপে কেনো গেছিলেন আমার বাড়ি,,আমার জুলেকাকে আবার নষ্ট করতে গেছিলেন,,
-(হোটেল মালিক) নূর তুমি শান্ত্ব হও,,দেখো আমি কিছু করিনি,,,আমি শুধু জুলেকার পাওনা টাকা ফিরিয়ে দিয়ে এসেছি,,জুলেকা নিতে আপত্তি জানায়,আমি ভাই হিসেবে দিয়েছি বলেই সে নিয়েছি,,
-নূর আফসোস করছে আর ভাবছে আমি ক্ষমার অযোগ্য,,

(নূর বাড়ি ফেরার পর)
জুলেকার দেহটা ঝুলে আছে ওর আঁছলখানায়,,শতবছর পাশে থাকবো বলা মানুষটা কিঞ্চিত ভুলে নূরকে একা করে চলে গেলো,,

আজ পাঁচ বছর পর,,নূর কবরটার পাশেই বসে আছে,,
আর অপেক্ষা করছে কখন জুলেকার আগমন ঘটবে,, 
আর বলবে নূর তরে ছাইড়া আমি ভাল নাই,,
সমাপ্ত,,
-শিক্ষনীয়,,, --(যাকেই ভালবাসুন ভুল বুঝার আগে শতবার ভেবে নিবেন আমি দেখেছি এটা সত্যিতো,,,কারণ আপনার কিঞ্চিত ভুলে সারাজীবনের জন্য হারাতে পারেন আপনার ভালবাসার মানুষকে।)

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.